সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির। —ফাইল চিত্র
ফুল, ফল, মিষ্টির সঙ্গে এ বার অনলাইনে শেয়ারও। ভক্তদের জন্য সিদ্ধিলাভের প্রার্থনা ‘সহজ’ করতে সিদ্ধিদাতার পায়ে শেয়ার ভেট চড়ানোর ইন্টারনেট-রাস্তা খুলে দিল মুম্বইয়ের সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির। শেয়ারের ‘অনলাইন প্রণামী-বাক্স’ তৈরি করতে ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলল তারা।
মনের ইচ্ছে পূরণ করার আকূল প্রার্থনায় কিংবা ফললাভের কৃতজ্ঞতায় মন্দিরে প্রণামী, এমনকী সোনা-দানা দেওয়ার চল বহু পুরনো। একেবারে নতুন নয় শেয়ার দেওয়াও। বিশেষত দক্ষিণ ভারতের তিরুপতি বালাজি কিংবা মুম্বইয়ের বিখ্যাত গণপতি মন্দিরে এই রেওয়াজ বেশ কিছু দিনের। এ বার ভক্তদের মধ্যে সেই শেয়ার-প্রণামীর জনপ্রিয়তা বাড়াতেই অনলাইন প্রযুক্তির হাত ধরার রাস্তায় হাঁটছে তারা। এই লক্ষ্যে গত বছর ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলেছে তিরুপতি। আর সম্প্রতি তা খোলার কথা মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরও।
ডি-ম্যাটের পুরো নাম ডিমেটিরিয়ালাইজেশন অব শেয়ার্স। সহজ কথায়, বৈদ্যুতিন প্রক্রিয়ায় শেয়ার রাখার ব্যবস্থা। আগে শেয়ার সার্টিফিকেট মানে বোঝাত সত্যিকারের শেয়ারের কাগজ। কিন্তু এখন কাগজের বদলে তা রাখা থাকে কম্পিউটারে, অনলাইন ব্যবস্থায়। তাই ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট না-থাকলে, শেয়ার কেনা-বেচা করাই যায় না। সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরের অছি পরিষদ জানিয়েছে, বৈদ্যুতিন ব্যবস্থায় শেয়ার গচ্ছিত রাখার সংস্থা সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি সার্ভিসেস লিমিটেডের (সিডিএসএল) কাছে ওই ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলেছে তারা।
আজকের এই জেট-গতির জীবনে সকলের হাতে সময় অল্প। তার উপর হাতে প্রায় সারাক্ষণ লেপ্টে রয়েছে নেট সংযোগ যুক্ত স্মার্টফোন। যে কারণে বাড়িতে বসে নেটে কেনাকাটার ঝোঁক বাড়ছে। বিমানের আসন থেকে সিনেমার টিকিট— সবই বিকোচ্ছে ইন্টারনেটে। বাদ যাচ্ছে না ধর্মস্থানও। যেমন, সিদ্ধিবিনায়কের ওয়েবসাইট খুললেই দেখা যাচ্ছে, অনলাইনে পুজো বুকিংয়ের বন্দোবস্ত। দানের পুরোদস্তুর ব্যবস্থাও (অনলাইন ডোনেশন) রয়েছে সেখানে। যাতে বাড়িতে বসে মাউসে ক্লিক্ করে কিংবা ফোনের স্ক্রিনে আঙুল ছুঁইয়েই সেই সমস্ত কাজ সেরে ফেলতে পারেন প্রযুক্তি ব্যবহারে দড় ভক্ত।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মুম্বইয়ের ওই বিখ্যাত গণেশ মন্দিরে ডি-ম্যাটে শেয়ার পাঠানোর ব্যবস্থা হওয়ায় সিদ্ধিদাতার পায়ে ডাঁই হবে আগের থেকে অনেক বেশি শেয়ার। অনেকের মতে যেমনটা হয়েছে তিরুপতি বালাজি মন্দিরে। কারণ, সে ক্ষেত্রে অফিসে প্রোমোশন হোক বা ব্যবসায় মোটা মুনাফা। পরীক্ষায় সন্তান ভাল ফল করুক বা সিনেমার বাম্পার রিলিজ। যে কোনও উপলক্ষ্যেই যে কোনও সময় প্রণামী হিসেবে পছন্দের কয়েক খানি শেয়ার চড়িয়ে দেওয়া যাবে ‘গণপতি বাপ্পা’র পায়ে। শুধু শর্ত হল, দেবতার ঘরে তা পাঠানোর আগে আগে নিজেকে ওই শেয়ারের মালিক হতে হবে। অর্থাৎ, বাজার থেকে কেনা শেয়ার ভক্তর ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট ঘুরে তবেই পৌঁছবে মন্দিরের নেট-প্রণামী বাক্সে।
বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, ‘‘মন্দির, দাতব্য বা সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে শেয়ার দানের প্রথা অনেক দিনই চালু আছে। ডি-ম্যাট না থাকলে, সেই প্রক্রিয়াটি জটিল। তাই অনেকেই ইচ্ছে সত্ত্বেও শেয়ার দিয়ে পুজো এড়িয়ে চলতেন। এখন ডি-ম্যাট ব্যবস্থায় তার চল বাড়বে।’’ বিশেষত যে সমস্ত জায়গায় ওই ধরনের দানে আয়কর ছাড়ের সুবিধা মেলে।
তিরুপতি বালাজি বা সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরে মোটা টাকার শেয়ার প্রণামী দেওয়ার মতো ভক্ত কোনও দিনই কম নয়। এই দুই মন্দিরের গোপন ভল্টে জমে রয়েছে সোনার পাহাড়। মুম্বইয়ের এই বিখ্যাত গণেশ মন্দিরকে সকলে এক ডাকে চেনেন। এখানেই ধনকুবের মুকেশ অম্বানীর ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে পুজো দিয়ে সম্প্রতি নিজের প্রথম ভারত সফর শুরু করেছিলেন অ্যাপল কর্ণধার টিম কুক। ক্রিকেট কেরিয়ারে কোনও বার বিদেশ সফরের আগে এখান থেকে আশীর্বাদ নিতে ভোলেননি সচিন তেন্ডুলকর। মেগা বাজেটের ছবি রিলিজের আগে বলিউড তারকাদের ভিড় উপচে পড়ে এখানে। বরাবর আশীর্বাদ চাইতে আসতেন এবং আসেন রাজনীতি, খেলা, কর্পোরেট দুনিয়ার দিক্পালরা। তা সে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী হোন বা ‘মরাঠা স্ট্রংম্যান’ শরদ পওয়ার। এ হেন সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরের ঐশ্বর্য নিয়ে গল্প লোকের মুখে-মুখে ফেরে। শোনা যায় নগদ বা সোনায় বিপুল প্রণামীর কথা।
নিরাপত্তার পাশাপাশি ওই সম্পদ পাহা়রা দেওয়ার কারণেই আধুনিক প্রযুক্তির ক্লোজ সার্কিট টিভি বসেছে সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরে। নিয়োগ করতে হয়েছে ৬৫ জন সিকিউরিটি অফিসারকে।
অনেকেই মনে করছেন, ডি-ম্যাটে শেয়ার দেওয়ার এই রাস্তা খুলে যাওয়ার পরে আরও ফুলেফেঁপে উঠবে সিদ্ধিদাতার ভাণ্ডার।
মুম্বই এমনিতেই দেশে আর্থিক কর্মকাণ্ডের রাজধানী। শেয়ার বেচা-কেনার মক্কা। তার উপর সেখানে গণেশের পুজো করেই শেয়ার লেনদেনের দিন শুরু করেন অনেকে। এ হেন মুম্বইয়ে খোদ গণপতিরই শেয়ার-প্রণামীর অভাব হবে কি?
অনলাইনে ভেট চড়ানোর সুবিধা চালুর পরে তেমন সম্ভাবনা বাতলানো লোকের দেখা বড় একটা মিলছে না।