নতুন অর্থবর্ষের দ্বিতীয় সপ্তাহটাও খুব একটা ভাল গেল না সাধারণ মানুষের জন্য।
প্রথম সপ্তাহে ১০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানো হয়েছিল ডাকঘরের বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে। পরের সপ্তাহে হাত দেওয়া হল প্রভিডেন্ট ফান্ডে। এখানে ১৫ বেসিস পয়েন্ট (০.১৫ শতাংশ) সুদ ছাঁটাই করে তা নামিয়ে আনা হল ৮.৬৫ শতাংশে। স্বাভাবিক কারণেই চাকরিজীবীরা এতে মর্মাহত। এর ফলে অবসরের সময়ে হাতে পাওয়া টাকা কমবে। অন্য দিকে বিভিন্ন জমা প্রকল্পে সুদ একনাগাড়ে কমতে থাকায় আয় কমবে অবসরের পরে প্রাপ্ত টাকার লগ্নিতেও।
যাঁরা অবসরের একদম দোরগোড়ায়, তাঁদের হয়তো তেমন লোকসান হবে না কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ)-এ সুদ কমায়। এই সুদ ছাঁটাই প্রযোজ্য হবে ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছর থেকে। অর্থাৎ অবসরের সময়ে প্রভিডেন্ট ফান্ড বাবদ যাঁদের ৪০ লক্ষ টাকা পাওনা হবে, তাঁদের লোকসান হবে কম-বেশি ৬,০০০ টাকা। এই লোকসান থেকেও এঁরা হয়তো বেঁচে যাবেন, যদি বোনাসের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়।
২০ বছর বা তার বেশি পিএফ-এ টাকা জমা করে থাকলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বোনাস দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ যাঁদের অবসর নিতে আর ১-২ বছর বাকি, তাঁরা লাভবানই হতে পারেন সরকারের এই প্রস্তাবে। অন্য দিকে যে-সব কর্মীর বয়স কম, তাঁদের কিন্তু বড় লোকসান হবে এই সুদ ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তে। বড় মেয়াদে ক্রমপুঞ্জিত হারে লোকসানের বহর বাড়তেই থাকবে।
পরিস্থিতি যে-দিকে যাচ্ছে তা দেখে মনে হয় না, পরের বছর সুদ আবার বাড়ানো হবে। এই লোকসানকে মেনে নিয়ে মানুষকে ভাবতে হবে, কোন বিকল্প উপায়ে এই লোকসান পুষিয়ে আলাদা একটি তহবিল তৈরি করা যায়।
সপ্তম বেতন কমিশনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের গ্র্যাচুইটির সর্বাধিক পরিমাণ ১০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। গ্র্যাচুইটি বাবদ এই সুবিধা বেসরকারি ক্ষেত্রেও প্রসারিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে অবশ্য পিএফ খাতে লোকসান অনেকটাই পুষিয়ে যাবে।
সর্বত্র সুদ যে-ভাবে কমছে, তাতে অবসরের পরে ভাল আয় নিশ্চিত করতে অনেক আগে থেকেই পদক্ষেপ করতে হবে। বড় মেয়াদে গড়ে তুলতে হবে এমন অঙ্কের তহবিল, যা কম সুদে লগ্নি করেও অবসর জীবনে ভাল আয়ের ব্যবস্থা করা যাবে। কোন পথে এই তহবিল গড়ে তোলা যায়, তা দেখে নেব এক নজরে।
•প্রভিডেন্ট ফান্ডে স্বেচ্ছা-জমা: পিএফ তহবিলে বাধ্যতামূলক জমা ছাড়াও সংস্থার নিয়ম সাপেক্ষে স্বেচ্ছায় বেতন থেকে অতিরিক্ত অর্থ কাটিয়ে ওই খাতে জমা করা যায়। এতে দীর্ঘ মেয়াদে নিজের অজান্তে ক্রমপুঞ্জিত সুদ-সহ একটি বড় তহবিল গড়ে ওঠে। সুদ কমে ৮.৬৫ শতাংশ হলেও তা বর্তমান ব্যাঙ্ক সুদের (৬.৭৫ থেকে ৭ শতাংশ) তুলনায় অনেকটাই বেশি। আর সব থেকে বড় সুবিধা হল, পিএফ-এ প্রাপ্ত সুদ থাকে পুরোপুরি করমুক্ত। আমরা আর্থিক বছরের প্রথম মাসে আছি। স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত কাটাতে হলে চটজলদি তা আপনার সংস্থাকে জানিয়ে দিন, যাতে
এপ্রিল থেকেই আপনার স্বেচ্ছা জমা কার্যকর হয়।
•এন পি এস: বড় মেয়াদে টাকা জমানোর আর একটি ভাল জায়গা হল ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম বা এনপিএস। যাঁদের পেনশনের সুবিধা নেই এবং যাঁরা স্বনির্ভর, তাঁদের জন্য এটি একটি আদর্শ লগ্নির জায়গা। যাঁদের পিএফ এবং পেনশনের সুবিধা আছে, তাঁরাও অতিরিক্ত তহবিল গড়ে তোলার জন্য এনপিএস অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এনপিএস জমার উপর কর ছাড় পাওয়া যায় ৮০সিসিডি ধারায়।
•পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড: নিজের সংস্থায় প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থা থাকলেও অতিরিক্ত টাকা জমা করা যায় পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্টে। এখানে সুদ কমে ৭.৯ শতাংশ হলেও তা কিন্তু বাজার চলতি ব্যাঙ্ক সুদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। এই সুদ আবার পুরোপুরি করমুক্ত। অর্থাৎ যাঁরা এখনও পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলেননি, তাঁরা একটি খাতা খোলার ব্যাপারে এই বেলা ভাবতে পারেন।
•মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি: পুরনো তথ্য পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাবে, কোনও ভাল সুবিন্যস্ত ফান্ডে দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নির ফসল পেছনে ফেলে দেবে উপরে আলোচিত সব ক’টি প্রকল্পকে। অল্প অল্প করে হলেও (মাসে ন্যূনতম ৫০০ টাকা) বড় মেয়াদে এসআইপি পদ্ধতিতে নিয়মিত লগ্নি করে গেলে তা তৈরি করতে দিতে পারে এক মস্ত তহবিল। এই প্রকল্পেও আয় এবং রিটার্ন বাবদ হাতে আসা অর্থ করমুক্ত।
নতুন অর্থবর্ষ শুরু হয়েছে দু’সপ্তাহ আগে। সবে আমরা পা দিয়েছি বাংলা নববর্ষে। নতুন কিছু শুরু করতে হলে এটিই আদর্শ সময়। তা হলে আর অপেক্ষা কেন?
অবসর-পুঁজির বিকল্প পথ
•এপ্রিল থেকেই নিতে পারেন পিএফ খাতে স্বেচ্ছায় বাড়তি টাকা কাটানোর সিদ্ধান্ত। পিএফ তহবিলের উপর সুদ পুরোপুরি করমুক্ত
•বড় মেয়াদে টাকা জমান এনপিএসে। মিলবে করছাড়ও
•পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট খুলুন। এখানেও সুদ করমুক্ত
•ভাল মিউচুয়াল ফান্ডে লম্বা মেয়াদে এসআইপি করুন। আয় ও বৃদ্ধি খাতে পাওয়া তহবিল করমুক্ত