প্রতীকী চিত্র।
পোশাক, পর্দা, গৃহসজ্জার উপকরণ বা চটের ব্যাগ তৈরির মূল উপাদান ‘ফেব্রিক’ বা কাপড় মূলত বাইরে থেকে এনে রাজ্যে ওই পণ্য তৈরি করে বস্ত্র শিল্প। সরকারের দাবি, উন্নত মানের যন্ত্রচালিত তাঁত (পাওয়ারলুম) ব্যবস্থা এখানে অপ্রতুল বলেই এ ভাবে কাজ করতে হয় তাদের। সে জন্য ওই পরিকাঠামো গড়তে এ বার আর্থিক উৎসাহ নীতি (পাওয়ারলুম ইনসেন্টিভ পলিসি) আনা হয়েছে। যার আওতায় পরের বছর থেকে নতুন যন্ত্রচালিত তাঁত তৈরির জন্য সাহায্য করা হবে পাওয়ারলুম সংস্থাকে। প্রথম ২০০০টি তাঁতের ক্ষেত্রে এই সুবিধা মিলবে। বৃহস্পতিবার মার্চেন্টস চেম্বারের বার্ষিক সভায় ওই নীতির কথা জানান রাজ্যের ছোট শিল্প (এমএসএমই) দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ।
এ দিন ওই সভায় শিল্প তথা তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ফের বার্তা দেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বাড়ানো। সেই সূত্রে সহজে ব্যবসার ছাড়পত্র, ডেটা সেন্টার নীতি-সহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নিচ্ছেন তাঁরা।
গত এক দশকে ছোট শিল্পের সাফল্য তুলে ধরে চন্দ্রনাথ জানান, আপাতত সরকারি নিয়ম মেনে যে সব পাওয়ারলুম সংস্থা ফেব্রিক বানাতে চাইবে, তন্তুজ তাদের সুতো জোগাবে এবং শেষে সেই কাপড়ও কিনবে। এই ‘বাই ব্যাক’ চুক্তি হবে সংস্থা, তন্তুজ, ছোট শিল্প দফতরের অধীন বস্ত্র ডিরেক্টরেট এবং ব্যাঙ্কের মধ্যে। চুক্তি করলে সংস্থার নতুন পাওয়ারলুম বসানোর খরচের ২০% আর্থিক সাহায্য-সহ আরও কিছু সুবিধা দেবে রাজ্য। ঋণ মিলবে ব্যাঙ্ক থেকেও। মন্ত্রী বলেন, এর পাশাপাশি রাজ্যকে ফেব্রিক উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে তাঁরা কয়েকটি ‘ইন্টিগ্রেটেড টেক্সটাইল পার্ক’ তৈরিতেও সাহায্য করতে আগ্রহী। কল্যাণীতে ৪৩ একর জায়গায় এমন একটি পার্ক গড়তে শিল্পের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এমএসএমই দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে কয়েক লক্ষ হস্তচালিত তাঁত (হ্যান্ডলুম) থাকলেও পাওয়ারলুম ১২-১৪ হাজার। কিন্তু সেগুলি ততটা আধুনিক নয় বলে কাপড়ে মানও উন্নত পণ্য তৈরির উপযোগী নয়। নতুন নীতিতে সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলগুলির (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) প্রায় ৯০ লক্ষ পড়ুয়ার স্কুলের পোশাক তৈরির জন্য কাপড় এই পাওয়ারলুমগুলির থেকে কিনবে তন্তুজ। ফলে শুরুতেই সংস্থাগুলি নিশ্চিত ব্যবসা পাবে। সেই ভিতের উপর দাঁড়িয়ে পরে বাজারের চাহিদা মতোও কাপড় তৈরি করতে পারবে তারা। এই ভাবনাকে স্বাগত জানিয়ে মার্চেন্টস চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ঋষভ কোঠারি বলেন, নতুন নীতিতে বাজার ধরার সুবিধা গোড়াতেই পাবে পাওয়ারলুমগুলি। এতে রফতানির পথ বেশি করে খুলবে জানিয়েও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রমেশ আগরওয়ালের মত, বস্ত্র শিল্পকে পুরো সুবিধা পেতে হলে সুতো তৈরি থেকে ফেব্রিক এবং তা দিয়ে পোশাক-সহ নানা পণ্য তৈরির পুরো শৃঙ্খল তৈরি করা জরুরি।