এখন থেকে নতুন শেয়ার ছাড়ার নাম করে সাধারণ লগ্নিকারীদের টাকা আর আটকে রাখতে পারবে না কোনও সংস্থা। শুধু তাই নয়, নতুন শেয়ার কেনার আবেদন করার শেষ তারিখের ৬ দিনের মধ্যে আবেদনকারীকে জানিয়ে দিতে হবে তাঁর নামে শেয়ার মঞ্জুর করা হবে কী না। শেয়ার বরাদ্দ হলে বিনিয়োগকারীকে জানাতে হবে তার সংখ্যাও। শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবির নির্দেশে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই চালু হচ্ছে এই নিয়ম।
এর ফলে শেয়ার কেনার জন্য আবেদন করা থেকে, তা মঞ্জুর হওয়া পর্যন্ত সময়ে লগ্নিকারীদের টাকা বিনা সুদে ব্যবসায় লাগানোর যে সুবিধা সংস্থাগুলি এত দিন ভোগ করত, তা বন্ধ হবে। পাশাপাশি এত দিন ওই সময়ের জন্য লগ্নিকারীরা জমা দেওয়া টাকার উপর ব্যাঙ্কের সুদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন। এ বার শেষ হবে সেই বঞ্চনাও। এই নিয়ম এত দিন প্রয়োজ্য ছিল শুধু কর্পোরেট সংস্থাগুলির শেয়ার কেনার আবেদনের ক্ষেত্রে। ১ জানুয়ারি থেকে ব্যক্তির ক্ষেত্রেও তা চালু হল।
নতুন ব্যবস্থায় লগ্নিকারীকে আবেদনপত্রের সঙ্গে আগের মতো আর চেক জমা দিতে হবে না। জানাতে হবে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর-সহ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় তথ্য। এর ফলে সংস্থাগুলি চেক ভাঙিয়ে টাকা তুলে নিতে পারবে না। কেবল লগ্নিকারীর দেওয়া ব্যাঙ্কের তথ্যের ভিত্তিতে শেয়ারের দাম বাবদ টাকা আটকে বা ‘ব্লক’ করে রাখতে পারবে। শেয়ার মঞ্জুর হলে তবেই তার দাম, ব্লক করা ওই টাকা থেকে কেটে নিতে পারবে। যদি আবেদন করা পুরো শেয়ার মঞ্জুর না-হয়, তা হলে যে কটি শেয়ার লগ্নিকারী পাবেন, কেবল তার দামটুকুই কাটতে পারবে সংস্থা। বাকি টাকা লগ্নিকারীর ব্যাঙ্কেই থেকে যাবে। নতুন ব্যবস্থায় ‘ব্লক’ বা আটকে থাকা টাকার উপর উপর যথারীতি সুদ পেতে থাকবেন লগ্নিকারী।
এর সঙ্গেই লগ্নিকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শেয়ার মঞ্জুর করার সময়সীমাও কমিয়ে দিয়েছে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক। সেবি নির্দেশ অনুসারে, এখন থেকে আবেদন করার শেষ তারিখের পর ৬ দিনের মধ্যে সংস্থাগুলিকে শেয়ার মঞ্জুর করার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। আগে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে ১২ দিন সময় পেত তারা।
প্রসঙ্গত, এত দিন কোনও সংস্থা নতুন শেয়ার ছাড়ার জন্য বিজ্ঞাপন দিলে, লগ্নিকারীদের শেয়ার কেনার আবেদনপত্রের সঙ্গেই তার দাম বাবদ চেক জমা দিতে হত। যতগুলি শেয়ার জন্য আবেদন করছেন, তার পুরো দামেরই চেক কাটতে হত। তার পর শেয়ার বরাদ্দ হলে তার দাম কেটে রেখে বাকি টাকা লগ্নিকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ফেরত দিত সংস্থাগুলি। অনেক সময়েই লগ্নিকারীরা যতগুলি শেয়ারের জন্য আবেদন করেন, তার সবটা তাঁরা পান না। আবার শেয়ার আদৌ মঞ্জুর হল না, এরকম ঘটনাও ঘটে আকছাড়।
পাশাপাশি, পুরনো নিয়মে যে সংস্থা নতুন ইস্যু ছাড়ছে, তারা আবেদনপত্রের সঙ্গে লগ্নিকারীর জমা দেওয়া চেক চটজলদি ভাঙিয়ে নিয়ে সেই টাকা ব্যবসায় লাগাতে পারত। এর জন্য লগ্নিকারীকে কোনও সুদ তাদের দিতে হত না। অন্য দিকে যত দিন পর্যন্ত শেয়ার মঞ্জুর না-হচ্ছে, অথবা আদৌ বরাদ্দ না-হলেও টাকা ব্যাঙ্কে ফেরত আসা পর্যন্ত লগ্নিকারীকে ওই টাকার উপর ব্যাঙ্কের সুদ পাওযা থেকে বঞ্চিত হতেন। আবেদন করা থেকে শেয়ার মঞ্জুর হওয়ার মধ্যে সাধারণত কেটে যেত প্রায় তিন সপ্তাহ। এ বার বিনিয়োগকারীকে সুবিধা করে দিতেই নতুন নিয়ম চালু করল শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক।