এটিএমের সময় কমছে কিছু ব্যাঙ্কে, ভোগান্তির আশঙ্কা সাধারণ মানুষের

এর আগে এটিএমে গ্রাহক পিছু লেনদেনের সংখ্যা কমিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। বাড়ানো হয়েছে পরিষেবার খরচ।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৫
Share:

এটিএম পরিষেবার সময় কমাচ্ছে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক। রাজ্যে বেশ কিছু এটিএম রাত ১০টার পরে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাঙ্ক কর্তারা অবশ্য সরকারি ভাবে সময় কমানোর কথা মানছেন না। যদিও ব্যাঙ্কের কিছু সূত্র এবং এটিএম পরিষেবা দেওয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি সংস্থা বলছে, প্রধানত খরচে রাশ টানতেই পরিষেবার সময় কমানোর পথে হাঁটছে ব্যাঙ্কগুলি। যার জেরে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

এর আগে এটিএমে গ্রাহক পিছু লেনদেনের সংখ্যা কমিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। বাড়ানো হয়েছে পরিষেবার খরচ। এটিএমে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি পরিষেবা নিতে গেলেই দিতে হয় ফি। সেভিংস অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ব্যালান্স রাখা বাধ্যতামূলক হয়েছে বেশ কিছু ব্যাঙ্কে। যার নীচে টাকা থাকলে উল্টে গুনাগার দিতে হয় মানুষকে। আর এ বার রাতে এটিএম পরিষেবা বন্ধ থাকার জেরে মানুষের সমস্যা বাড়বে বলেই মত অনেকের। বিশেষ করে যখন রাতে ব্যাঙ্ক খোলা থাকে না। প্রয়োজনে এটিএম-ই ভরসা।

সূত্রের খবর, রাতের দিকে মূলত সেই সব এটিএম-ই বন্ধ করা হচ্ছে, যেগুলিতে নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছেন। তাদের দাবি, এর মূল কারণ গত পাঁচ বছরে এটিএম পরিচালনার খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়া। পাশাপাশি, আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন রয়েছে, এমন কিছু অঞ্চলেও রাতে সুরক্ষার খাতিরে বন্ধ রাখা হচ্ছে এটিএম। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যাঙ্ক কর্তা জানান, রাতে যেহেতু এটিএম গ্রাহকের সংখ্যা কম থাকে, তাই তাঁরা ১০টার পরে পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

Advertisement

অভিযোগ

• রাত ১০টার পরে বন্ধ এটিএম।
• যেখানে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা, সেখানে বেশি।

কারণ

• এটিএম চালানোর খরচ বেড়েছে।
• পাঁচ বছরে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
• বেতন বেড়েছে নিরাপত্তারক্ষীর।
• ব্যয়সাপেক্ষ ক্যালিব্রেশন পদ্ধতি।

সূত্রের বক্তব্য

• তিন শিফ্‌টে রক্ষী রাখার খরচ মাসে ৮০,০০০ টাকা। এক শিফ্‌ট বন্ধ রাখলে খরচ বাঁচে।
• রাতে গ্রাহক কম। তাই খরচ ছাঁটাই সে সময়েই।
• একটা সময়ে যথেচ্ছ ভাবে এটিএম বসানো হয়েছে। এখন কমাতে হচ্ছে।
• রাজ্যে গত দু’বছরে এটিএম কমেছে ১,৭০০। এখন এটিএমের সংখ্যা ৯,২০০।
• দু’বছরে রক্ষী কমেছে ৩,০০০। এখন রক্ষী প্রায় ৭,৫০০।

এটিএম পরিষেবা সংস্থা হিতাচি পেমেন্টস সার্ভিসেসের চ্যানেল ম্যানেজার ইন্দ্রলোহিত রায় বলেন, ‘‘রাজ্যে গত পাঁচ বছরে নিরাপত্তা রক্ষীদের বেতন-সহ এটিএম পরিচালনার খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। শুধু তিন শিফ্‌টে রক্ষীদের খাতেই খরচ হয় মাসে প্রায় ৮০,০০০ টাকা।’’ তাঁর দাবি, সেই কারণেই পরিষেবার সময় কমিয়ে এক শিফ্‌টে রক্ষী তুলে দিয়ে খরচে রাশ টানতে চাইছে ব্যাঙ্কগুলি। অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি তুলে দেওয়া হয়েছে রক্ষী।

ব্যাঙ্ক কর্মীদের সংগঠন এআইবিইএ-র সভাপতি রাজেন নাগর জানান, গত দু’বছরে রাজ্যে প্রায় ৩,০০০ রক্ষী ছাঁটাই করেছে ব্যাঙ্কগুলি। কমেছে এটিএমের সংখ্যাও। ২০১৭ সালের জুনে রাজ্যে যেখানে এটিএম ছিল ১০,৯২৬টি। এখন সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯,২০০টিতে। সেখানে বর্তমানে মোট রক্ষীর সংখ্যা সাড়ে সাত হাজারের মতো।

তবে বেতন বৃদ্ধির ফলেই যে এটিএম রাখার খরচ বেড়েছে, তা অবশ্য মানতে নারাজ রাজেনবাবু ও ব্যাঙ্ক অফিসারদের সংগঠন আইবকের রাজ্য সম্পাদক সঞ্জয় দাস। তাঁরা জানান, ‘‘নোট বাতিলের পরে তার আয়তন বদলেছে। এখনও নতুন নতুন আয়তনের নোট বাজারে ছাড়া হচ্ছে। যা এটিএমে ভরে পরিষেবা দিতে হলে মেশিনের ভিতরে নোট রাখার ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে (রিক্যালিব্রেশন) হয়। যার জন্য এটিএম বসানো এবং তা পরিচালন খরচ দ্রুত বেড়েছে।’’ তাঁদের অভিযোগ, এক সময়ে ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই ব্যাঙ্কগুলি যথেচ্ছ এটিএম বসিয়েছিল। এখন সেই সংখ্যাই কমাচ্ছে তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement