সারদা মামলায় সুপ্রিম কোর্টে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিল সেবি তথা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া। লগ্নিকারীদের কাছ থেকে কোনও সংস্থা টাকা সংগ্রহ করলে, তা নিয়ম মাফিক হচ্ছে কি না সেটা সেবিরই দেখার দায়িত্ব। সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, সারদা যখন সাধারণ মানুষকে সর্বস্বান্ত করে লুঠ করছিল, তখন কি সেবির কর্তারা ঘুমোচ্ছিলেন? সেবির কর্তারা এখন দাবি করছেন, দেরিতে হলেও ঘুম ভেঙেছে তাঁদের।
চলতি আর্থিক বছরে অর্থাৎ ১ এপ্রিলের পর থেকে এ পর্যন্ত ২৮টি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে সেবি। ওই সংস্থাগুলি বেআইনি পথে লগ্নিকারীদের থেকে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। যাদের মধ্যে অধিকাংশই সারদার মতো ‘পনজি স্কিম’ চালিয়ে বাজার থেকে টাকা তুলছিল। এই সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে নির্দেশিকা জারি করেছে সেবি। শুধু জুলাই মাসেই জারি হয়েছে তার ১০টি। যে সব সংস্থা জরিমানা দিতে অস্বীকার করেছে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে সেবি। এর পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েও লগ্নি করার আগে সব দিক যাচাই করে নেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা শুরু করেছে সেবি।
কেন্দ্রও চাইছে সেবির হাত আরও শক্ত করতে। গোটা দেশেই সারদা-কাণ্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে সেবিকে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। তার জন্য আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। চলতি সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সংশ্লিষ্ট বিলে অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমানে সেবির হাতে তল্লাশি চালানো, নথিপত্র আটক করা বা টেলিফোনে কথাবার্তার রেকর্ড পরীক্ষা করার ক্ষমতা নেই। নয়া আইনে সেই ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। বাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা বা তার বেশি সংগ্রহ করলেই তার বিবরণ যাচাই থেকে শুরু করে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করারও অধিকার দেওয়া হচ্ছে সেবিকে। সেবির কর্তারা বলছেন, মনমোহন সরকারের জমানাতেই অর্ডিন্যান্স এনে সেবিকে বেশ কিছু বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংসদে বিল পাশ করাতে না পারায় ইউপিএ সরকার তাকে আইনের চেহারা দিতে পারেনি।
সেবির কর্তারা জানাচ্ছেন, ইউপিএ জমানার অর্ডিন্যান্সে পাওয়া বাড়তি ক্ষমতার জোরেই তাঁরা অর্থলগ্নি সংস্থার বেআইনি কাজকর্মের বিরুদ্ধে কড়া হতে পেরেছেন। ৪০০-রও বেশি মামলায় হাজার দেড়েক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে সেবি যে ২৮টি সংস্থার বিরুদ্ধে নির্দেশিকা জারি করেছে, তাদের মধ্যে ১৫টি সংস্থা নিয়ম না মেনে ডিবেঞ্চার বা শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে টাকা তুলেছিল। চূড়ান্ত নির্দেশিকা জারির আগে তাদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী নির্দেশিকা জারি করে বেআইনি পথে টাকা তুলতে বারণ করা হয়েছিল। এর পর চূড়ান্ত নির্দেশিকায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লগ্নিকারীদের সব টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে।
সেবি সূত্রের খবর, ওই ১৫টি সংস্থাকে বাদ দিলে বাকি ১৩টি সংস্থা সারদার ধাঁচেই ‘কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম’-এর মাধ্যমে লগ্নিকারীদের থেকে টাকা তুলছিল। এর মধ্যে কয়েকটি সংস্থা পশ্চিমবঙ্গেও কাজ করছে। এই ১৩টির মধ্যে মাত্র ৫টি সংস্থাই লগ্নিকারীদের থেকে ৯০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে ফেলেছে বলে সেবির হিসেব। বাকি সংস্থাগুলি কত টাকা তুলেছে, এখনও তার হিসেব করে ওঠা যায়নি।
সেবি-কর্তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংসদে বিল এনে একই সঙ্গে সেবি আইন, সিকিউরিটিজ কনট্র্যাক্টস আইন ও ডিপোজিটারিজ আইনেও সংশোধন করা হবে। ফলে আগামী দিনে আরও কড়া হাতে অর্থলগ্নী সংস্থার বেআইনি কাজ-কারবার রোখা যাবে।