প্রতীকী ছবি।
করোনাভাইরাস ও লকডাউনের ঋণের কিস্তি স্থগিত বা মোরাটরিয়ামের মেয়াদ শেষ হয়েছে গতকাল ৩১ অগস্ট। নতুন করে আর বাড়ানো হয়নি মেয়াদ। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘোষণা অনুযায়ী দু’বছর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি স্থগিত করা যেতে পারে— সুপ্রিম কোর্টে এমনটাই জানালেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। একটি জনস্বার্থ মামলায় আর্জি জানানো হয়েছিল, ঋণের কিস্তি স্থগিত হওয়া ছ’মাসের সুদও মকুব করুক ব্যাঙ্কগুলি। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত সরকার, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির প্রতিনিধিরা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করুক বলে সওয়াল করেছেন সলিসিটর জেনারেল। বুধবার ফের শুনানি হবে এই মামলার।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শৃঙ্খল রুখতে দেশে লকডাউন জারি হয়েছিল ২৫ মার্চ থেকে। তার পরে পরেই প্রথমে তিন মাসের জন্য এবং পরে আরও তিন মাস মিলিয়ে মার্চ থেকে অগস্ট পর্যন্ত মোট ছ’মাসের জন্য ঋণের কিস্তি স্থগিতের সুযোগ দেওয়া হয় ঋণগ্রহীতাদের। অর্থাৎ এই ছ’মাস ঋণের কিস্তি না দিলেও ঋণগ্রহীতাকে কোনও জরিমানা দিতে হবে না বা ক্রেডিট স্কোরে কোনও প্রভাব পড়বে না। সেই মেয়াদ শেষ হয়েছে সোমবার ৩১ অগস্ট।
আপাতদৃষ্টিতে ঋণগ্রহীতাদের জন্য এই কিস্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত সুবিধাজনক মনে হলেও জানা যায়, ওই সময়ের জন্য সুদ এবং সুদের উপর সুদ মকুব করা হয়নি। ফলে সাময়িক সুবিধা হলেও ওই সুদ মিলিয়ে ঋণের মেয়াদ শেষে অনেক বেশি টাকা পরিশোধ করতে হবে ঋণগ্রহীতাদের। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয় ঋণগ্রহীতা ও সংশ্লিষ্ট সব মহলে। বিরোধীরাও সরকারের তীব্র সমালোচনা করে। এই নিয়েই সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। মামলাকারীর দাবি, ওই সময়ের জন্য সুদ এবং সুদের উপর সুদ দু’টোই মকুব করতে হবে।
মঙ্গলবার এই মামলার শুনানিতে সলিসিটর জেনারেল বলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তাতে দু’বছর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি মকুব করতে পারে সরকার। কিন্তু সুদ মকুবের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত সব পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং ব্যাঙ্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা পর্যালোচনা করে সুষ্ঠু সমাধান করতে পারে। সোমবারই ২০২০-২১ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের জিডিপির পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। তাতে দেখা গিয়েছে, ৪১ বছরের মধ্যে প্রথম জিডিপি সঙ্কোচন হয়েছে সবচেয়ে বেশি ২৩.৯ শতাংশ। সেই বিষয়টি উল্লেখ করে তুষার মেহতা বলেন, ‘‘আরও অনেক বিষয় রয়েছে। জিডিপি ২৩ শতাংশের বেশি সঙ্কোচন হয়েছে। অর্থনীতি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে।’’
আরও পড়ুন: বিদায় প্রণব মুখোপাধ্যায়, ২২ দিনের যুদ্ধ শেষ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির
আরও পড়ুন: শ্রীপ্রণব মুখোপাধ্যায় (১৯৩৫-২০২০)
গত সপ্তাহে এ নিয়ে কেন্দ্রের মতামত জানিয়ে হলফনামা দিতে বলেছিল শীর্ষ আদালত। কিন্তু এখনও হলফনামা জমা দেয়নি কেন্দ্র। এই মামলাতেই আদালত কেন্দ্রকে ভর্ৎসনা করে বলেছিল, রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে ঢাল করতে পারে না সরকার। অন্য দিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ মকুবের পক্ষে নয়। আগেই তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ঋণের কিস্তি স্থগিতের পাশাপাশি সুদ মকুব করা সম্ভব নয়। তাতে ব্যাঙ্কগুলির স্থিতিশীলতা ও আর্থিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়বে।