উদ্যোগ: এখানেই প্রকল্প তৈরি হওয়ার কথা। ছবি: সুজিত দুয়ারি
প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল উত্তোলনের জন্য অশোকনগরে চার একর জমিতে গত দেড় বছর ধরে সমীক্ষা চালাচ্ছিল ওএনজিসি। এ বার বাণিজ্যিক ভাবে প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য তারা ১২ একর জমি চেয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কাছে।
জমি পেতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় বলেই মনে করছেন অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর কর্তৃপক্ষ। কারণ, জমিটি রাজ্য উদ্বাস্তু ও শ্রেণিকল্যাণ দফতরের হাতে। মূলত জলা-জংলা এলাকা। কিছু অংশে কয়েক জন চাষি বছরে এক বার চাষবাস করেন। পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘জমিটি সরকারি। ফলে তা পেতে সমস্যা হবে না বলেই মনে হয়।’’
সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ পুরপ্রধানের সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রবোধবাবু জানান, জমিটি তাঁরা দেখভাল করলেও ওএনজিসির হাতে তুলে দেওয়ার এক্তিয়ার তাঁদের নেই। তবে ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র তাঁরা ওএনজিসিকে দিয়ে দিয়েছেন। দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘ওএনজিসি ১২ একর জমি চেয়েছে। জমি চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। এ বার রাজ্য সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।’’ প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই এলাকায় রাজ্য সরকার একটি ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করছে। সেই অংশটি বাদ দিয়ে বাকি জমি চিহ্নিত করে ম্যাপ তৈরি হয়েছে। প্রকল্প এলাকাটি কাঁটাতারে ঘেরা। নতুন করে যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে ইটের রাস্তা।
গত বছর মার্চ থেকে অশোকনগরের হাবরা-নৈহাটি সড়কের পাশে বাইগাছি মৌজায় প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল খোঁজার জন্য পরীক্ষা চালাচ্ছিল ওএনজিসি। সেখানে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে এলাকার অর্থনীতির ভোল বদলে যাবে বলে মনে করছেন অশোকনগরের মানুষ। হবে বহু কর্মসংস্থান। প্রবোধবাবুর বক্তব্য, ‘‘এখানে গ্যাস ও তেল উত্তোলনের প্ল্যান্ট তৈরি হলে মানুষের আর্থিক উন্নতি ঘটবে।’’
অতীতে রাজ্যের শিল্প-মানচিত্রে অশোকনগরের নামডাক ছিল। স্বাধীনতার পরে বেশ কিছু কল-কারখানা গড়ে উঠেছিল। চুন তৈরির কারখানা ‘রাধা কেমিক্যালস’ ছিল। এখন বন্ধ। কাপড় বোনা, কাঠের আসবাবপত্র তৈরি, সিল্কের শাড়ি তৈরির কারখানা ‘রিহ্যাবিলিটেশন ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল কর্পোরেশন’ বছর কুড়ি আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কয়েকশো উদ্বাস্তু মহিলা সেখানে কাজ করতেন। বিধানচন্দ্র রায়ের আমলের কল্যাণী স্পিনিং মিলেও উৎপাদন বন্ধ। পরবর্তী সময়ে অন্য কল-কারখানাগুলিও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। শোলার মুকুট, গয়নার বাক্স তৈরির মতো কয়েকটি ক্ষুদ্র শিল্প টিমটিম করে জ্বলছে।