নোট-কাণ্ডে উত্তাল বাজার

এক দিকে ট্রাম্পের জয় এবং অন্য দিকে কালো টাকা খোঁজার লক্ষ্যে পাঁচশো, হাজার টাকার নোট বাতিলের জেরে মানুষের ভোগান্তি উত্তাল রেখেছে বাজারকে। এই দুই ঘটনা বাজারের কাছে কতটা সদর্থক, কতটাই বা বাজারের পক্ষে ক্ষতিকর, তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে নিরন্তর। স্থিতিশীল হতে বাজার বেশ কিছুটা সময় নেবে। এই সময়ে সব বিষয়ে ধৈর্য-সহকারে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে লগ্নিকারীদের।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১৮
Share:

একই সঙ্গে সুনামি এবং সাইক্লোন।

Advertisement

এক দিকে ট্রাম্পের জয় এবং অন্য দিকে কালো টাকা খোঁজার লক্ষ্যে পাঁচশো, হাজার টাকার নোট বাতিলের জেরে মানুষের ভোগান্তি উত্তাল রেখেছে বাজারকে। এই দুই ঘটনা বাজারের কাছে কতটা সদর্থক, কতটাই বা বাজারের পক্ষে ক্ষতিকর, তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে নিরন্তর। স্থিতিশীল হতে বাজার বেশ কিছুটা সময় নেবে। এই সময়ে সব বিষয়ে ধৈর্য-সহকারে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে লগ্নিকারীদের।

১০০০ এবং ৫০০ টাকার নোট বাতিল ভারতীয় অর্থ ব্যবস্থার একটি অতি বড় ঘটনা। ভাল দিকের পাশাপাশি ছোট মেয়াদে এর অসুবিধার দিকগুলিও কিন্তু উপেক্ষা করার নয়, যদিও বড় নোট বাতিলের উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষের মনে তেমন কোনও ক্ষোভ নেই। নতুন টাকার জোগান নিয়ে কমবেশি ভুগতে হবে বেশিরভাগ মানুষকেই। ভুগবে শিল্পও। এ সবের জেরে অস্থির থাকবে সূচক। এক নজরে দেখে নেব ভাল-মন্দের দিকগুলি:

Advertisement

• হঠাৎ টান টাকার জোগানে: অনেক সময়েই বলা হয়, ভারতীয় অর্থ ব্যবস্থায় সাদা টাকার তুলনায় কালো টাকার জোগান অনেক বেশি। এই টাকার একটি বড় অংশ সাধারণ পণ্য-পরিষেবার বাজারে ঘোরে প্রতিনিয়ত। এই টাকা বাজার থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে গেলে ভাল রকম কোপ পড়বে চাহিদার উপর। ফলে আঘাত আসবে শিল্পে। কাজ হারাতে পারেন বহু মানুষ।

• মূল্য পতন: চাহিদা কমলে নামবে পণ্যমূল্য। মনে রাখতে হবে, এক-সমুদ্র কালো টাকা উধাও হওয়া ছাড়াও বেশ কিছু দিন ঘাটতি থাকবে সাদা টাকার জোগানেও। পণ্যমূল্য কমলে সুদ আরও কমার সম্ভাবনা প্রবল হবে।

• চাষির আয়ে কোপ: কৃষিপণ্যের লেনদেন হয় মূলত নগদে। টাকার জোগান কমলে চাষিরা ভাল দাম পাবেন না।

• ছোট শিল্প ও ব্যবসায় আঘাত: বেআইনি টাকা অদৃশ্য হওয়ায় ও আইনি টাকার জোগান কমে আসায় আঘাত পৌঁছবে ছোট শিল্প এবং পণ্য লেনদেন ব্যবসায়। বড়বাজার এবং ক্যানিং স্ট্রিটের মতো বাজারে গেলে দৃশ্যটি স্পষ্ট হবে।

• ফাঁদে চিট ফান্ড: নগদে লুকিয়ে রাখা চিটফান্ডের বিপুল টাকা এখন মূল্যহীন। এক ধাক্কায় পাপ বিদায়।

• বেহাল নির্মাণ শিল্প: বড় মাপের কালো টাকা খাটত এই শিল্পে। হঠাৎ এই টাকা অদৃশ্য হওয়ায় ফ্ল্যাটের চাহিদা এবং দাম অনেকটাই কমতে পারে বলে আশঙ্কা। ফ্ল্যাট-ক্রেতার জন্য অবশ্য শুভ। সুদ আরও কমতে পারে গৃহঋণে।

• ব্যাঙ্কের পৌষ মাস: ব্যাঙ্কগুলি বিপুল পরিমাণ তহবিল পাচ্ছে কারেন্ট ও সেভিংস অ্যাকাউন্টে। প্রথমটিতে কোনও সুদ দিতে হয় না। সেভিংস-এ সুদ মাত্র ৪%। পাশাপাশি, মানুষ বেশি করে রপ্ত হচ্ছে কার্ডের ব্যবহারে। এতেও ফায়দা হবে ব্যাঙ্কগুলির।

• মিউচুয়াল ফান্ডের কাছে সদর্থক: মানুষ আর মোটা টাকা ঘরে রাখতে সাহস পাবেন না। বিকল্প হিসেবে লিকুইড ফান্ডের পথ বেছে নিতে পারেন।

• হোয়াইট গুডস-এর কালা দিবস: কালো টাকা বাতিল হওয়ায় সাদা পণ্য অর্থাৎ টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমবে।

• রমরমা অনলাইন লেনদেনে: রাতারাতি বিপুল পরিমাণ লেনদেন বেড়েছে ই-ওয়ালেট ও অনলাইন পণ্য লেনদেনকে।

• কোপ জাতীয় উৎপাদনে: কালো অর্থনীতি হঠাৎ বসে যাওয়ায় কৃষি এবং শিল্পে বড় রকমের চাহিদা হ্রাস পেতে পারে। এতে কমতে পারে জাতীয় উৎপাদন। শেয়ার বাজারের কাছে এটা অবশ্য আপাতত সুখবর নয়। তবে সাদা অর্থনীতি হাল ধরলে বদলাবে পরিস্থিতি।

• মার্কিন মসনদে ট্রাম্প: ট্রাম্প জেতার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বেশ প্রতিকূলই ছিল। এক ঝটকায় সেনসেক্স নেমেছিল ১৬০০ পয়েন্ট। পরে বেশ খানিকটা শুধরে নিলেও ট্রাম্পকে কেন্দ্র করে ভারতের আশঙ্কা বাড়ছে। কঠিন শর্ত আরোপ করা হতে পারে ভারতীয় কর্মীদের ভিসা ইস্যুর ব্যাপারে।

সব মিলিয়ে বাজার কত দিনে স্থিতিশীল হবে, সেটা কেউই এখন বলতে পারছেন না। কোনও মারাত্মক রোগ রাতারাতি সারানোর জন্য যদি কঠিন দাওয়াই প্রয়োগ করা হয়, তবে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম হয় না। এতেই এখন আমরা ভুগছি। তবে ভারতীয় অর্থনীতি যথেষ্ট সুঠাম। দীর্ঘ মেয়াদে অবস্থা ভালই হবে। ফলে ঝুঁকে পড়া বাজারে ভাল শেয়ারে লগ্নি করা যেতেই পারে। কর সাশ্রয়ের জন্য লগ্নি করা যেতে পারে ইএলএসএস প্রকল্পে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement