নিয়ম বদলে জোড়া সুখবর।
বছর শুরুর দিন থেকেই নতুন শেয়ারে লগ্নির পথ মসৃণ করল সেবি। লক্ষ্য, তা কিনতে আবেদনকারীদের হয়রানি কমানো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে নতুন শেয়ার ছাড়ার সময় সাধারণ লগ্নিকারীদের টাকা অযথা আটকেও রাখতে পারবে না কোনও সংস্থা। পারবে না তাঁদের প্রাপ্য সুদ থেকে বঞ্চিত করে সেই টাকা নিজেদের ব্যবসার কাজে লাগাতে।
শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী, এখন থেকে কেউ নতুন শেয়ার কেনার আবেদন করলে, আর দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলিয়ে রাখা যাবে না তাঁকে। আবেদন করার শেষ তারিখের ছ’দিনের মধ্যে জানিয়ে দিতে হবে তাঁর নামে শেয়ার আদৌ মঞ্জুর হবে কি না। হলে, তার সংখ্যা কত। আগে এই সময়সীমা ছিল ১২ দিন।
তা ছাড়া, নতুন নিয়মে আর আগের মতো আবেদনপত্রের সঙ্গে চেক জমা দিতে হবে না লগ্নিকারীকে। তার বদলে জানাতে হবে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর-সহ প্রয়োজনীয় তথ্য। সেখানে আবেদন করা শেয়ারের দাম বাবদ টাকা আলাদা করে ‘তুলে রাখা’ (ব্লক) হবে তাঁর অ্যাকাউন্টেই। কিন্তু শেয়ার মঞ্জুর না-হওয়া পর্যন্ত তার উপর যথারীতি সুদ পেতে থাকবেন লগ্নিকারী। আগের মতো শুরুতেই চেক ভাঙিয়ে আবেদন করা শেয়ারের পুরো দাম কেটে নেওয়ার জো আর কোনও সংস্থার থাকবে না।
এত দিন কোনও সংস্থা নতুন শেয়ার ছাড়ার বিজ্ঞাপন দিলে, যতগুলি শেয়ারের জন্য আবেদন করা হচ্ছে, তার পুরো দাম ধরে চেক জমা দিতে হত। ফলে শেয়ার কিনতে আবেদন করার সময় থেকে তা মঞ্জুর হওয়া পর্যন্ত আবেদনকারীদের টাকা বিনা সুদে ব্যবসায় কাজে লাগাতে পারত সংস্থাগুলি। উল্টো দিকে, ওই টাকা ব্যাঙ্কে রাখলে যে সুদ পাওয়ার কথা, তা থেকে বঞ্চিত হতেন আবেদনকারীরা। নতুন নিয়মে তা বদলাবে। আসলে এই নিয়ম এত দিন প্রযোজ্য ছিল শেয়ার কিনতে আবেদন করা সংস্থার ক্ষেত্রে। এ বার তা ব্যক্তির জন্যও চালু হল।
আগাম চেক দিতে না হওয়ায়, আর একটি সুবিধা হবে আবেদনকারীর। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কেউ যতগুলি শেয়ারের জন্য আবেদন করেছেন, ততগুলি তাঁর বরাতে জোটেনি। সে ক্ষেত্রে যেক’টি তিনি পেয়েছেন, শুধু তার দামই নেওয়া হবে ব্লক করে রাখা টাকা থেকে। আগেভাগে চেকে পুরো দাম গুনে বাড়তিটুকু ফেরত পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। অনেক সময় আবার আবেদন করা সত্ত্বেও শেয়ার আদৌ মেলেই না। এ বার খামোখা টাকা গুনতে হবে না সে ক্ষেত্রেও। সেবির এই নিয়ম নতুন শেয়ারের বাজারকে আরও চাঙ্গা করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৫ সালে সেনসেক্স নামলেও, বাজারে লেনদেন হওয়া সমস্ত শেয়ারের মোট মূল্য (মার্কেট ক্যাপ) বেড়েছে দু’লক্ষ কোটি টাকা। কারণ, বাজারে অনেক সংস্থার নতুন শেয়ার ছাড়া এবং এক-দু’টি বাদ দিলে তাতে ভাল সাড়া। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০১৬ সালেও বাজারে নতুন ইস্যুর সংখ্যা বাড়বে। যেমন, বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, ‘‘২০১৫ সালের নজির চলতি বছরে সংস্থাগুলিকে নতুন শেয়ার ছাড়তে উৎসাহী করবে। ফলে অনেক নতুন শেয়ার বাজারে আসার সম্ভাবনা। সেবির পদক্ষেপ সাধারণ লগ্নিকারীদের মধ্যে নতুন শেয়ার কেনার উৎসাহ বাড়াবে বলেই আমার বিশ্বাস।’’