সুপ্রিম কোর্টে জিত টেলিকম শিল্পের। সর্বোচ্চ আদালত বুধবার সাফ জানিয়ে দিল, মোবাইলে কথা বলার সময়ে মাঝপথে ফোন কেটে যাওয়ার (কল ড্রপ) জন্য টেলিকম সংস্থাগুলিকে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। টেলিকম শিল্পকে ওই জরিমানা দিতে হবে না।
গত বছর থেকে দেশের বিভিন্ন অংশেই কল-ড্রপ সমস্যা মাথাচাড়া দেয়। অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, প্রায় সব সংস্থার গ্রাহকদেরই মোবাইল ফোনে কথা বলতে গিয়ে নাকানিচোবানি খাওয়ার দশা হয়। এমনকী টেলিকম শিল্পের কর্তারাও তার প্রকোপ থেকে বাদ পড়েননি। পরিষেবা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানান কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদও। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন সংস্থাই তাদের গ্রাহকদের মাসুল হার প্রতি মিনিটের বদলে প্রতি সেকেন্ডে হিসেব করতে শুরু করে, যাতে মাঝপথে ফোন কেটে গেলেও পুরো মিনিটের মাসুল গ্রাহককে দিতে না-হয়।
অভিযোগ ওঠে, টেলিকম শিল্পমহল ব্যবসা চালালেও প্রয়োজন মতো পরিকাঠামো গড়েনি। যদিও টেলিকম শিল্পের পাল্টা দাবি ছিল, এই পরিষেবার অন্যতম জরুরি অঙ্গ টাওয়ার। আর, তা বসাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। পাশাপাশি, স্পেকট্রামের অপ্রতুলতার মতো বেশ কিছু বিষয়ের দায় তাদের নয়। এই চাপান-উতোরের মধ্যেই সাত মাস আগে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ট্রাই) নির্দেশ দেয়, কল-ড্রপের জন্য গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট টেলিকম সংস্থাকে। প্রতিটি কল কাটার জন্য জরিমানা হবে এক টাকা করে। দৈনিক একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ তিনটি কল-ড্রপের জন্য এই ক্ষতিপূরণ পাবেন। গত জানুয়ারিত থেকেই এই নিয়ম চালু হওয়ার কথা ছিল।
বিষয়টি গড়ায় দিল্লি হাইকোর্টে। সেখানে ট্রাই-এর জয় হলে ফের সুপ্রিম কোর্টে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা করে টেলিকম শিল্পের সংগঠন সেলুলার অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সিওএআই) এবং ২১টি সংস্থা। সেই মামলাতেই আজ সুপ্রিম কোর্ট ট্রাই-এর সিদ্ধান্তকে খারিজ করে দিয়েছে। বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ এবং বিচারপতি আরএফ নরিম্যান-এর বেঞ্চ বুধবার বলেছে, ‘‘ওই নিয়ম একতরফা, অযৌক্তিক এবং অস্বচ্ছ।’’ এ ব্যাপারে ট্রাই চেয়ারম্যান আর এস শর্মার সঙ্গে চেষ্টা করেও ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।
গত কয়েক মাস ধরেই সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি চলছিল। ট্রাই-এর অভিযোগ ছিল, টেলিকম সংস্থাগুলি দৈনিক প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ব্যবসা করলেও পরিকাঠামোয় লগ্নি করছে না। তাই দেশের বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের স্বার্থের কথা ভেবেই তারা জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্য দিকে, টেলিকম শিল্পের দাবি ছিল, তাদের ঘাড়ে বিপুল আর্থিক বোঝা। তার উপর স্পেকট্রাম কেনার জন্যও তাদের প্রচুর টাকা খরচ হচ্ছে। তাই কল-ড্রপের পুরো দায়টা তাদের উপর চাপিয়ে জরিমানা
আরোপ করা ঠিক নয়।
বিষয়টি ট্রাই-এর নির্দেশ সংক্রান্ত। তাই কোনও মন্তব্য করতে চাননি রবিশঙ্কর প্রসাদ। তবে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা টেলিকম সংস্থাগুলিকে উন্নত পরিষেবা দিতে বলব। টেলিকম সংস্থাগুলি যখন দেশের প্রতিটি কোণে পৌঁছতে পারে, তখন কেন তারা পরিষেবা উন্নত করতে পারবে না?’’
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি টেলিকম শিল্প। সিওএআই এবং এই শিল্পের আর একটি সংগঠন এইউএসপিআই যৌথ বিবৃতিতে আদালতের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে তাদের বক্তব্য, গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন ও সঠিক পরিষেবা পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ট্রাই-এর উদ্বেগের মতোই তারাও পরিষেবা উন্নত করতে সচেষ্ট। এবং সঠিক সময়ে টাওয়ার বসানো বা সঠিক দামে স্পেকট্রাম না-পাওয়ার মতো যে-সব কারণে এই পরিষেবা ব্যাহত হয়, ট্রাই-এর সঙ্গে বসে সেই সব বিষয়ে সমাধানের পথ বার করার কথা জানিয়েছে তারা। এ দিনও তাদের দাবি, গত ১৫ মাসে তারা দেশে জুড়ে প্রায় ২ লক্ষ টাওয়ার বসিয়েছে।
বস্তুত, দিল্লির বহু সরকারি ভবনে টাওয়ার বসাতে বাধা পাওয়ার অভিযোগ ছিল টেলিকম শিল্পের। এ দিন আলাদা একটি সাংবাদিক বৈঠকে ভোডাফোনের সিইও সুনীল সুদও সে কথা উল্লেখ করে জানান, গত কয়েক মাসে দিল্লির সরকারি ভবনে টাওয়ার বসানোর সুযোগ মিলেছে। তাঁরও দাবি, তাঁরা দিল্লি ও মুম্বইয়ে পরিকাঠামো উন্নয়নে গত এক বছরে যথাক্রমে ১০০০ ও ১২০০ কোটি টাকা লগ্নি করেছেন। ফলে কল-ড্রপ কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। তেমনই এই সংক্রান্ত অভিযোগও কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ।