Banarasi Saree

Banarasi Saree: করোনা আর তেলের দরে বিপর্যস্ত বেনারসির বাজার

বেনারসি শাড়ির পিঠস্থান বারাণসী। শাড়ি তৈরি করতে লাগে রেশম, কাজ বা নকশা তোলা হয় রেশমি সুতো, তামা, রুপো, এমনকি অনেক সময় সোনা দিয়েও।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বারাণসী শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৩৮
Share:

প্রতীকী চিত্র।

এক দিকে অতিমারির কারণে তলানি ছুঁয়েছে চাহিদা। অন্য দিকে ডিজ়েলের চড়া দাম পরিবহণ খরচকে ঠেলে তোলায় কাঁচামালের দর কার্যত মাত্রা ছাড়িয়েছে। আর এই দু’য়ের সাঁড়াশি চাপে সঙ্কটে ডুবেছে ভারতের ঐতিহ্যবাহী বেনারসি শাড়ির বাজার। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, কোভিডের আগের থেকে বিক্রি কমেছে ৭০ শতাংশেরও বেশি। চূড়ান্ত আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন শাড়ি তৈরির তাঁতি এবং কারিগরেরা। সকলেরই এখন একমাত্র ভরসা আসন্ন উৎসবের মরসুম। যদি কিছুটা অন্তত চাহিদা বাড়ে, এই আশায় দিন গুনছেন তাঁরা। একাংশের দাবি, তীব্র আর্থিক সঙ্কটে পড়ে সংসার চালানোর জন্য কেউ কেউ তাঁতটাই বিক্রি করে দিচ্ছেন।

Advertisement

বেনারসি শাড়ির পিঠস্থান বারাণসী। শাড়ি তৈরি করতে লাগে রেশম, কাজ বা নকশা তোলা হয় রেশমি সুতো, তামা, রুপো, এমনকি অনেক সময় সোনা দিয়েও। বণিকমহল বলছে, বহু তাঁতি এবং নকশা তোলার কাজে দক্ষ কারিগরদের হাতে কোনও বরাত নেই। যাঁদের কিছুটা বিক্রি হচ্ছে, তাঁরাও কাজ করতে ভরসা পাচ্ছেন না। কারণ, প্রায় সমস্ত কাঁচামালেরই দাম অনেকটা চড়ে গিয়েছে। ফলে লাফিয়ে বেড়েছে শাড়ি তৈরির খরচ। বারাণসীর তাঁতি মহম্মদ কাসেম বলেন, ‘‘গত চার মাসে প্রায় ৩০% বেড়ে প্রতি কিলোগ্রাম কাঁচা রেশমের দাম ঠেকেছে ৪৫০০ টাকায়। শাড়িতে হাতের কাজ তোলার জন্য ব্যবহৃত তামা এবং রুপোর দামও বেড়েছে প্রায় ৪০%।’’ কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির জন্য কাসেমের মতো বেনারসি শাড়ি তৈরির সঙ্গে যুক্ত আরও অনেকেই আঙুল তুলেছেন ডিজ়েলের দামের দিকে। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ‘‘জ্বালানির রেকর্ড দর রুজি কাড়ছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের। অভূতপূর্ব গতিতে বেড়েছে পরিবহণের খরচ। ফলে কাঁচামাল কিনতে গেলেই বিপুল দর হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। আগের মতো চাহিদাও নেই যে, ক’টা শাড়ি বেচেই বাড়তি খরচ তুলে নেওয়া যাবে।’’

আয় কমায় সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন কাশেম, যন্ত্রচালিত তাঁতের কর্মী মহম্মদ শিরাজ। কাসেম বলেন, ‘‘আমার আয় এক তৃতীয়াংশে নেমেছে। অথচ সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামই আকাশছোঁয়া। অবস্থা সামাল দিতে ১৬টি তাঁতের মধ্যে দু’টি বিক্রি করে দিয়েছি।’’ আরও তাঁত বিক্রি করতে হবে কি না, সেই ভাবনা ঘুম কেড়েছে তাঁর। শিরাজের আক্ষেপ, ‘‘নিখরচার রেশনে বেঁচে আছে আমার গোটা পরিবার। মেয়েকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছি। কারণ, বেতন দিতে পারছি না।’’ বারাণসী বস্ত্র ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজন বেহাল বলছেন, ‘‘বাজারে চাহিদা এতই কম যে, শাড়ির ব্যবসায়ীরা সরকারের গ্যারান্টিযুক্ত ঋণ নিতে সাহস পাচ্ছেন না। ক্রেতা থাকলে বন্ধক রেখেও ধার নেওয়া যায়।’’

Advertisement

অবস্থা ফেরার আশায় উৎসবের মরসুমে বেনারসি শাড়ির চাহিদা বৃদ্ধির দিকেই তাকিয়ে আছেন সংশ্লিষ্ট সকলে। আগে বারাণসী বেড়াতে এসে অনেকে বেনারসি শাড়ি কিনত। কিন্তু কোভিডের কারণে পর্যটকের সংখ্যাও তলানিতে নেমেছে। কাসেমরা মনেপ্রাণে চাইছেন— উৎসব যেন ভাল কাটে, মানুষ যেন খরচ করার ভরসা পায়, তেলের দাম যেন কমে, তৃতীয় ঢেউ যেন না-আসে, পর্যটন যেন পুরো খুলে যায়। সব মিলিয়ে বেনারসি শাড়ি যেন ফিরে পায় তার হারানো জৌলুস।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement