প্রতীকী ছবি।
এক দশক আগে রাজ্যের ক্ষমতার অলিন্দে পালাবদলের পর থেকে এখনও বেসরকারি শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ না-করার নীতিতে অনড় তৃণমূল সরকার। এর জেরে রাজ্যে শিল্পায়ন ধাক্কা খাওয়ার অভিযোগ তোলেন বিরোধী ও শিল্পমহলের একাংশ। জমি আদৌ সমস্যা নয় দাবি করে রাজ্য বরং জোর দিয়েছে সহজে লগ্নির পরিবেশ গড়ায়। সেই দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই এ বার তাদের লক্ষ্য, বেসরকারি শিল্প পার্কে বিদ্যুতের জোগান সহজ করতে নীতি আনা। এ জন্য সরকারের প্রস্তাব, পার্কের মধ্যেই বিদ্যুতের সাব স্টেশন গড়ার জায়গা দিলে সংযোগের খরচে ছাড় দেওয়া হবে। ফলে ব্যয় কমবে শিল্পের। পরিকাঠামো গড়া ও বিদ্যুৎ সরবরাহে খরচ কমবে বণ্টন ও সংবহন সংস্থার। বাঁচবে সময়। তার উপরে সহজ হবে স্থানীয় এলাকার বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো ও উন্নত হবে পরিষেবার মান। অর্থাৎ, লাভবান হবে সব পক্ষই।
সরকারের দাবি, সামাজিক ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে এক দশকে যথেষ্ট উন্নতি করেছে রাজ্য। সেই ভিতের উপর দাঁড়িয়ে লগ্নির আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নানা ক্ষেত্রে উন্নতির কথা মানলেও সম্প্রতি রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে শিল্পকর্তাদের অনেকে চড়া বিদ্যুৎ খরচ, আর্থিক সুবিধা নীতিতে প্রাপ্য বকেয়া না পাওয়া নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন।
সহজে এবং সস্তায় পরিকাঠামো তৈরির উপায় নিয়ে ভাবছে রাজ্যও। বিভিন্ন সরকারি সূত্রের খবর, এখন কোনও সাব স্টেশন থেকে বড় শিল্প বা বেসরকারি ক্ষেত্র নির্মিত শিল্প পার্কে (যেখানে একাধিক সংস্থা জায়গা নেয়) বিদ্যুতের সংযোগ নিলে গোড়াতেই ওই স্টেশন গড়ার খরচের আনুপাতিক হারে এককালীন ব্যয় করতে হয় সংস্থা বা পার্ক-কর্তৃপক্ষকে। তার পরে নিয়মিত বিদ্যুৎ খরচ অনুযায়ী আলাদা মাসুল দিতে হয় তাদের।
উল্টো দিকে, শিল্প ছাড়া গৃহস্থের বিদ্যুতের চাহিদা নিয়মিত বাড়ায় সাব স্টেশন গড়ার প্রয়োজনও বাড়ছে। কিন্তু তা গড়তে কম পক্ষে তিন-চার একর জমি লাগে। সেই জমি কিনতে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন ও সংবহন, দুই সংস্থারই সময় ও অর্থ খরচ হয়।
সরকারি সূত্রের খবর, সহজে ও খরচ কমিয়ে শিল্প-বিদ্যুতের পরিকাঠামো নির্মাণের ভাবনা থেকে নতুন প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করেছে সংশ্লিষ্ট দুই দফতর এবং নিগম। রাজ্যে বিভিন্ন শিল্প নিগমের পাশাপাশি বেসরকারি শিল্প পার্ক গড়তেও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে ক’বছর ধরে। সেই সব পার্ক-কর্তৃপক্ষ সাব স্টেশনের জন্য জমি দিলে বিদ্যুতের সংযোগ নিতে শিল্পের গোড়ার খরচে ছাড় দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। জমি কিনতে না-হওয়ায় সাশ্রয় হবে বণ্টন ও সংবহন সংস্থারও। উপকৃত হবেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।
এ ক্ষেত্রে পার্কের ন্যূনতম মাপ এবং সেখানে ক’টি সংস্থা থাকতে হবে, তার মাপকাঠি থাকবে। দফতরের কর্তারা মুখ না-খুললেও সূত্রের খবর, বিষয়টিতে নিগম এবং বণ্টন ও সংবহন সংস্থার পর্ষদের সায় জরুরি। অনুমোদন লাগবে রাজ্যের মন্ত্রিসভারও।