ওয়ারটেল না রিলায়্যান্স জিও! ৪জি নেটওয়ার্কে কে সেরা?
এ বার মুখোমুখি যুদ্ধে নামল দেশের অন্যতম দুই প্রধান টেলিকম সংস্থা। রিলায়্যান্স জিও এবং এয়ারটেল।
৪জি নেটওয়ার্ক পরিষেবায় দেশে কে সেরা, তা নিয়ে এ বার একে অন্যের গায়ে কার্যত, কাদা ছেটাতে শুরু করে দিল দুই সংস্থা। আর সেই বিতর্কের মধ্যমণি হয়ে দাঁড়াল ইন্টারনেট স্পিডটেস্ট সংক্রান্ত জনপ্রিয় অ্যাপ ‘উকলা’।
সোমবার এক সাংবাদিক বৈঠকে ‘উকলা’র মুখপাত্র আদ্রিয়ান হল্টার বলেন, “উকলা অ্যাপে প্রযুক্তির পদ্ধতি ও তথ্য একেবারেই সঠিক এবং সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য। আর সেই তথ্য বলছে, এয়ারটেলই এখন ভারতে যে ৪জি পরিষেবা দিচ্ছে, তা দেশে দ্রুততম নেটওয়ার্ক।”
আরও পড়ুন- জোট আইডিয়া, ভোডাফোনের
এর পরেই ‘উকলা’র দেওয়া সার্টিফিকেট নিয়ে প্রচারে, বিজ্ঞাপনে বাজার মাত করতে নেমে পড়ে এয়ারটেল। আর তাতেই চটেছে রিল্যায়ান্স জিও।
উকলার ওই দাবিকে ‘সম্পূর্ণ ভুয়ো’ বলছে রিলায়্যান্স জিও। মুকেশ অম্বানির সংস্থাটির দাবি, ‘‘উকলার দেওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে ‘অফিসিয়ালি’ দেশের সেরা ৪জি নেটওয়ার্ক বলে যে প্রচার চালাচ্ছে এয়ারটেল, সেটা একেবারেই ভুল। এর প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই অ্যাডভার্টাইজিং স্ট্যান্ডার্ড কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার (এএসসিআই) কাছে অভিযোগ জানিয়েছে জিও।’’
এয়ারটেলের বিজ্ঞাপন
রিলায়্যান্স জিও’র অভিযোগ, ‘‘টাকা নিয়ে এয়ারটেলকে সেরা নেটওয়ার্কের শিরোপা দিয়েছে উকলা। টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ট্রাই) বা ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশন (ডট)-এর স্বীকৃতি পায়নি উকলা। তাই উকলার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এয়ারটেল যে নিজেদের ৪জি নেটওয়ার্ককে সেরা বলে প্রচার করছে, তা আইনত অপরাধ।’’
উকলার অ্যাপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে জিও। তাদের মতে, ভারতের বেশির ভাগ স্মার্টফোনে ডুয়াল সিম রয়েছে। স্মার্টফোনে প্রাইমারি সিমে (সিম-১) এয়ারটেল এবং সেকেন্ডারি সিমে (সিম-২) জিও লাগানো থাকলে এবং জিও-র নেট চালু করে উকলা অ্যাপসে ইন্টারনেট স্পিড পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, উকলা অ্যাপসের রিপোর্টে এয়ারটেলের স্পিড দেখাচ্ছে। সেখানে জিও-র কোনও তথ্য দেখাচ্ছে না।
জিও কর্তৃপক্ষ কী বলছে (ভিডিও)
উকলার রিপোর্ট বলছে, ২০১৬-র শেষ ছয় মাসে ইন্টারনেট স্পিডের নিরিখে দেশে দ্রুততম ৪জি নেটওয়ার্কের তালিকার শীর্ষে এয়ারটেল। তবে, ‘ট্রাই’য়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে শেষ তিন মাসের রিপোর্ট কিন্তু অন্য কথা বলছে। ‘ট্রাই’য়ের রিপোর্ট জানাচ্ছে, গত ডিসেম্বরে জিও ছিল ৪জি ইন্টারনেট স্পিডে (১৮.১৪৬ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড) প্রথম স্থানে। সেখানে চার নম্বর স্থানে রয়েছে এয়ারটেল। তার স্পিড ৪.৭৪৭ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড। কিন্তু এই বছর, জানুয়ারিতে ইন্টারনেট স্পিড বাড়িয়ে (১১.৮৬২ মেগা বাইট প্রতি সেকেন্ড) প্রথমে চলে আসে এয়ারটেল। পাশাপাশি জিও-র স্পিড (৮.৩৪৫ মেগা বাইট প্রতি সেকেন্ড) এক ধাক্কায় অনেকটা নীচে নেমে যায়। ফেব্রুয়ারিতে অবশ্য নিজের জায়গা ধরে রাখে জিও (১৭.৪২৭ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড)। সেখানে এয়ারটেলের তিন নম্বর জায়গায় থেকে স্পিড ছিল ১১.২৫৪ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড।
'ট্রাই'য়ের শেষ তিন মাসের রিপোর্ট
গত সেপ্টেম্বরে রিলায়্যান্স জিও বাজারে আসার পর থেকেই রাতারাতি ৪জি ইন্টারনেটের মানচিত্র পাল্টে যায় ভারতে। এক ধাক্কায় নেমে যায় ৪জি পরিষেবার দর। ইঁদুর দৌড়ের মতো প্রতি দিন নতুন নতুন অফার দিতে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা। তার ফলে জলের দরে গ্রাহকদের ঘরে ঘরে এখন ৪জি পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছে প্রায় সবক’টি টেলিকম সংস্থাই। আর সেখানেই প্রশ্ন উঠছে নেটওয়ার্কের গুণগত মান নিয়ে। কারণ জলের দরে ডেটা দিতে গিয়ে টেলিকম সংস্থাগুলো নেটওয়ার্কের মান বজায় রাখছে না, এমন অভিযোগ করছেন বেশির ভাগ গ্রাহকই।