গৌতম আদানি। —ফাইল চিত্র।
আদানি-হিন্ডেনবার্গ কাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে জমা দিল বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি। জানাল, যে ২৪টি বিষয় নিয়ে তারা তদন্ত করছে তার মধ্যে ২২টির কাজ শেষ। পাঁচটি দেশ থেকে আর্থিক লেনদেনের তথ্য এখনও না আসায় বাকি দু’টির রিপোর্ট এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, এই রিপোর্ট অন্তর্বর্তী। কারণ, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ যে আদানি পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিদেশি সংস্থাকে দিয়ে আদানি গোষ্ঠীরই সংস্থাগুলিতে লগ্নির অভিযোগ তুলেছিল, তার তদন্ত শেষ হয়নি। তবে আজ স্টক এক্সগুলিকে সেবি জানিয়েছে, তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ করবে তারা। এই প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, আদানি গোষ্ঠীকে ছাড় দেওয়া হয়েছে এমনটা মোটেই বলা যাচ্ছে না। ২৯ অগস্ট শীর্ষ আদালতে মামলার পরবর্তী শুনানি।
সেবি যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তাতে সরাসরি কোনও সিদ্ধান্তের কথা লেখা হয়নি। রয়েছে তদন্তের প্রতিটি পদক্ষেপের কথা। তারা যে তথ্য দিয়েছে তার থেকে জানা গিয়েছে, আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার দর কারচুপি করে বাড়ানো, নিজেদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সংস্থাকে দিয়ে শেয়ার কেনানো সংক্রান্ত তথ্য নিয়ন্ত্রককে না দেওয়া এবং সংস্থার অভ্যন্তরীণ তথ্যের ভিত্তিতে শেয়ার লেনদেনের মতো গুরুতর অভিযোগের তদন্তের কাজ শেষ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘তদন্তে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে সেবি।’’ একই সঙ্গে এ-ও জানানো হয়েছে, ১৩টি লগ্নিকারীর (১২টি বিদেশি লগ্নিকারী ও একটি বিদেশি সংস্থা) মাধ্যমে ঘুরপথে আদানি গোষ্ঠীতে লগ্নির অভিযোগের তদন্ত শেষ হয়নি। শেয়ার বাজারে এরা সাধারণ লগ্নিকারী হিসেবে চিহ্নিত হলেও, বেশ কয়েকটির সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির দাদা বিনোদ আদানি যুক্ত বলে অভিযোগ করেছিল হিন্ডেনবার্গ। এই লগ্নিকারীদের পিছনে যে সংস্থাগুলি রয়েছে সেগুলি কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্যে (ট্যাক্স হেভন) অবস্থিত। সেখান থেকে তথ্য পাওয়াই এখন চ্যালেঞ্জ। সংস্থাগুলির আসল মালিক কারা তা জানার জন্য পাঁচটি দেশ থেকে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চলছে। এখনও পর্যন্ত তৈরি রিপোর্টে কর্তৃপক্ষ সায় দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সেবি।
গত ২৪ জানুয়ারি আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল আমেরিকার শেয়ার বিশ্লেষণকারী সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। সেখানে দাবি করা হয়, গত এক দশক ধরে কারচুপি করে শেয়ার দর বাড়িয়েছে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলি। বিদেশের ভুঁইফোঁড় সংস্থার মাধ্যমে ঘুরপথে পুঁজি ঢেলেছে নিজেরাই। এর জেরে আদানিদের ১০টি নথিভুক্ত সংস্থার শেয়ারে ধস নামে। সেগুলির দাম এখনও আগের জায়গায় পৌঁছয়নি। সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে আদানিরা আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিলেও তুলকালাম শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে। এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট সেবিকে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলে। গত ১৪ অগস্ট তদন্তের সময়সীমা শেষ হলেও আরও ১৫ দিন চায় বাজার নিয়ন্ত্রক। এ বার অন্তর্বর্তী রিপোর্ট জমা দিল তারা।
এ দিকে, আদানিদের অন্ধ্রপ্রদেশের গঙ্গাভরম বন্দর অধিগ্রহণ নিয়েও প্রশ্ন তুলল কংগ্রেস। আজ এক্স হ্যান্ডলে দলের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের বক্তব্য, ঋণ না থাকা বন্দরটিকে ৬২০০ কোটি টাকায় হাতে পাওয়া কার্যত অসম্ভব। স্বাভাবিক মূল্যায়নে এর দাম অন্তত দ্বিগুণ হওয়ার কথা। কী ভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ‘বন্ধুকে’ সাহায্য করছেন, তা শুধু যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তেই জানা যেতে পারে।