প্রতীকী চিত্র।
একের পর এক শহর এবং রাজ্যে পেট্রলের দর পার করে চলেছে ১০০ টাকার গণ্ডি। বুধবার কলকাতার পাশাপাশি, দেশের রাজধানী শহর দিল্লিতেও তা সেঞ্চুরি করেছে। ফলে সব মেট্রো শহরেই পরিবহণ জ্বালানিটি ওই নজির গড়ল। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে ডিজেলও। যা নিয়ে এ দিন রাজ্য বাজেট পর্বের পরে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদী সরকারের উদ্দেশে তোপ দেগেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীও। তার পরেও অবশ্য জ্বালানির দরের দৌড় থামেনি। আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতায় ইন্ডিয়ান অয়েলের পাম্পে লিটার পিছু পেট্রল ৩৯ পয়সা বেড়ে ১০০.৬২ টাকা হয়েছে। ১৫ পয়সা বেড়ে ডিজেলের দাম হয়েছে ৯২.৬৫ টাকা। বিজেপি অবশ্য যথারীতি আঙুল তুলেছে রাজ্যের ভ্যাটের দিকে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের মেট্রো শহরগুলির মধ্যে কলকাতা ও দিল্লিতেই পেট্রলের দর ১০০ টাকা ছোঁয়া বাকি ছিল। এ দিন কলকাতায় তা ১০০ পার করার পাশাপাশি, দিল্লিতে হয় ১০০.২১ টাকা। এই প্রসঙ্গে বাজেটের পরে মমতা বলেন, ‘‘কেন্দ্র কর থেকে ৩ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে। সেই টাকা গেল কোথায়? মানুষের পকেট থেকে এই টাকা নিয়ে সরকার নিজেদের পকেট ভরছে। ডিজেলের যা দর, কৃষক কী ভাবে চাষ করবেন? পরিবহণ খরচও বাড়ছে। নরেন্দ্র মোদী কি এ নিয়ে কখনও ভাবেন? তিনি তো শুধুই ভাষণ দেন! আমাদের রাজ্য সামাজিক প্রকল্পে এত খরচ করতে পারলে কেন্দ্র পারে না কেন?’’ তেল থেকে কেন্দ্রের বিপুল কর আদায়ের বিষয়টিও নথিভুক্ত করা হয়েছে বাজেট বক্তৃতায়। বাজেট বিবৃতিতে রাজ্যের দাবি, জ্বালানির খরচ বাড়ায় ভোজ্য তেলের দর ৩০.৮%, ডিমের দাম ১৫.২%, ফলের দাম ১২%, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সরঞ্জামের দাম ৮.৪৪% বেড়েছে। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, কেন্দ্রীয় শুল্ক, সেস এবং সারচার্জ কমিয়ে জ্বালানির দর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর রাহুলের টুইট, ‘‘আপনাদের গাড়ি পেট্রল বা ডিজেলে চলে। মোদী সরকার চলে করের তোলাবাজিতে।’’
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অবশ্য দাবি, কেন্দ্র তেলের দর নিয়ন্ত্রণ করে না। তিনি বলেন, ‘‘কর বাবদ রাজ্য প্রায় ৩৮ টাকা আয় করে। তাদের এতই যদি দরদ, তা হলে এর থেকে ১৮-২০ টাকা ছাড়ুক। ভোটের আগে সস্তার হাততালি কুড়োতে ১ টাকা ছাড় দিয়েছিল। এখন যদি রাজ্য তা কমায়, তা হলে আমরা সবাই মিলে কেন্দ্রকে বলব শুল্ক কমাতে।’’
এই তরজার মধ্যে আমজনতা অবশ্য নাজেহাল। ব্যাঙ্ক-কর্মী লিরিক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পেট্রল এত দ্রুত ১০০ টাকা পার করবে, তা ক’মাস আগেও আন্দাজ করতে পারিনি।’’ অধ্যাপক অর্ঘ্য নন্দীর বক্তব্য, ‘‘সপ্তাহে দু’তিন দিন গাড়ি নিয়ে বেরোতেই ৪০০ টাকার পেট্রল লাগছে।’’ আর পেশায় ব্যবসায়ী সুব্রত ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘করোনার সময়ে মোটরবাইকে যাতায়াত করা তুলনায় নিরাপদ। কিন্তু পেট্রলের যা দাম, তাতে খাব না গাড়ি চালাব বুঝতে পারছি না।’’