নোট বাতিল নিয়ে মোদী সরকারকে ফের বিঁধলেন মনমোহন সিংহ। স্পষ্ট বললেন, কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নোট নাকচ উপযুক্ত হাতিয়ার নয়। বরং তার জন্য সরল করা প্রয়োজন কর ব্যবস্থা। একই পথে হাঁটা উচিত জমি নথিভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে। আলগা হওয়া প্রয়োজন লাল ফিতের ফাঁস। রাতারাতি শুধু নোট বাতিল করে কালো টাকা নিকেশ করা সম্ভব বলেই মনে করেন না প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
এ দেশে উদার অর্থনীতির ভগীরথের মতে, নোটবন্দির ঘোষণায় লাভের লাভ হয়নি। বরং থমকে গিয়েছে বৃদ্ধির চাকা। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘অনেকে মনে করেন, ক্ষত সারিয়ে দ্রুত চাঙ্গা হয়ে উঠবে অর্থনীতি। ফিরে পাবে স্বাভাবিক গতি ও ছন্দ। কিন্তু তাতে আমার সন্দেহ আছে। অর্থনীতি যে-ভাবে ধাক্কা খেয়েছে, তাতে আগামী এক বছর এই তছনছ অবস্থাই থাকবে।’’
এ দিন এর্নাকুলামে সেন্ট টেরেসা কলেজে পড়ুয়াদের সামনে নোট নাকচ নিয়ে কেন্দ্রকে এ ভাবেই ফের আক্রমণ করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। ঠিক যে-ভাবে নোটবন্দির পরে গত ২৪ নভেম্বর মোদী সরকারকে ঝাঁঝালো আক্রমণ করেছিলেন তিনি। তখনও তিনি বলেছিলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর (মোদী) দাবি, কালো টাকা, জাল নোট আর সন্ত্রাসবাদীদের হাতে টাকা যাওয়া রুখতেই এই পদক্ষেপ। লক্ষ্যগুলি নিয়ে আপত্তি নেই। কিন্তু তা করতে গিয়ে যে ভাবে নোট তুলে নেওয়া হয়েছে, তাতে পরিচালন ব্যবস্থায় বিরাট গলদ (‘মনুমেন্টাল মিসম্যানেজমেন্ট’) রয়েছে বলে কোনও দ্বিমত নেই।’’
মনমোহনের আশঙ্কা ছিল, গরিব ও সমাজের পিছিয়ে থাকা মানুষের কাছে নোটবন্দির ফল মারাত্মক হতে পারে। নোট এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমতে পারে সাধারণ মানুষের। ধাক্কা খেতে পারে কৃষি, ছোট শিল্প। কষ্টে পড়বেন অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীরা। জিডিপি বৃদ্ধি কমবে ২ শতাংশ বিন্দু। তিনি বলেছিলেন, ‘‘এটি কার্যত পরিকল্পিত লুঠ, সাধারণ মানুষের টাকা তছরুপের সামিল।’’
তাঁর ওই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। কিন্তু পরিসংখ্যান দেখিয়েছে, বৃদ্ধি সত্যিই ধাক্কা খেয়েছে। কাজ হারিয়েছেন বহু কর্মী। সমস্যায় পড়েছে ছোট-মাঝারি শিল্প। এই অবস্থায় এ দিন ফের সেই নোট নাকচকে নিশানা করলেন তিনি।