বেশি পেনশন পাওয়ার বেশিরভাগ আবেদনই আইনত বাতিল হয়ে যেতে পারে। প্রতীকী ছবি।
প্রভিডেন্ট ফান্ডের (পিএফ) আওতায় বেশি পেনশন পাওয়ার বিষয়টি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। সম্প্রতি সামনে এসেছে, পিএফ পেনশন পাওয়ার জন্য ধার্য ঊর্ধ্বসীমার উপরে থাকা বেতনের অংশের উপরেও কেউ পেনশন পেতে চাইলে তাঁকে সেই বাবদ বাড়তি টাকা দিতে হবে নিজের পকেট কেটে। এ বার সূত্রের খবর, বেশি পেনশন পাওয়ার বেশিরভাগ আবেদনই আইনত বাতিল হয়ে যেতে পারে।
একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, পিএফ আইনের ২৬(৬) ধারা এ ক্ষেত্রে বাধা। সেখান বলা আছে, পিএফে যে টাকা কাটা হয় তার উপর এই প্রকল্প পরিচালনা সংক্রান্ত প্রশাসনিক খরচ হিসাবেও নির্দিষ্ট হারে টাকা জমা দিতে হয় নিয়োগকারীকে। এখন সর্বোচ্চ ১৫,০০০ টাকা বেতনের উপরে নিয়োগকারী ওই টাকা দেন। এ দিকে, পেনশন পাওয়ার জন্য ধার্য ঊর্ধ্বসীমার (মূল বেতন এবং ডিএ ধরে ১৫,০০০ টাকা) উপরে বাড়তি বেতনের অংশে যাঁরা পিএফ কাটিয়েছেন, তাঁরাই শুধু বেশি পেনশন চাইতে পারবেন। নিয়োগকারীর সঙ্গে যৌথ ভাবে পিএফ দফতরে আবেদন করে ওই টাকা কাটানো যায়। অনেকেই চাকরিতে থাকাকালীন এ ভাবে টাকা কাটিয়েছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শর্ত ছিল, বেশি বেতনের উপর যে টাকা কাটানো হবে তার উপরেও নিয়োগকারীকে অতিরিক্ত প্রশাসনিক খরচ খাতে নির্দিষ্ট হারে টাকা জমা দিতে হবে। অতিরিক্ত ওই খরচ দেওয়ার অঙ্গীকার যৌথ আবেদনেই করার কথা নিয়োগকারীর। কিন্তু সূত্রের খবর, যৌথ আবেদনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়োগকারী ওই অঙ্গীকার করেননি। পিএফের এক কর্তা জানান, এ ব্যাপারে সরকার কোনও নির্দেশ না দিলে বেশি পেনশনের সিংহভাগ আবেদনই বাতিল বলে গণ্য হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এখন ইচ্ছে করে আইনের এই ফাঁক কেন্দ্র সামনে আনল কি না বোঝা যাচ্ছে না। সরকার এই অজুহাতে বেশি পেনশন দেওয়ার দায় এড়াতে পারে। বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত হলে তারা অবিলম্বে এই ফাঁক বন্ধ করার চেষ্টা করবে। সম্প্রতি বেশি পেনশন প্রসঙ্গে শ্রম মন্ত্রকের এক বিজ্ঞপ্তি নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়ে তারা।
এখন সর্বোচ্চ ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত বেতনে নিয়োগকারীর দেওয়া ১২% (বেতনের) টাকা থেকে ৮.৩৩% পেনশন তহবিলে কাটা হয়। বাকি ৩.৬৭% কর্মীর পিএফ অ্যাকাউন্টে যায়। যা অবসরের পরে সুদ-সহ হাতে পান। পেনশন খাতে কাটা টাকায় ১.১৬% ভর্তুকি দেয় কেন্দ্র। কিন্তু বাড়তি টাকায় তারা ভর্তুকি দেবে না আগে বলা হয়েছিল, বেশি পেনশন পেতে ১৫০০০ টাকার (আগে ছিল ৫০০০ টাকা অথবা ৬৫০০ টাকা) ঊর্ধ্বসীমার বেশি বেতনেও ৮.৩৩% টাকা বকেয়া সুদ-সহ পেনশন তহবিলে দিতে হবে। কিন্তু সম্প্রতি শ্রম মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বেশি পেনশনের জন্য ১.১৬% ভর্তুকি যোগ করে কর্মীর বাড়তি বেতনে সুদ-সহ নিয়োগকারীর দেয় ১২% টাকা থেকেই পেনশন তহবিলে যাবে ৯.৪৯%। ফলে নিয়োগকারীর অংশের বাকি ২.৫১% জমা পড়বে পিএফে। অর্থাৎ বেশি পেনশনের জন্য কর্মীকেই তাঁর পিএফ অ্যাকাউন্টে টাকা কম নিয়ে পেনশন তহবিলে ভরতে হচ্ছে।