বার্তা: সাংবাদিক সম্মেলনে অরুণ জেটলি। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে মিশিয়ে বড় ও শক্তিশালী ব্যাঙ্ক তৈরির পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ইউপিএ আমলেই। এনডিএ ক্ষমতায় আসার পরে স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় পাঁচটি সহযোগী ব্যাঙ্ক এবং ভারতীয় মহিলা ব্যাঙ্ককে। এ বার ব্যাঙ্ক অব বরোদা, বিজয়া ব্যাঙ্ক এবং দেনা ব্যাঙ্ককে মিশিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করল কেন্দ্র। সোমবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, নতুন এই প্রস্তাব নিয়ে তিনটি ব্যাঙ্কেরই পরিচালন পর্ষদ বৈঠক করবে। তার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে ব্যাঙ্কিং মহলের বিশ্বাস, যে হেতু তিনটি ব্যাঙ্কই রাষ্ট্রায়ত্ত, তাই কেন্দ্রের প্রস্তাব তাদের পরিচালন পর্ষদে গৃহীত না হাওয়ার কোনও কারণ নেই।
জ্বালানির দাম, টাকার বিনিময় মূল্য, বাণিজ্য ঘাটতির মতো বিষয়গুলি নিয়ে কেন্দ্র এমনিতেই বেকায়দায়। তার উপর অর্থনীতির অন্যতম বৃহত্তম স্তম্ভ বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির ঘাড়ে এখন বিপুল অঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা। এই অবস্থায় ব্যাঙ্কগুলির ভিত ফের শক্তিশালী করতে না পারলে শিল্প ঋণে ভাটা আসবে। থমকে যেতে পারে শিল্পোৎপাদন, আর্থিক বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান। অনেকে মনে করছেন, সে কারণেই লোকসভা নির্বাচনের আগে এই সংযুক্তিকরণ সারতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
ব্যাঙ্ক তিনটির মধ্যে দেনা ব্যাঙ্ক দুর্বল। গত ১১টি ত্রৈমাসিকে তাদের মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪,৫০০ কোটি টাকা। ঘাড়ে বিপুল অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা। ব্যাঙ্কটি এখন রয়েছে প্রম্পট কারেকটিভ অ্যাকশনের আওতায়। জেটলি বলেছেন, প্রস্তাব কার্যকর হলে দেনা ব্যাঙ্ককে চাঙ্গা করার দায়িত্ব নেবে তুলনামূলক ভাবে মজবুত ব্যাঙ্ক অব বরোদা এবং বিজয়া ব্যাঙ্ক। পাশাপাশি, নতুন ব্যাঙ্কটি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাঙ্কে পরিণত হবে। তবে কোনও ব্যাঙ্কেরই কর্মী ছাঁটাই হবে না বলে জেটলির দাবি।
যদিও ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা, লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই এখন কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা বলছে না কেন্দ্র। কিন্তু ভবিষ্যতে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প চালুর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা। কিছু দিন আগে যা হয়েছিল স্টেট ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে।তবে জেটলির দাবি, তিনটি ব্যাঙ্কের মধ্যে যেটিতে কর্মীদের জন্য সব থেকে ভাল আর্থিক সুবিধা রয়েছে, সেটিই নতুন ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে।
কেন্দ্রের যুক্তি
• সংযুক্তির ফলে তৈরি হবে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাঙ্ক।
• আকার বড় হওয়ায় সুবিধা হবে প্রতিযোগিতায়।
• সম্প্রসারিত পরিকাঠামোর সুবিধা পাবে নতুন ব্যাঙ্ক।
• সুবিধা হবে সুদের আমানত বৃদ্ধিতে।
• মাথায় রাখা হবে কর্মীদের (বিশেষ করে দেনা ব্যাঙ্কের) স্বার্থ।
• মিলিত ব্যাঙ্ক পাবে শেয়ার মূলধন জোগানের সুবিধাও।
ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর ভি এস আইয়ার বলেন, ‘‘এই সংযুক্তি তিনটি ব্যাঙ্কেরই আঞ্চলিক সম্প্রসারণের সহায়ক হবে। কারণ, দেশের অন্যান্য অংশের পাশাপাশি গুজরাতে ব্যাঙ্ক অব বরোদা এবং দেনা ব্যাঙ্কের বিশাল ব্যবসা রয়েছে। বিজয়া ব্যাঙ্ক দক্ষিণ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাঙ্ক।’’