রাজনীতির ময়দান পেরিয়ে মোদী ঝড় শেয়ার বাজারে।
ভোট বাক্সে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের জনগণের নরেন্দ্র মোদীর প্রতি উপচে পড়া সমর্থন প্রত্যাশিত ভাবেই ছড়িয়ে পড়ল শেয়ার বাজারে। হোলির ছুটির পরে বাজার খোলার দিনেই। টানা তিন দিন বন্ধ থাকার পরে মঙ্গলবারই খোলে মূলধনী বাজার। আর, এ দিনই ঝড়ের গতিতে উঠে ২.১ শতাংশ বেড়ে ৯,১২২.৭৫ পয়েন্ট ছুঁয়ে ইতিহাস গড়ল ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফ্টি। পাশাপাশি, বিএসই সূচক সেনসেক্স এক সময়ে ৬১৫.৭০ পয়েন্ট বেড়ে পেরিয়ে যায় ২৯,৫০০। বিধানসভা ভোটের ফল ইন্ধন জুগিয়েছে ভারতীয় টাকাকেও। টাকা আরও বাড়বে, এই প্রত্যাশায় ফাটকা কারবারিদের ডলার বিক্রির জেরেই চড়তে থাকে টাকার দর। রফতানিকারীদের তরফে ডলার বিক্রি তাতে আরও গতি জোগায়। ফলে দুপুরের দিকেই ডলারে টাকার দাম ছুঁয়ে ফেলে ৬৫.৭৬ টাকা। দিনের শেষে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৫.৮২ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় ৭৮ পয়সা বেশি। গত ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর ৬৫.৭৬ টাকায় থেমেছিল ডলার। তার পর থেকে এটাই টাকার সর্বোচ্চ দর।
এ দিন বাজার বন্ধ হওয়ার আগেই জানা যায় পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি ৬.৫৫% ছোঁয়ার খবর। কিন্তু সেই পরিসংখ্যানও উদ্বেগ ছড়ায়নি শেয়ার বাজারে। ভোটের ফলই আস্থা জোগায় লগ্নিকারীদের। তবে এই জাদু-প্রভাব বাজার কত দিন ধরে রাখতে পারবে, তা নিয়ে কিছুটা সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের অনেকের মতে বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক ফলাফল এবং ভারতের অর্থনীতির ভিত কতটা শক্তিশালী, তা-ই ঠিক করবে শেয়ার বাজার ও টাকার দামের গতিবিধি।
নিফ্টি এ দিন বাজার বন্ধের সময়ে ১৫২.৪৫ পয়েন্ট উঠে থামে ৯,০৮৭ পয়েন্টে, এর আগে যার নজির নেই। সেনসেক্স ৪৯৬.৪০ পয়েন্ট বেড়ে বন্ধ হয় ২৯,৪৪২.৬৩ অঙ্কে। ভারতের শেয়ার বাজারের দুই প্রধান সূচকই দিনের শেষে বেড়েছে ১.৭১% করে।
যে-সব কারণে এ দিন লগ্নিকারীদের মধ্যে শেয়ার কেনার হিড়িক চোখে পড়ে, সেগুলি হল:
১) বিরোধী শিবিরে ধস নামিয়ে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে বিজেপি-র ভোটযুদ্ধ জয়কে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে দিল্লির মসনদে নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতায় ফিরে আসার ইঙ্গিত হিসেবেই ধরছে বাজার ২) রাজনৈতিক স্থিতি আর্থিক সংস্কারের পালে নতুন করে বাতাস জোগাবে বলেই তারা আশাবাদী ৩) রাজ্যসভায় বিজেপি-র জোর বাড়লে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করাতেও সুবিধা হবে ৪) বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলিও ভারতের বাজারে নতুন উদ্যম নিয়ে ফিরে আসবে বলে আশা বাজারের ৫) ভারতের বাজার ঘিরে আশা বাড়ছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিরও। তারা আরও বড় আকারে লগ্নি শুরু করলে শেয়ারের পাশাপাশি প্রাণ ফিরে পাবে ভারতীয় টাকা। কারণ, ডলার ভাঙিয়ে টাকায় রূপান্তরিত করেই ভারতের বাজারে শেয়ার কেনে তারা। ৬) টাকা আরও চাঙ্গা হওয়ার আশাতেই এ দিন ফাটকা কারবারিরা ডলার বেচে টাকা কিনতে শুরু করলে এতটা উচ্চতায় ওঠে ভারতীয় মুদ্রা।