রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
অতিমারির আগের বছরই (২০১৯-২০) ছিল শেষ বার। তার পরে আর সেভিংস অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ব্যালান্সের থেকে কম টাকা থাকার জন্য গ্রাহকদের থেকে জরিমানা কাটেনি স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। কিন্তু তার পরে গত পাঁচটি অর্থবর্ষে ১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ওই খাতে প্রায় ৮৫০০ কোটি আয় করেছে। গত সোমবার লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ মালা রায়, সিপিআই সাংসদ সুব্বারায়ন কে এবং সেলভারাজ ভি-এর প্রশ্নের লিখিত উত্তরে এই তথ্য দেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী। মঙ্গলবার এই নিয়ে ফের মোদী সরকারকে আক্রমণ করলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর কথায় ফিরল ‘চক্রব্যূহের’ উপমা। রাহুলের বার্তা, ‘‘দেশবাসী অভিমন্যু নন। অর্জুন। চক্রব্যূহ ভেদের ক্ষমতা তাঁদের আছে।’’
২০১৯-২০ অর্থবর্ষে জরিমানা বাবদ ৬৪০ কোটি টাকা আয় করেছিল স্টেট ব্যাঙ্ক। সেই সময়ে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। তবে করোনার বছর থেকে তারা আর জরিমানা নেয়নি। কিন্তু তাতে দাঁড়ি টানেনি বাকি ১১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। এই খাতে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি), ব্যাঙ্ক অব বরোদা, ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক, কানাড়া ব্যাঙ্ক এবং ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কোনও ব্যাঙ্ক মাসিক, আর কোনও ব্যাঙ্ক ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ন্যূনতম গড় ব্যালান্সের হিসাব কষে। কত টাকা জরিমানা নেওয়া হবে, সে ব্যাপারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকার আওতার মধ্যে থেকে সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাঙ্কের পর্ষদ। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এই খাত থেকে তারা ২৩৩১ কোটি টাকা আয় করেছে। ২০১৯-২০ সালের (১৭৩৮ কোটি) তুলনায় ৩৪% বেশি। এই আয় উত্তরোত্তর বেড়েছে।
এ দিন এক্স-এ রাহুল লিখেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর অমৃতকালে সাধারণ মানুষের শূন্য পকেটেও লুটপাট চলেছে। যে সরকার বন্ধু শিল্পপতিদের ১৬ লক্ষ কোটি টাকা মাফ করেছে, তারাই ৮৫০০ কোটি আদায় করেছে দরিদ্র ভারতীয়দের কাছ থেকে। যাঁদের ব্যাঙ্কে ন্যূনতম টাকা রাখার ক্ষমতাও নেই। এই জরিমানা ব্যবস্থা মোদীর চক্রব্যূহের দ্বার। এর মাধ্যমে সাধারণ ভারতবাসীর কোমর ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখবেন, ভারতবাসী অভিমন্যু নন, অর্জুন। তাঁরা সেই ব্যূহ ভেদ করে আপনাদের নৃশংসতার জবাব দিতে তাঁরা জানেন।’’
সোমবার লোকসভায় মহাভারতের অভিমন্যু বধের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন রাহুল। বলেছিলেন, কুরুক্ষেত্রে ছ’জন মিলে অভিমন্যুকে ফাঁদে ফেলে হত্যা করেছিলেন। চক্রব্যূহকে পদ্মব্যূহও বলা হয়। একবিংশ শতকেও পদ্মফুলের আকারে নতুন চক্রব্যূহ তৈরি হয়েছে। মহাভারতে অভিমন্যুর সঙ্গে যা করা হয়েছিল, তা-ই এখন করা হচ্ছে ভারতের যুব সম্প্রদায়, কৃষক, মহিলা এবং ছোট সংস্থার সঙ্গে। এ ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ ছ’জন প্রভাবশালীকে অভিযুক্ত করেছিলেন তিনি। প্রথমে কোভিড এবং তার পরে চড়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে প্রায় নাভিশ্বাস ওঠা সাধারণ গ্রাহকদের থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির কোটি কোটি টাকা জরিমানা আদায় নিয়ে এ দিন আবার সেই চক্রব্যূহের প্রসঙ্গ তুলেই শাসক শিবিরকে বিঁধলেন লোকসভার বিরোধী নেতা।
ব্যাঙ্কের আয়
অর্থবর্ষ জরিমানা
২০১৯-২০ ১৭৩৮
২০২০-২১ ১১৪২
২০২১-২২ ১৪২৯
২০২২-২৩ ১৮৫৫
২০২৩-২৪ ২৩৩১
(১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আয় কোটি টাকায়। সূত্র: লোকসভা)