পর পর দু’ বছর শূন্য।
রাজ্যে নির্মাণ শিল্পের ঝুলিতে এল না দেশি-বিদেশি প্রাইভেট ইকুইটি বা শেয়ারের বিনিময়ে বেসরকারি আর্থিক সংস্থার পুঁজি। বাধা সেই ভাবমূর্তি। সঙ্গে সমস্যা চাহিদায় টান।
২০১৬ সালে মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু-সহ দেশের বড় বড় শহরে নির্মাণ শিল্পে ৩১০ কোটি ডলার ঢেলেছে লগ্নিকারী বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা। টাকার হিসেবে তা প্রায় ২০,১৫০ কোটি টাকা। প্রত্যাশিত ভাবেই এই টাকার সিংহভাগ দখল করেছে মুম্বই। দিল্লি ও বেঙ্গালুরু দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে। পুণে টেক্কা দিয়েছে চেন্নাইকে। কম হলেও কিছু পুঁজি টেনেছে আমদাবাদ ও হায়দরাবাদ। নেই শুধু কলকাতা।
বিশেষজ্ঞ সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের সদ্য প্রকাশিত সমীক্ষা বলছে ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের তুলনায় প্রাইভেট ইকুইটি সংস্থার পুঁজি নির্মাণ শিল্পে বেশি। এখন তা দাঁড়িয়েছে ৬০%। যার মধ্যে ৭০% বিদেশি লগ্নি। সংস্থার মুখ্য অর্থনীতিবিদ স্যমন্তক দাস জানান, ভাবমূর্তির সমস্যার কারণেই এই লগ্নির ছিটেফোঁটাও কলকাতায় আসছে না।
কোথায় কত?
শহর ২০১৬ সালে লগ্নি*
•
মুম্বই ১১,০৮২.৫ (৫৫%)
•
কলকাতা ০ (০%)
•
বেঙ্গালরু ৪,০৩০ (২০%)
•
দিল্লি ১,৮১৩.৫ (৯%)
•
পুণে ১,০০৭.৫ (৫%)
•
চেন্নাই ৬০৪.৫ (৩%)
•
হায়দরাবাদ- সহ অন্যান্য ১,৬১২ (৮%)
মোট ২০,১৫০
* বেসরকারি আর্থিক সংস্থার। হিসেব কোটি টাকায়।
তথ্যসূত্র: নাইটফ্র্যাঙ্ক
তবে ভাবমূর্তির পাশাপাশি রয়েছে বাজারের অভাব। বিনিয়োগের টাকা উঠে আসার বিষয়ে অনিশ্চয়তাই লগ্নিকারীদের এ শহর থেকে সরিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন স্যমন্তকবাবু। বিশেষ করে রয়েছে অফিস তৈরির জায়গার চাহিদা তলানিতে এসে ঠেকা। তিনি বলেন, ‘‘তথ্যপ্রযুক্তি, উৎপাদন ও অন্যান্য শিল্প না-এলে বাজারে চাহিদা তৈরি হবে না। অধিকাংশ লগ্নিকারী দামি আবাসন ও অফিস প্রকল্পে টাকা ঢেলে নিশ্চিন্ত হন।’’ আর এখানেই কলকাতা মার খাচ্ছে। বেঙ্গালুরুতে বছরে গড়ে ১ কোটি বর্গ ফুটের বেশি অফিস তৈরির জায়গা বিক্রি হয়। মুম্বই ও দিল্লিতে এই সংখ্যা ৮০ লক্ষ বর্গ ফুটের কাছাকাছি। কলকাতায় এই সংখ্যা কোনও মতে ১০ লক্ষ বর্গ ফুট ছুঁয়ে যায়।
২০১৫ সালেও দেশের বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে ২৫,৬৮০ কোটি টাকা ঢালে বেসরকারি আর্থিক সংস্থাগুলি। ২০১৪-এর তুলনায় ৭২% বেশি। বিশেষজ্ঞ সংস্থা কুশম্যান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ডসের সমীক্ষায় উঠে আসে এই তথ্য। লাভবান হয় মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই ও হায়দরাবাদ। কলকাতা যে-তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই। আবাসন বা অফিস তৈরির জায়গা— কোনও ক্ষেত্রেই এই লগ্নিতে ভাগ বসাতে পারেনি কলকাতা। নির্মাণ শিল্পমহলের মতে, চাহিদার অনিশ্চয়তার কারণেই এ রাজ্যের প্রকল্পে পুঁজি ঢালতে আগ্রহ দেখায়নি দেশি-বিদেশি বড় বিনিয়োগ সংস্থা।