আগামী বাজেটে কেন্দ্র আর্থিক বৃদ্ধির পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কেরও উন্নয়নের খাতিরে কম সুদে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করতে দ্বিধা থাকবে না— এই মন্তব্য করে আপাতত সুদের হার অপরিবর্তিত রাখলেন শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন।
এই সিদ্ধান্তে অখুশি শেয়ার বাজার। সেনসেক্স পড়েছে ২৮৫.৮৩ পয়েন্ট। দাঁড়িয়েছে ২৪,৫৩৯.০০ অঙ্কে। ডলারের সাপেক্ষে টাকা পড়েছে ১৪ পয়সা। এক ডলারের দাম হয়েছে ৬৭.৯৮ টাকা।
মঙ্গলবার ঋণনীতি ফিরে দেখতে বসে রেপো রেট (যে-হারে স্বল্প মেয়াদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণ দেয়) এবং রিভার্স রেপো রেট (যে-হারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির থেকে স্বল্প মেয়াদে ঋণ নেয়) অপরিবর্তিত রেখেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। পরিবর্তন আনা হয়নি নগদ জমার অনুপাত (সিআরআর)-সহ বাকি কোনও হারেও। ফলে রেপো রেট আগের মতোই ৬.৭৫ শতাংশে এবং রিভার্স রেপো রেট ৫.৭৫ শতাংশে রইল।
পাশাপাশি আগামী দিনে সুদ কমানোর সুযোগ দিতে কেন্দ্রের দায়িত্বের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজন। তাঁর মন্তব্য, আগামী বাজেটে সরকার যদি উন্নয়নের লক্ষ্যে সংস্কারের পথে এগোয়, তা হলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সস্তায় ঋণ পাওয়ার রাস্তা খুলে দিতে দ্বিধা করবে না।
এ দিকে, সুদ অপরিবর্তিত রাখার প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে এ বার এই হার বদলাবে না, সেটাই বাজার আশা করেছিল। দেশের আর্থিক উন্নয়নের ব্যাপারে কেন্দ্রের পরিকল্পনার রূপরেখা আগামী বাজেটেই প্রকাশ করা হবে বলেও মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার ফলে যাঁরা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ি ইত্যাদি কিনেছেন, তাঁদের মাসিক কিস্তির অঙ্কের পরিবর্তনের সম্ভাবনা আপাতত নেই। বস্তুত শুধু ওই সব ঋণই নয়, সমস্ত ঋণের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।
সুদ এখনই পরিবর্তন না-করলেও মূল্যবৃদ্ধির হার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়ার দিকেই এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেন রাজন। সব্জি, ফল, অশোধিত তেলের দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশে আসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে মনে করেন রাজন। তাঁর ধারণা, ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরের শেষে তা ৫ শতাংশে নামবে। তবে কেন্দ্রের সপ্তম বেতন কমিশনের টাকা কর্মীরা হাতে পেলে বাজারে মূল্য স্তরের উপর তার কী প্রভাব পড়ে, তার উপর নজর রাখা জরুরি বলেও মনে করেন রাজন।
পাশাপাশি আর্থিক বৃদ্ধির হার চলতি আর্থিক বছরে ৭.৪ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে বলে ফের জানিয়েছেন তিনি। তবে ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরে ওই হার ৭.৬ শতাংশ হবে বলে মনে করেন তিনি।
এ দিকে, স্টার্ট-আপ সংস্থাগুলির ঋণ পাওয়ার বিষয়টি আরও সহজ করার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আগ্রহী। শুধু দেশ থেকেই নয়, তাদের বিদেশি পুঁজি পাওয়ার রাস্তাও সুগম করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পদক্ষেপ করবে।
এ দিন শুরুতে শেয়ার বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণনীতিতে সুদের হার না-কমানোর খবরে বাজারে হতাশা তৈরি হয়। মুনাফার টাকা তুলে নিতে লগ্নিকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। দ্রুত নেমে আসে সূচকের পারা। এই দিন এশিয়ার বাজারগুলির মধ্যে চিনে শেয়ার সূচকের মুখ ছিল উপরের দিকে। চিনা শীর্ষ ব্যাঙ্ক দেশের আর্থিক সমস্যা মোকবিলায় কিছু পদক্ষেপ করার জেরেই সূচক উঠেছে বলে বাজার সূত্রের খবর। তবে জাপান এবং অন্যান্য শেয়ার বাজারে অধিকাংশ সূচককেই মুখ নামাতে দেখা গিয়েছে।