মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে অরুন্ধতী ভট্টাচার্য। ছবি: পিটিআই।
সংসদের বাদল অধিবেশন শেষ হতে আর মাত্র দু’দিন বাকি। কিন্তু রাজনৈতিক বিবাদের জেরে চলতি অধিবেশন কার্যত নিষ্ফলা থেকে গেল। এক দিনও সংসদ পুরো সময় চলতে পারেনি। এর ফলে পণ্য-পরিষেবা কর এবং জমি বিলের মতো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আইনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত শিকেয়। আর এরই বিরূপ প্রভাব পড়েছে শেয়ার বাজারে। পাশাপাশি, বাজার সূত্রের খবর, স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের আর্থিক ফলাফলও লগ্নিকারীদের খুশি করতে পারেনি। কারণ, তাঁদের প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি।
সংসদের অচলাবস্থা শেয়ার বাজারকে চূড়ান্ত ভাবে অনিশ্চিত করে তুলেছে। ফলে গত তিন দিন ধরেই টানা পড়ছে শেয়ার বাজার। তিন দিনে সেনসেক্সের পতন ৪৩২ পয়েন্টেরও বেশি। মঙ্গলবার এক ধাক্কায় সেনসেক্স ২৩৫.৬৩ পয়েন্ট পড়ে ফের নেমে এসেছে ২৭ হাজারের ঘরে। বাজার বন্ধের সময়ে সূচক থিতু হয় ২৭,৮৬৬ অঙ্কে। এ দিন টাকার দামও পড়েছে ৪০ পয়সা। যার ফলে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৬৪.২৭ টাকা।
এ দিন স্টেট ব্যাঙ্কের শেয়ার দর ৪.৮৭ শতাংশ পড়ে গিয়েছে। যদিও ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে স্টেট ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা আগের বছরের থেকে ১০.২৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৬৯২ কোটি টাকা। পাশাপাশি অনুৎপাদক সম্পদও কমেছে কিছুটা। আগের বছরের থেকে চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে নিট হিসাবে স্টেট ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ ০.৪২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২.২৪ শতাংশ। ঋণের পরিমাণ ৬.৬১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৩ লক্ষ ১৩ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, অধিকাংশ ব্যাঙ্কে যেখানে বড় সংস্থার শিল্প ঋণের পরিমাণ কমেছে, সেখানে স্টেট ব্যাঙ্কে তা আগের বারের থেকে ১৩.১৩ শতাংশ বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের ধরাণা, এই মুহূর্তে সংসদের অচলাবস্থাই শেয়ার বাজারের পতনের প্রধান কারণ। দেশের আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি আটকে থাকায় সংস্কারের গতি নিয়েই লগ্নিকারীদের মনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। যার ফলে বাজারের উপর আস্থা হারিয়েছেন তাঁরা। যে-কারণে এখন দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে লগ্নি প্রায় হচ্ছে না বলা চলে।
অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম দ্রুত পড়ে যাওয়ায় শেয়ার বাজার চাঙ্গা হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সংসদের সমস্যা সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিয়েছে। এখন লগ্নিকারীরা অতি স্বল্পকালীন ভিত্তিতে বিনিয়োগ করছেন। যার ফলে অধিকাংশ দিনই লেনদেনের শুরুতে বাজার দ্রুত উঠলেও পরের দিকে তা পড়ে যাচ্ছে। এই দিনও সকালের দিকে বাজার দ্রুত চাঙ্গা হতে থাকায় সেনসেক্স উঠে যায় ২৮২০৫.১২ অঙ্কে। কিন্ত শেষের দিকে মুনাফার টাকা তুলে নিতে শেয়ার বিক্রির বহর বেড়ে যাওয়ার ফলে সেনসেক্স ৩৩৯ পয়েন্ট পড়ে যায়। একই ভাবে আগের দিন অর্থাৎ গত সোমবারও বাজার প্রথমে দ্রুত উঠেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেনসেক্স ৩১৫ পয়েন্ট খুইয়ে আগের দিনের থেকে ১৩৪.৬৭ অঙ্ক নীচে শেষ হয়।
মঙ্গলবার ব্যাঙ্ক, আবাসন, গাড়ি তৈরির সংস্থা-সহ অধিকাংশ কোম্পানিরই শেয়ার দর পড়েছে। তবে ডলারের দাম বাড়ার ফলে চড়েছে বেশ কিছু তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার শেয়ার দর।