সম্বৎ ২০৭৪-এর প্রথম দিনের লেনদেন পর্বটি আদৌ ভাল কাটেনি শেয়ার বাজারের কাছে। দীপাবলির সন্ধ্যায় মুরত লেনদেনে সেনসেক্স নেমেছে ১৯৪ পয়েন্ট। নিফ্টি ৬৪ পয়েন্ট। এই পতন সত্ত্বেও, সেনসেক্স ও নিফ্টি থেকে গিয়েছে যথাক্রমে ৩২ হাজার এবং ১০ হাজারের উপরেই। বছরের প্রথম দিনটি খারাপ গেলেও, গোটা বছর যে একই রকম কাটবে, তা কিন্তু বলা যাবে না। গত বছরেও মুরতে খানিকটা করে নেমেছিল এই দুই সূচক। কিন্তু একই বছরে দু’টি সূচক পৌঁছয় সর্বকালীন রেকর্ড উচ্চতায়। প্রকৃতপক্ষে সম্বৎ ২০৭৩-এর শেষ সপ্তাহে নতুন নজির গড়ে সূচক দু’টি।
কিছুটা নামলেও, দুই সূচক এখনও যথেষ্ট উঁচুতে। গত বছর বড় উত্থানের পরে, সকলের মনে এখন একই প্রশ্ন— কেমন যাবে নতুন বছর? অর্থনীতিতে তেমন ভাল খবর নেই, নোট বাতিল ও জিএসটি রূপায়ণের কারণে বৃদ্ধি তলানিতে, ঠিক তখনই দুই সূচক রেকর্ড অঙ্কে। বিষয়টি ঠিক মেলানো যাচ্ছে না। এটা আবার ঘটেছে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি লগ্নি অল্প অল্প করে গুটিয়ে নিতে থাকা সত্ত্বেও।
এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে উত্থানের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে আসছে দেশের ভিতর থেকেই বাজারে ক্রমাগত লগ্নি। সেপ্টেম্বরে সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানের (এসআইপি) মাধ্যমে নানা ইকুইটি ফান্ডে লগ্নি হয়েছে ৫,৫১৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে এই পথে লগ্নি এসেছে ২৯,২৬৬ কোটির। এই সময়ে গড়ে প্রতি মাসে ৮.৮ লক্ষ নতুন এসআইপি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে যার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১.৬৬ কোটি।
প্রশ্ন উঠছে বাজারের জন্য এই ধরনের পরিস্থিতি কি ভাল? বাজারের পিই রেশিও (শেয়ারের দাম ও শেয়ার পিছু আয়ের অনুপাত) এখন যথেষ্ট উঁচুতে। বাজারের এই উচ্চতা ধরে রাখার জন্য সংস্থাগুলির লাভ তথা শেয়ার পিছু আয় বাড়ানো এবং দাম ও আয়ের অনুপাত কিছুটা কমিয়ে আনা প্রয়োজন। পরিস্থিতি যা, তাতে এটা খুব দ্রুত সম্ভব না-ও হতে পারে। এই অবস্থায় কিছুটা সংশোধন প্রয়োজন বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
আশাবাদীরা অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে এঁরা একমত। এঁরা মনে করেন, অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা সাময়িক। কয়েক মাসের মধ্যেই উৎপাদন পুরনো জায়গায় ফিরে যাবে। এরই মধ্যে বৃদ্ধির ছোঁয়া লেগেছে কয়েকটি শিল্পে। তাঁদের ধারণা, মার্চের মধ্যেই নিফ্টি ছোঁবে ১১ হাজারের সীমা। অনেকটা ওঠার পরে ‘বুলরা’ এখন দম নিচ্ছে মাত্র। ‘বেয়ারদের’ আদৌ জায়গা ছেড়ে দেয়নি।
যে যা-ই ভাবুন, এ কথা ঠিক যে, এই জায়গায় সূচক পৌঁছেছে বেশ দ্রুত। অর্থাৎ একটু সাবধানেই পা ফেলতে হবে এখন। লক্ষ রাখতে হবে, ত্রৈমাসিক ও ষাণ্মাসিক আর্থিক ফলে, বিশ্ব বাজারের গতিবিধি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে সুদের ওঠা-পড়া, মূল্যবৃদ্ধির বাড়া-কমা, বিদেশি লগ্নি আসা-যাওয়ার মতো ঘটনার দিকে। বড় মেয়াদে বাজার ভাল হবে এই আশায় ভাল শেয়ার কেনা যেতে পারে প্রতিটি পতনে। এসআইপি-র পথে ফান্ডে লগ্নি করলে উত্থান-পতনের আঁচ খুব একটা গায়ে লাগবে না। বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে এই পদ্ধতিতে লগ্নি বেশি লাভজনক হতে পারে।
গত সপ্তাহে ফল প্রকাশ করেছে বেশ কয়েকটি সংস্থা। মুনাফা বাড়লেও, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা ভাল রকম বেড়ে ওঠায় বাজার হতাশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ফেডারেল ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা বেড়েছে ৩১%। সার্বিক মুনাফা ১৩% বেড়ে বজাজ ফিনসার্ভের। সিমেন্ট উৎপাদক এসিসি-র লাভ বেড়ে দ্বিগুণ হলেও, আলট্রাটেকের সার্বিক মুনাফা কমেছে ৩১%। ১৯% লাভ বেড়েছে সদ্য বাজারে নথিভুক্ত হওয়া দেশের একমাত্র সাধারণ বিমা সংস্থা আইসিআইসিআই লম্বার্ডের।
গত এক বছরে এনপিএস প্রকল্পের অধীনে ইকুইটি প্ল্যান (টিয়ার-১) ভাল রিটার্নের ব্যবস্থা করলেও, তেমন বৃদ্ধি হয়নি সরকারি বন্ড (টিয়ার-২) ও কর্পোরেট বন্ড (টিয়ার-৩) প্ল্যানে। সারণিতে রইল রিটার্নের বিশদ তথ্য।