দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও গতি আনতে ২০৩০ সালের মধ্যেই প্যারিসের রাস্তায় পেট্রোল, ডিজেলের সমস্ত গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারির পরিকল্পনা করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যার অর্থ, সব কিছু ঠিকঠাক চললে ১৩ বছরের মধ্যেই ফ্রান্সের রাজধানী থেকে অদৃশ্য হবে দূষণ ছড়ানো যানবাহন। দেখা মিলবে শুধু বৈদ্যুতিক গাড়ির। শুধুই দূষণমুক্ত গাড়ি চালানোর লক্ষ্য ছোঁয়ার ক্ষেত্রে গোটা ফ্রান্সের সময়সীমা ২০৪০ সাল।
বিশ্ব জুড়ে উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে ভারত, ফ্রান্স, ব্রিটেন, নরওয়ের মতো বহু দেশই সাম্প্রতিক কালে পেট্রোল-ডিজেলের পাট চোকাতে কোমর বেঁধেছে। কমপক্ষে ১০টি দেশ ইতিমধ্যেই আরও বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে।
ভারতের রাস্তায় ২০৩০ সাল থেকেই শুধুমাত্র বিকল্প জ্বালানির গাড়ি চালানোর ভাবনার কথা আগেই জানিয়েছে কেন্দ্র। সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বিকল্প জ্বালানির কথা ভাবতেই হবে গাড়ি শিল্পকে। তারা সেটা পছন্দ করুক বা না-করুক। ব্রিটেন লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ২০৪০ সালকে। নরওয়ে বলেছে, ২০২৫-এ সেখানে বিক্রি হওয়া সব নতুন যাত্রী গাড়ি ও ভ্যানে কার্বন নির্গমন দাঁড়াবে শূন্যে। আমেরিকার পরে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষণকারী দেশ চিন সম্প্রতি জানিয়েছে, তারাও দ্রুত এই সব ইঞ্জিনের গাড়ি থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, এই দেশ ইতিমধ্যেই বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ির সবচেয়ে বড় বাজার।
আর সম্প্রতি প্যারিসে মেয়রের দফতর প্যারিস সিটি হলের তরফে দাবি, ফরাসি সরকার ইতিমধ্যেই ফ্রান্সকে পেট্রোলিয়াম জ্বালানির কবল থেকে বার করতে সময় বেঁধেছে ২০৪০ সাল। তবে তার জন্য সেখানকার বড় শহরগুলিকে আরও আগে তাদের রাস্তা বদলাতে হবে। যে কারণে প্যারিস ২০৩০ সালেই সেই লক্ষ্য পূরণ করতে চাইছে।
প্যারিসে যানবাহন নীতি সংক্রান্ত ক্ষেত্রের আধিকারিকের দাবি, গাড়ি থেকেই সবচেয়ে বেশি দূষণ ছড়ায়। তাই কার্বন নির্গমন কমাতে এই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা তাঁদের। তবে সমস্ত ডিজেল গাড়ি বাতিল হতে পারে আরও আগে, ২০২৪ সালের মধ্যেই। কারণ, ওই বছরের গ্রীষ্মেই অলিম্পিক গেমসের আসর বসবে সেখানে।
প্যারিস অবশ্য পেট্রোল-ডিজেলের গাড়িতে রাশ টানার প্রক্রিয়া শুরু করেছে আরও অনেক আগেই। ইতিমধ্যেই প্যারিস সিটি হলে গাড়ি রাখা যায় না। শহরে পালিত হয় গাড়ি-মুক্ত দিন। ২০ বছরেরও বেশি পুরনো গাড়ি রাস্তায় নামালেই জরিমানা দিতে হয়। সে শহরের বহু নাগরিকের নিজস্ব চার চাকাও নেই। তাঁরা বেশির ভাগ সময়ে সাধারণ যানবাহনে চড়ে যাতায়াত করেন। যে কারণে সেখানে বাইক, স্কুটার এবং কম দূষণের হাইব্রিড (যা প্রথাগত জ্বালানি ও ব্যাটারি, দু’টিতেই চলে) গাড়ি ভাড়া দেওয়ার চল দ্রুত বাড়ছে।