বাজেট ঘোষণার ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় আমজনতার জন্য বিশেষ ধরনের ছোট ব্যাঙ্ক গড়ার খসড়া নির্দেশিকা বৃহস্পতিবার পেশ করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই)। এগুলির কাজের গণ্ডি সীমিত থাকবে একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই। এ ধরনের ব্যাঙ্ক গড়ার জন্য ন্যূনতম মূলধন হবে ১০০ কোটি টাকা, যেখানে সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক খোলার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুযায়ী লাগে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা। স্থানীয় মানুষের সুবিধার জন্য তৈরি হবে এই ধরনের ব্যাঙ্ক, যাদের মাধ্যমে সহজেই ঋণ হাতে পাবেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
একই সঙ্গে, লেনদেন ব্যাঙ্ক বা পেমেন্ট ব্যাঙ্ক গড়ার খসড়াও দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এগুলির মাধ্যমে মূলত সাধারণ শ্রমিকেরা টাকা জমা রাখা, তা পাঠানো ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারবেন। ভিন্ রাজ্যে গিয়ে মজুরের কাজ করেন যাঁরা, তাঁরা যাতে সহজেই বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারেন, বা রোজগারের টাকা জমা রাখতে পারেন, তার জন্যই তৈরি হবে লেনদেন ব্যাঙ্ক।
প্রসঙ্গত, গত ১০ জুলাই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, “ছোট ব্যাঙ্ক ও সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য বিশেষ ধরনের ব্যাঙ্ক তৈরি করতে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কৃষক, ভিন্ রাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের সহজে আর্থিক লেনদেনের সুবিধা করে দেওয়াই হবে এই ধরনের ব্যাঙ্ক গড়ার লক্ষ্য।” আর জেটলির প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এ দিন ওই নির্দেশিকা জারি করল শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
সকলের দরজায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দিতেই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তাদের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ছোট ব্যাঙ্কগুলি আমানত সংগ্রহ, ঋণ দেওয়ার মতো ব্যাঙ্কিং সংক্রান্ত সব কাজকর্মই করতে পারবে। তবে তা হবে স্থানীয় ভিত্তিতে, একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে। সাধারণত তা হবে সংলগ্ন জেলায়, যেখানে একই শ্রেণির ও সংস্কৃতির মানুষের বসবাস। ভৌগোলিক দূরত্ব কম হলে ওই সব জেলা একাধিক রাজ্য বা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলেও অবস্থিত হতে পারবে।
পাশাপাশি, পেমেন্ট ব্যাঙ্ক সব ধরনের ব্যাঙ্কিং কাজকর্ম করতে পারবে না। তারা শুধু সাধারণ মানুষের আমানত জমা রাখতে পারবে, তা অন্যত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেবে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকায় তাদের সংযোগ কাঠামো গড়ে তোলা হবে। এর জন্য তাদের শাখা থাকবে, আবার বাণিজ্য সহযোগী বা বিজনেস করেসপন্ডেন্ট-ও রাখা হবে। অন্য কারও সংযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করেও পরিষেবা দেওয়া যাবে।
প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির নীতি মেনে ছোট ব্যাঙ্ক ও লেনদেন ব্যাঙ্কে বিদেশি বিনিয়োগও টানা যাবে। ব্যাঙ্ক নয় এমন বেসরকারি আর্থিক সংস্থা (এনবিএফসি), কর্পোরেট বিজনেস করেসপন্ডেন্ট, মোবাইল পরিষেবা সংস্থা, সুপার মার্কেট চেন, শিল্প সংস্থা, সমবায় প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইত্যাদির মাধ্যমে গড়া যাবে লেনদেন ব্যাঙ্ক। এরা আবেদন করতে পারবে এই ধরনের ব্যাঙ্ক খোলার জন্য। অন্য দিকে, ছোট ব্যাঙ্ক খোলার জন্য আবেদনপত্র দাখিল করতে পারবে ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক পরিষেবায় ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বসবাসকারী ভারতীয়রা। সংস্থা ও সমিতিও প্রোমোটার হওয়ার আবেদন করতে পারবে। এনবিএফসি, ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থা, স্থানীয় ব্যাঙ্কও (লোকাল এরিয়া ব্যাঙ্ক) নিজেদের ছোট ব্যাঙ্কে রূপান্তরিত করতে পারবে। তবে এ জন্য শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন করতে হবে। তাদের বেঁধে দেওয়া শর্ত পূরণ করলে তবেই লাইসেন্স মিলবে।