হার্ডওয়্যার শিল্পে পুঁজি জোগাড়ের চেষ্টা চলছে আজ বহু দিন ধরেই। তবে এখনও পর্যন্ত তাতে আখেরে ফল তেমন কিছু মেলেনি। বিনিয়োগ টানার মরিয়া চেষ্টায় এ বার তাই সরাসরি লগ্নিকারীদের সঙ্গে বৈঠক করল ওয়েবেল। তুলে ধরল সোনারপুর, নৈহাটি ও ফলতার হার্ডওয়্যার পার্ক-সহ রাজ্যের বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের পরিকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা। হার্ডওয়্যার নিয়ে এ ধরনের বৈঠক এর আগে দেখেনি রাজ্য।
সম্প্রতি ওয়েবেল ভবনে এই বৈঠক আয়োজিত হয়। আলোচনাসভায় যোগ দিয়েছিলেন ২৫ জন সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী। সেখানে রাজ্য সরকারের এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান প্রায় সকলেই। তবে একই সঙ্গে তাঁদের মত, ওই সমস্ত পার্কে জমির দাম ও আর্থিক সুবিধার (ইনসেন্টিভ) উপরও লগ্নিকারীদের পুঁজি ঢালার সিদ্ধান্ত নির্ভর করে। ফলে স্রেফ পরিকাঠমো নয়, মাথায় রাখা হোক এই দুই বিষয়ও।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নির্মাতা মেগাথার্মের কর্তা সুবীর চন্দ যেমন জানান, নৈহাটির পার্কে নতুন কারখানা গড়তে উৎসাহী তিনি। তবে তাঁর মতে, জমির দাম ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকা উচিত। না হলে বহু ছোট-মাঝারি সংস্থা চাইলেও এগোতে পারবে না।
ওয়েবেল-বৈঠক
•
২৫ সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীর সঙ্গে বৈঠক
•
ওয়েবেলের এমন উদ্যোগ এই প্রথম
•
চাহিদা সস্তায় জমি আর আর্থিক সুবিধা
ওয়েবেলের যদিও দাবি, অনেক পার্কেই জমির দাম বাজার দরের তুলনায় কম রাখা হয়েছে এখন। কেন্দ্রীয় ‘ইলেকট্রনিক সিস্টেম অ্যান্ড ডিজাইন ম্যানুফ্যাকচারিং’ নীতি অনুযায়ী, ফলতায় ৫৮ একর জমি ও নৈহাটিতে ৭০ একর জমির উপর ক্লাস্টারের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জমির দর স্থির করা হচ্ছে। এমনকী সেই কৌশলে বিনিয়োগকারীরা সাড়াও দিয়েছেন বলে দাবি রাজ্য সরকারের সংস্থাটির। নৈহাটিতে ইতিমধ্যেই সেট টপ বক্স তৈরির জন্য ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে কসকো কর্পোরেশন। সেখানকার পার্কের প্রধান বিনিয়োগকারী (অ্যাঙ্কর ইনভেস্টর) হিসেবে থাকছে কসকো। সংস্থার প্রধান সুব্রত গুহ রায় বলেন, ‘‘জমি হাতে পাওয়ার এক বছরের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে কারখানা।’’
বস্তুত, সফট্ওয়্যারে লগ্নি টানার দৌড় দেরিতে শুরু করেছিল পশ্চিমবঙ্গ। সেই ভুল হার্ডওয়্যার শিল্পের ক্ষেত্রে শুধরে নিতে কিছুটা চেষ্টা করেছিল পূর্বতন বাম সরকার। পরিকল্পনা ছিল এর জন্য চিপ ডিজাইনিং কেন্দ্রের মতো প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির। বর্তমান সরকার আর এক ধাপ এগিয়ে হার্ডওয়্যার শিল্পের তালিকায় ঢুকিয়েছে সৌর বিদ্যুৎ তৈরির যন্ত্রপাতিকেও। নতুন তথ্যপ্রযুক্তি নীতিতেও শিল্পটিকে বিশেষ জায়গা দেওয়া হয়েছে। তবুও এখনও পর্য্ত দেশে এই শিল্পের বাজারে পশ্চিমবঙ্গের ভাগ সে ভাবে প্রায় নেই বললেই চলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২০ সালের মধ্যে দেশে বৈদ্যুতিন বাজার দাঁড়াবে ৪০,০০০ কোটি ডলার। হার্ডওয়্যারের অস্ত্রে তার কতটা রাজ্য ঝুলিতে পুরতে পারে, এখন সেটা দেখারই অপেক্ষা।