প্রতীকী ছবি।
তেল রফতানিকারী দেশগুলির সংগঠন ওপেক এবং রাশিয়া-সহ তাদের সহযোগী দেশগুলি (সব মিলিয়ে যারা ওপেক প্লাস নামে পরিচিত) শেষ পর্যন্ত উৎপাদন আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, জিনিসপত্রের আগুন দামের বাজারে এই সিদ্ধান্তের দিকেই এত দিন তাকিয়ে ছিল সারা বিশ্ব। ওপেক প্লাসের নতুন সিদ্ধান্ত সবার কাছেই স্বস্তির বার্তা।
অতিমারির আক্রমণে সারা বিশ্ব যখন মন্দার খাদে পড়েছিল, তখন মাথা নামিয়েছিল তেলের চাহিদাও। সেই সময়েই উৎপাদন কমিয়েছিল ওপেক ও সহযোগী দেশগুলি। পরে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদন বাড়ায়নি তারা। এমনকি, আমেরিকার অনুরোধ ও সতর্কবার্তা সত্ত্বেও প্রত্যেক মাসে দৈনিক ৪,৩২,০০০ ব্যারেলের বেশি উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে রাজি হয়নি সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন দেশগুলি। কিন্তু রাশিয়ার উপর আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা চাপানোয় প্রতিশ্রুত সেই সরবরাহও ব্যাহত হচ্ছিল। এরই মধ্যে মঙ্গলবার রাশিয়ার থেকে এক ধাক্কায় অনেকটা তেল কেনা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরো গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি। যা জ্বালানির সরবরাহে আরও সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। এই অবস্থায় ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্ত কিছুটা হলেও কমাল সারা বিশ্বের উদ্বেগ। জুলাই এবং অগস্টে দৈনিক ৬,৪৮,০০০ ব্যারেল উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই গোষ্ঠী।
কোভিডের উপর্যুপরি ঢেউ পার করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল বিশ্ব অর্থনীতি। কিন্তু তাকে ফের ধাক্কা দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জোগান শৃঙ্খলের বিঘ্নিত হওয়া। অশোধিত তেলের সরবরাহ কমার পাশাপাশি, তার দামও বেড়েছে। যার ফলে সারা বিশ্বে মাথা তুলেছে মূল্যবৃদ্ধির দৈত্য। তাকে ঠেকাতে সুদ বাড়াচ্ছে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক। ফলে বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আইএমএফ-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে আমেরিকায় তেলের দর নতুন রেকর্ড গড়েছে। বছরের শুরু থেকে হিসাব কষলে পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনীতিতে তা বেড়েছে ৫৪%। যা সারা বিশ্বের কাছেই অশনি সঙ্কেত। বিশেষজ্ঞেরা বলছিলেন, এই অবস্থায় মূল্যবৃদ্ধিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে একমাত্র তেলের দর মাথা নামানোই। আর সে ক্ষেত্রে ওই পণ্যটির সরবরাহও বাড়াতে হবে। যদিও এত দিন সে ব্যাপারে তেল উৎপাদনকারীরা অনমনীয়ই ছিল।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসে ওপেক প্লাস। পূর্বের পরিকল্পনার তুলনায় আগেই যে উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হতে পারে, এমন আভাস তৈরি হচ্ছিল আগে থেকেই। যার ফলে ব্যারেল প্রতি ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১২০ ডলার থেকে ১১৭ ডলারে নেমে আসে। তার পরেই উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন দেশগুলি।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।