অতিমারি পর্বে, ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দু’টি আর্থিক বছরে বয়স্কদের টিকিট থেকে রেল আয় করে মোট ৩৪৬৪ কোটি টাকা। ফাইল ছবি।
সংরক্ষিত টিকিটে প্রবীণ যাত্রীদের ছাড়ের সুবিধা ফেরানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে একাধিক বার দাবি উঠলেও, আর্থিক ক্ষতির দোহাই দিয়ে তাতে কান দেয়নি রেল। অতিমারি পর্বে, ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দু’টি আর্থিক বছরে বয়স্কদের টিকিট থেকে তারা আয় করে মোট ৩৪৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৫০০ কোটি টাকা বাড়তি আয় হয় ছাড় না দেওয়ায়। অর্থাৎ ছাড় দিলে এই ১৫০০ কোটি ভর্তুকি হিসাবে খরচ করতে হত রেলকে। সাশ্রয়ের সেই অঙ্ক আরও বেড়েছে। গত অর্থবর্ষে (২০২২-২৩) তা পৌঁছে গিয়েছে ২২৪২ কোটি টাকায়। সম্প্রতি তথ্যের অধিকার আইনে এক প্রশ্নের উত্তরে ওই তথ্য জানিয়েছে রেল।
সূত্রের দাবি, কোভিড কাটিয়ে দেশ আবার ছন্দে ফিরেছে। ফলে প্রবীণ নাগরিকদের ট্রেনে যাতায়াতও ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ সালের তুলনায় বেড়ে গিয়েছে অনেকখানি। গত ৩১ মার্চ শেষ হওয়া আর্থিক বছরে পুরুষ প্রবীণ যাত্রীদের টিকিট বিক্রি থেকে মোট ২৮৯১ কোটি এবং মহিলাদের থেকে ২১৬৯ কোটি টাকা আয় করেছে রেল। ছাড় পাওয়ার অন্যতম দাবিদার রূপান্তরকামী বয়স্কদের টিকিট থেকে আয়ের অঙ্ক ১.০৩ কোটি টাকা। যে কারণে সব মিলিয়ে ছাড় বাবদ ভারতীয় রেলের খরচ বেঁচে গিয়েছে ২০০০ কোটি টাকারও বেশি। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের বক্তব্য, ছাড়ের সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে বয়স্ক মানুষদের। অথচ এখন তা ফের চালু করার বদলে ওই খাতের বাড়তি আয় তারা নিজেদের কাজে লাগাচ্ছে।
ভারতীয় রেলে ৫৮ বছর বা তার বেশি বয়সের মহিলা যাত্রীদের টিকিটে ৫০ শতাংশ ছাড় মিলত। পুরুষ এবং রূপান্তরকামী যাত্রীরা ৬০ বছর বা তার বেশি বয়স হলে ছাড় পেতেন ৪০ শতাংশ। প্রায় দু’দশক তা বজায় থাকার পরে ২০১৬ সালে প্রবীণ যাত্রীদের উদ্দেশে রেল আবেদন করে, কেউ স্বেচ্ছায় ছাড় না নিলে সুবিধে হবে তাদের। রেলের সেই আবেদনে যথারীতি তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। কোভিড হানার পরে লকডাউনের আবহে আর্থিক ক্ষতির যুক্তি দেখিয়ে ২০২০ সালে সেই ছাড় পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। একাধিক সাংসদ এবং রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রবীণ যাত্রীদের টিকিটে ছাড় ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হচ্ছে বার বার। বহু বয়স্ক মানুষ বসে আছেন আবার সেই সুবিধা পাওয়ার অপেক্ষায়। তবে আর্থিক ক্ষতির যুক্তি তুলে ধরে আপাতত সেই সব আবেদন-নিবেদন তেমন গ্রাহ্য করছে না রেল।