হালখাতার দিনটি ভাল গেল না শেয়ার বাজারের। নতুন বছর সম্বৎ ২০৭৪-এর প্রথম দিন মুরত লেনদেনে বৃহস্পতিবারে মুখ থুবড়ে পড়ল সূচক।
এ দিন সেনসেক্স পড়েছে ১৯৪.৩৯ পয়েন্ট। নিফ্টির পতন ৬৪.৩০ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার দীপাবলির দিনে এক ঘণ্টার এই বিশেষ মুরত লেনদেন শেষে বাজার বন্ধের সময়ে সেনসেক্স দাঁড়ায় ৩২,৩৮৯.৯৬ অঙ্কে এবং নিফ্টি ১০,১৪৬.৫৫ অঙ্কে।
অবশ্য গত বছর অর্থাৎ ২০৭৩ সম্বতে নিট হিসাবে সেনসেক্সের উত্থান হয়েছে ৪৬৪২.৮৪ পয়েন্ট (১৬.৬১%) ও নিফ্টির ১,৫৭২.৮৫ পয়েন্ট (১৮.২০%)। এ বার প্রশ্ন নতুন সম্বৎ কেমন যাবে?
শেয়ার বাজার মহলের একটি বড় অংশেরই ধারণা, নতুন বছরে সূচকের মুখ নিট হিসেবে উপরের দিকে থাকলেও বাজার অনিশ্চয়তার হাত থেকে মুক্তি পাবে না। কারণ, সূচক যে-ভাবে উল্কার গতিতে বেড়েছে, তার পিছনে কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা। শুধু তাই নয়, অনেকে মনে করছেন আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সূচক অনেকটাই পড়ে যেতে পারে।
ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক এবং স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ বলেন, ‘‘বাজারে শেয়ারের দাম যেখানে রয়েছে, তাতে কৃত্রিমতা আছে। দাম এতটা বাড়ার মতো কোনও ঘটনাই ঘটেনি। বরং এখনও পর্যন্ত যা দেখা গিয়েছে, তাতে নোটবন্দি এবং জিএসটির বিরূপ প্রভাবই দেশের অর্থনীতিতে পড়ছে। এই অবস্থায় বিচ্ছিন্ন ভাবে শেয়ার বাজার চাঙ্গা হওয়াকে খুব একটা স্বাভাবিক বলা যায় না।’’
কমলবাবু এবং কৌশিক উভয়েই মনে করেন, চলতি বছরের শেষে সেনসেক্স হাজার তিনেক পয়েন্ট পড়ে গেলেও তাঁরা আশ্চর্য হবেন না। কত পয়েন্ট পড়বে, সে ব্যাপারে নানা মত থাকলেও শেয়ার বাজার মহলে অনেকেরই আশঙ্কা, বাজার এখন বড় মাপের সংশোধনের মুখে দাঁড়িয়ে। তবে আগামী দিনে শেয়ার বাজারে দীর্ঘ মেয়াদে সূচকের লম্বা দৌড়ের জন্য সংশোধন বিশেষ জরুরি বলে মনে করেন ওই সব বিশেষজ্ঞ।
তবে এর বিপরীত মতও রয়েছে শেয়ার বাজারে। যেমন দেকো সিকিউরিটিজের কর্তা প্রবীণ বিশেষজ্ঞ অজিত দে বাজার নিয়ে বিশেষ আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘‘শেয়ার বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম মেনে মাঝে মধ্যে দামের পতন হলেও নিট হিসাবে সূচকের মুখ উপরের দিকেই থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।’’
কেন এমনটা ভাবছেন? অনেক বাজার বিশেষজ্ঞই জিএসটি-র বিরূপ প্রভাবের কথা বললেও অজিতবাবুর বাজি কিন্তু ওই জিএসটিই। তাঁর দাবি, ‘‘আগামী মাস আটেকের মধ্যেই এর সুফল দেখতে পাবেন সাধারণ মানুষ। কর ব্যবস্থার এই সংস্কার আখেরে দেশের অর্থনীতির উপর ইতিবাচক প্রভাবই ফেলবে। যা প্রভাবিত করবে শেয়ার বাজারকেও।’’ ভবিষ্যতে শেয়ার বাজার কেন চাঙ্গা হবে, তার কারণ হিসাবে অজিতবাবু আরও একটি বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে ভারতের শেয়ার বাজারের হাল ছিল বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির হাতেই। কারণ, তাদের লগ্নির উপরই বাজারের চাঙ্গা হওয়া অনেকটা নির্ভর করত। কিন্তু হালে সেই পরিস্থিতিও বদলেছে। এখন মিউচুয়াল ফান্ড-সহ ভারতীয় আর্থিক সংস্থাগুলির লগ্নি ছাপিয়ে গিয়েছে বিদেশি লগ্নিকারীদের। দেখা গিয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ঢেলেছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। সেখানে ভারতীয় আর্থিক সংস্থাগুলির লগ্নির পরিমাণ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। এটা থেকেই বোঝা যায়, ভারতীয় লগ্নিকারীদের ঝুঁকি নেওয়া এবং তা সামলানোর ক্ষমতা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। এটা দেশের শেয়ার বাজারের পক্ষে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।’’
মুরত লেনদেনে মূলত যে-সব ক্ষেত্রের শেয়ার ধাক্কা খেয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ব্যাঙ্কিং, ধাতু, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, পরিকাঠামো, তেল-গ্যাস, বিদ্যুৎ, গাড়ি, ভোগ্যপণ্য, আবাসন ও তথ্যপ্রযুক্তি। বাজার সূত্রের খবর, স্পেনের রাজনৈতিক সঙ্কট বাড়ার জেরে ইউরোপীয় বাজার পড়ার প্রভাবও এ দিন মুরত লেনদেনে বাজারের পতনের জন্য কিছুটা দায়ী।
গুজরাতি নববর্ষ এবং ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উপলক্ষে আজ শেয়ার বাজার বন্ধ থাকবে। তারপর শনি ও রবিবার লেনদেন বন্ধ থাকায়, টানা তিন দিন পরে সোমবার ফের তা খুলবে।