শোভনা কামিনেনি
ব্যাঙ্কঋণ খেলাপের সমস্যার সমাধানে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বাড়তি ক্ষমতা দিয়েছে কেন্দ্র। শিল্পমহলের আশা, ব্যাঙ্কে অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা কমতে থাকলেই তারা শিল্পের জন্য ঋণের পরিমাণ বাড়াবে। নতুন লগ্নিও শুরু হবে।
বণিকসভা সিআইআই-এর নতুন প্রেসিডেন্ট শোভনা কামিনেনির মতে, অনেক বড় বড় প্রকল্প এই অনুৎপাদক সম্পদের জটে আটকে ছিল। শোধ করতে না-পারা ঋণে সুদের উপর সুদ জমছিল। বড় মাপের বহু সংস্থাও লগ্নি করতে পারছিল না। সমস্যা কাটলে নতুন লগ্নি শুরু হবে। সিআইআইয়ের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট মনোনীত হওয়ার পরে আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে শোভনার দাবি, ‘‘চলতি অর্থ বছরেই নতুন লগ্নিতে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে।’’
মোদী-জেটলির সব থেকে বড় চিন্তা, দেশীয় শিল্পমহলের লগ্নিতে অনীহা। এ বার নতুন লগ্নি শুরু হবে বলে দাবি করলেও সিআইআই সভানেত্রীর সতর্কবার্তা হল, রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে সুদের হার কমাতে হবে। সুদ এক জায়গায় ধরে রাখা বা বাড়ানো চলবে না। শোভনা বলেন, ‘‘মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়ছে না। সহনীয় মাত্রায়। এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে আঁটোসাঁটো ঋণনীতি নিলে চলবে না। শ্রম আইনের ঢালাও সংস্কার করতে হবে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রকেও কোম্পানি করের হার সব শিল্পের জন্যই প্রথমে ২৫ শতাংশ, তারপর ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। এখন শুধুমাত্র বছরে ৫০ কোটি টাকার কম ব্যবসার ক্ষেত্রে করের হার কমানো হয়েছে। যাঁর ব্যবসার পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার সামান্য কম, তিনি তো করের বোঝা বাড়ার ভয়ে আর ব্যবসা বাড়াতেই চাইবেন না।’’
আরও পড়ুন: শুভেচ্ছা সফরেও মানা
সিআইআই প্রেসিডেন্টের যুক্তি, নতুন লগ্নি না-হওয়ার কারণ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে এখনও মন্দার ছোঁয়া। কিন্তু মধ্যবিত্তরা কেনাকাটা কমাননি। ধনীরাও সে পথে হাঁটেননি। ফলে ভারতের বাজারে চাহিদা কমেনি। এ কথা ঠিক যে, নোট-বাতিলের ফলে বিক্রিতে সাময়িক ধাক্কা লাগে। এখন হাল ফিরেছে। এক দিকে জিএসটি চালু হওয়া, অন্য দিকে ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ সমস্যার সমাধান, তার সঙ্গে সুদের হার কমানো— এই তিনে ভর করেই নতুন লগ্নি আসবে।
শোভনা অ্যাপোলো হসপিটালস এন্টারপ্রাইজের এগ্জিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি ও তাঁর তিন বোনই তাঁদের বাবা, অ্যাপোলো-র প্রতিষ্ঠাতা প্রতাপ সি রেড্ডির সঙ্গে পারিবারিক ব্যবসা সামলান। পরবর্তী ধাপের আর্থিক সংস্কার হিসেবে সরকারের কাছে শোভনার আশা, শিল্পনীতি বা ‘ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পলিসি’-তে আমূল রদবদল হোক। তিনি বলেন, ‘‘শিল্প নীতিতে শেষ কবে চোখ বোলানো হয়েছে, আমার জানা নেই। কিন্তু এখন ই-কমার্স, খুচরো ব্যবসার মতো নতুন শিল্প তৈরি রয়েছে। প্রত্যেক রাজ্যের নিজস্ব গুরুত্বপূর্ণ শিল্প রয়েছে। জিএসটি-র মতো এ ক্ষেত্রেও আলোচনা করে সংস্কার প্রয়োজন।’’