এক ধাক্কায় পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার

মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানান, বিপিসিএল, শিপিং কর্পোরেশনের যত শেয়ার সরকারের হাতে রয়েছে, তার সবটাই বেসরকারি সংস্থাকে বেচে দেওয়া হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:০৬
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে নির্মলা সীতারামন। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

সরকারের হাতে নয় পাঁচ সংস্থা। জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।

Advertisement

বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভারত পেট্রোলিয়াম (বিপিসিএল), কনটেনার কর্পোরেশন (কনকর), শিপিং কর্পোরেশন, নিপকো ও টিহরি জল বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম (টিএইচডিসিএল)— এই পাঁচটি সংস্থার শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনটি সংস্থার নিয়ন্ত্রণ আর সরকারের হাতে থাকবে না। বাকি দু’টির ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হবে অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার হাতে।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানান, বিপিসিএল, শিপিং কর্পোরেশনের যত শেয়ার সরকারের হাতে রয়েছে, তার সবটাই বেসরকারি সংস্থাকে বেচে দেওয়া হবে। তবে বিপিসিএল-এর হাতে থাকা অসমের নুমালিগড় রিফাইনারির বেসরকারিকরণ হবে না। সেটি সরকার বা অন্য কোনও তেল সংস্থা কিনে নেবে।

Advertisement

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত

পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ। রাখা হবে না নিয়ন্ত্রণও। বাছাই করা কিছু সংস্থায় সরকারি অংশীদারি ৫১%-র নীচে আনা হবে। সরকারি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আলাদা ভাবে ঠিক হবে।

ভারত পেট্রোলিয়াম (বিপিসিএল)
• সরকারের শেয়ার ৫৩.২৯ শতাংশ। পুরো শেয়ার বেচে দেওয়া হবে, ছেড়ে দেওয়া হবে সরকারি নিয়ন্ত্রণ।
• বিপিসিএল-এর মালিকানাধীন অসমের নুমালিগড় রিফাইনারি সরকার বা অন্য কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কিনে নেবে।
শিপিং কর্পোরেশন (এসসিআই)
• সরকারের শেয়ার ৬৩.৭৫ শতাংশ। পুরো শেয়ার বেচে দেওয়া হবে, ছেড়ে দেওয়া হবে সরকারি নিয়ন্ত্রণ।
কন্টেনার কর্পোরেশন (কনকর)
• সরকারের শেয়ার ৫৪.৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৩০.৮ শতাংশ শেয়ার বেচে দেওয়া হবে। ছেড়ে দেওয়া হবে সরকারি নিয়ন্ত্রণ
টিহরি হাইড্রো ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (টিএইচডিসিআইএল)
• সরকারের ৭৪.২৩ শতাংশ শেয়ার ও নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসি-র হাতে তুলে দেওয়া হবে।
নিপকো
• সরকারের ১০০ শতাংশ শেয়ার ও নিয়ন্ত্রণ এনটিপিসি-র হাতে তুলে দেওয়া হবে।
জাতীয় সড়ক
• জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)-এর ৭৫টি সড়ক প্রকল্প ‘টোল অপারেট ট্রান্সফার’-এর ভিত্তিতে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে। এত দিন শর্ত ছিল, অন্তত দু’বছর টোল আদায় সরকারি হাতে রাখতে হবে। তা কমে এক বছর হচ্ছে।

কনকরের ক্ষেত্রে সমস্ত সরকারি শেয়ার বেসরকারি হাতে দেওয়া না হলেও সংস্থার নিয়ন্ত্রণ সরকারি হাতে থাকবে না। নিপকো ও টিহরি-র শেয়ার অবশ্য বেসরকারি সংস্থাকে বিক্রি করা হবে না। সংস্থা দু’টির মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসি-র হাতে।

পাশাপাশি ৭৫টি জাতীয় সড়ক প্রকল্পও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। এক বছর আগে চালু হওয়া সড়ক প্রকল্পও এর মধ্যে থাকবে।

ভবিষ্যতে আরও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণের পথ প্রশস্ত করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আর্থিক বিষয়ক কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় সরকারের অংশীদারি ৫১ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনা হবে। নীতি আয়োগ আগেই বিলগ্নিকরণের জন্য ২৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বাছাই করেছে। সংস্থার নিয়ন্ত্রণ সরকারি হাতে রাখা হবে কি না, তা আলাদা ভাবে ঠিক হবে।

আরও পড়ুন: বেআইনি টাকা জমাতে ভরসা দু’হাজারের নোট!

কেন এক ধাক্কায় এতটা বিলগ্নিকরণের পথে হাঁটছে কেন্দ্র? অর্থ মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি চাঙ্গা করতে হবে। তার জন্য কর্পোরেট কর কমানো হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি লগ্নি আসছে না বলে সরকারি খরচ বাড়ানো প্রয়োজন। ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রেখে সরকারি খরচ বাড়াতে হলে কোষাগারে টাকার জোগান বাড়ানো দরকার। কিন্তু অর্থনীতির ঝিমুনির সঙ্গে আয়কর, জিএসটি আদায়ও কমতে শুরু করেছে। বাজেটে চলতি বছরে বিলগ্নিকরণ থেকে ১ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকা তোলার লক্ষ্য নিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু অর্থ বছরের ছ’মাস কেটে গেলেও মাত্র ১৭ হাজার কোটি টাকা এসেছে। আজকের সিদ্ধান্তের পরে সেই লক্ষ্য ছাপিয়ে যাবে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রক।

কিন্তু অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন, আজ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে কোষাগারে টাকা আসতে পারে। আগামিকাল কী হবে? বিশেষত বিপিসিএলের মতো লাভজনক সংস্থা বেচে দেওয়াকে, সংসার চালাতে সোনা বেচে দেওয়া হিসেবেই দেখছেন বিরোধী নেতারা। ২০১৮-১৯ সালে বিপিসিএল প্রায় ৭৮০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।

অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের আশা, বিপিসিএল বেচে সরকারের ঘরে অন্তত ৬০ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে। অর্থমন্ত্রী আগেই ঘোষণা করেছেন, ২০২০-র মার্চের মধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়া এবং বিপিসিএল বেচে দেওয়া হবে। তবে সমস্ত সরকারি প্রক্রিয়া মেনে এত কম সময়ে তা সম্ভব হবে কি না, সেই প্রশ্ন থাকছে।

অর্থ মন্ত্রকের বিলগ্নিকরণ দফতরের বক্তব্য, রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ, শেল, সৌদি অ্যারামকো, কুয়েত পেট্রোলিয়াম, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম, এক্সন-এর মতো বিদেশি তেল সংস্থা বিপিসিএল কিনতে আগ্রহী হতে পারে। নরেন্দ্র মোদী আমেরিকার হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’ করে ফিরেছেন। বিপিসিএল বিক্রির জন্য হিউস্টনেই ‘রোড শো’ হবে। ক্রেতা না-মিললে ‘ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো’ আর এক রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল-কে বিপিসিএলের শেয়ার বেচে দেওয়া হবে। যে-ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এলআইসি-কে দিয়ে আইডিবিআই কেনানো হয়েছিল। শিপিং কর্পোরেশন ও কনকরের ক্ষেত্রে বিদেশের ডিবি ওয়ার্ল্ড বা দেশের আদানি গোষ্ঠী আগ্রহী হতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement