ফাইল চিত্র।
আশঙ্কা ছিল গৃহস্থের রান্নাঘরের উত্তাপ বাড়ার। কিন্তু মাথায় হাত পড়ল হোটেল-রেস্তরাঁ ব্যবসায়ীদের!
আজ, সোমবার নভেম্বরের শুরু থেকেই সারা দেশে বিপুল হারে বাড়তে চলেছে ১৯ কেজি ওজনের বাণিজ্যিক রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম। কলকাতায় তা ১৮০৩ টাকা থেকে ২৭০.৫০ টাকা বেড়ে হচ্ছে ২০৭৩.৫০ টাকা। অর্থাৎ, হোটেল-রেস্তরাঁয় রান্নার জ্বালানির দাম শহরে এক ধাক্কায় বেড়ে যাচ্ছে ১৫%। গৃহস্থের ব্যবহারের ১৪.২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম অবশ্য একই থাকছে। কলকাতায় তার জন্য দিতে হবে ৯২৬ টাকা।
ওয়াকিবহাল মহলের অবশ্য বক্তব্য, রান্নাঘরের জ্বালানির খরচ বৃদ্ধি না-হওয়া সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে এ কথা হলফ করে বলার সময় আসেনি। একটা সময়ে গ্যাসের দাম মাসে দু’বার ঠিক করা হত। শুরুতে এবং মাঝামাঝি। কিন্তু গত ডিসেম্বর থেকে একাধিক বার এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। যেমন, শেষ বার ১ অক্টোবর দাম না-বাড়লেও ছ’দিনের মাথায় বেড়েছিল ১৪.২ কেজির সিলিন্ডারের দর। অনেকের আবার ব্যাখ্যা, পরের বছরের গোড়ায় উত্তরপ্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্যের বিধানসভা ভোট। তার আগে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। এই অবস্থায় গৃহস্থের গ্যাসের দামে হয়তো সাময়িক বিরতি দিয়ে চাপ বাড়ানো হল হোটেল-রেস্তরাঁর উপরে। সে ক্ষেত্রে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে, নির্বাচন মিটে গেলেই কি মাথাচাড়া দেবে ১৪.২ কেজির সিলিন্ডারের দাম। একাধিক ভোটের সময়ে ঠিক যা ঘটেছিল পরিবহণ জ্বালানির ক্ষেত্রে!
করোনা আটকাতে লকডাউনের জেরে যে সমস্ত ক্ষেত্রের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিল আতিথেয়তা শিল্প। কাজ খুইয়েছিলেন বহু মানুষ। লকডাউন শিথিল হওয়ার পর ধীরে ধীরে চালু হতে থাকে হোটেল-রেস্তরাঁয় বসে খাওয়ার পরিষেবা। উৎসবের মরসুমকে কাজে লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশাও দেখছিল তাদের একাংশ। কিন্তু তার পর থেকে একাধিকবার বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দর বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের গোড়ায় পণ্যটির দাম ৭৩.৫০ টাকা বাড়ানো হয়। এ দফায় বাড়ল ২৭০.৫০ টাকা। গত ডিসেম্বর থেকে হিসাব কষলে বেড়েছে ৭২২.৫০ টাকা। ফলে হোটেল-রেস্তরাঁর ব্যবসায় চাপ আরও বাড়ল। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের বক্তব্য, এই দাম বৃদ্ধির একাংশ ক্রেতার বিলে চাপানো ছাড়া উপায় থাকবে না।
এলপিজির মূল উপাদান প্রোপেন, বুটেনের দাম অনেক দিন ধরেই বাড়ছে। গ্যাসের দাম বেড়েছে বিশ্ব বাজারেও। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধি কার্যত অবশ্যম্ভাবীই ছিল। তবে প্রশ্ন ছিল, সেই পথে না হেঁটে সরকার ভর্তুকি বাড়াবে কি না। বিশেষত যখন তা প্রায় শূন্যে নামানো হয়েছে। বাস্তবে দেখা গেল মানুষের উপরে চাপটা আসছে ঘুরপথে। বাণিজ্যিক গ্যাসের মাধ্যমে।