ফাইল ছবি
কাঁচামালের চড়া দরের জন্য ফ্ল্যাটের দাম গত বছরের শেষ থেকে ধাপে ধাপে বাড়াচ্ছে আবাসন শিল্প মহল। পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সম্প্রতি দু’দফায় সুদের হার বাড়ানোর পরে বাড়তে শুরু করেছে গৃহঋণের সুদ এবং সেই সূত্রে মাসিক কিস্তির খরচও। এই দুইয়ের প্রভাবে স্বল্প মেয়াদে ফ্ল্যাট-বাড়ির বাজার ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা স্পষ্ট হল বিভিন্ন উপদেষ্টা সংস্থার সাম্প্রতিক সমীক্ষায়। নাইটফ্র্যাঙ্ক ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুনে ফ্ল্যাট কেনার ক্রয়ক্ষমতা সূচক কমেছে সর্বত্র। আর অ্যানারকের দাবি, সাতটি শহরে জানুয়ারি-মার্চের তুলনায় এপ্রিল-জুনে বিক্রি কমেছে প্রায় ১৫%।
আবাসন শিল্পের দাবি ছিল, ঘরে থেকে কাজের পরিধি বাড়ছে বা সার্বিক অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে, তাই সব মিলিয়ে মাথা গোঁজার স্থায়ী ঠিকানা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। ফলে বিক্রি ততটা হয়তো ধাক্কা খাবে না। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। অন্য দিকে, মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে আনতে দু’দফায় ৯০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়িয়েছে আরবিআই। ফলে গৃহঋণের সুদও বৃদ্ধি পাওয়ায় চাপ বাড়ছে ক্রেতার উপরে। অ্যানারকের চেয়ারম্যান অনুজ পুরীর মতে, এই দুই বিষয় ফ্ল্যাট কেনার সার্বিক খরচকে ঠেলে তোলায় বিক্রি ধাক্কা খেয়েছে। নাইট ফ্র্যাঙ্কের সিএমডি শিশির বৈজল জানাচ্ছেন, গৃহঋণের সুদ বাড়ায় বড় শহরগুলিতে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষমতা গড়ে ২০০-৩০০ বেসিস পয়েন্ট পড়েছে।
অ্যানারকের হিসাব বলছে, কলকাতা-সহ সাত শহরে এপ্রিল-জুনে ২০২১ সালের একই সময়ের চেয়ে বিক্রি সাড়ে তিন গুণ বেড়েছে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য গত বছর বিক্রি এমনিতেই কম ছিল। বরং এ বারের জানুয়ারি-মার্চের তুলনায় গত ত্রৈমাসিকে বিক্রি ওই সব শহরে কমেছে ১৫%। কলকাতায় কমেছে ২০%। তাদের হিসাবে, সেখানে গত ত্রৈমাসিকে ফ্ল্যাট-বাড়ির দাম ত্রৈমাসিকের নিরিখে বেড়েছে ২%-৩%। বার্ষিক হিসাবে বৃদ্ধি ৪%-৭%।
আয়ের সাপেক্ষে কিস্তির খরচের প্রেক্ষিতে ফ্ল্যাট-বাড়ির ক্রয়ক্ষমতা সূচক মাপে নাইট ফ্যাঙ্ক। তারা বলছে, কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি ও রাজধানী সংলগ্ন অঞ্চল, বেঙ্গালুরু, পুণে, চেন্নাই, হায়দরাবাদ ও আমদাবাদ— এই আট শহরেই ২০২১ সালের চেয়ে এ বছর জানুয়ারি-জুনে সেই খরচ বেড়েছে। কলকাতায় তা গত বছরের ২৫% থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭%। ২০২০ সালে ছিল ৩০%। খরচ সব চেয়ে কম আমদাবাদে, ২২%। আর আয়ের তুলনায় কিস্তির খরচ সব চেয়ে বেশি মুম্বইয়ে, ৫৬%।
তবে শিশিরের দাবি, এখনও ফ্ল্যাটের দাম সাধ্যের মধ্যে রয়েছে। শিল্পের আশা, নিজের বাড়ির চাহিদা বাজারে সদর্থক প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি আর্থিক বৃদ্ধির হাত ধরেও আগামী দিনে বজায় থাকবে চাহিদা।