সুদ নিয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সিদ্ধান্ত নেবে এই সপ্তাহে। প্রতীকী ছবি।
নতুন অর্থবর্ষের (২০২৩-২৪) প্রাক্কালে ভাল খবর পেয়েছিলেন লগ্নিকারীরা। এক দিকে, গত অর্থবর্ষের শেষ দিন ৩১ মার্চে সেনসেক্সের হাজার পয়েন্ট উত্থান। শেষ দু’দিন ধরলে ১৩৭৭। অন্য দিকে, বেশিরভাগ স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ বৃদ্ধি। বেড়েছে শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডের ন্যাভও (ফান্ডে প্রতি ইউনিটের বর্তমান মূল্য)। বাজারের উত্থানের সদর্থক প্রভাব দেখা যাবে লগ্নিকারী সংস্থার হিসাবের খাতায়। তবে উত্থান কতটা জারি থাকবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সুদ নিয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সিদ্ধান্ত নেবে এই সপ্তাহে। রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় আরবিআই) টানা ২৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর পরে এ বার বিরতি দিলে লগ্নিকারীরা উল্লসিত হবেন। আরও উঠতে পারে সূচক। বাজারের অনুমান সুদ বাড়ালেও, তা ২৫ বেসিস পয়েন্টের বেশি হবে না। অবশ্য সে ক্ষেত্রে বুঝতে হবে, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা বহাল।
আগামী বুধবার সুদ নিয়ে শীর্ষ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তের পরে বাজারের নজর ঘুরবে শিল্পের আর্থিক অবস্থার দিকে। সংস্থাগুলি গত অর্থবর্ষ (২০২২-২৩) ও তার শেষ তিন মাসের (জানুয়ারি-মার্চ) ফল প্রকাশ করবে। এই পালা চলবে মে-র শেষ পর্যন্ত। তার নিরিখে ওঠা-নামা করবে তাদের শেয়ার দর। বাজারের চোখ থাকবে বর্ষাতেও। পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বার তাপপ্রবাহ বইতে পারে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে। সেটা হলে প্রভাব পড়বে কৃষিতে। চড়তে পারে খাদ্যপণ্যের দাম।
২০২২-এর ৩১ মার্চ সেনসেক্স ছিল ৫৮,৫৬৯, নিফ্টি ১৭,৪৬৫ অঙ্কে। এ বার ওই দিন ছিল যথাক্রমে ৫৮,৯৯২ এবং ১৭,৩৬০। অর্থাৎ অবস্থানে বড় বদল হয়নি। যদিও গত অর্থবর্ষেই ৬৩,২৮৪ অঙ্কে পৌঁছে সেনসেক্স পা রেখেছিল সর্বোচ্চ শিখরে। নিফ্টি থামে ১৮,৮১২-এ। এক বছরে (এপ্রিল-মার্চ) ভোগ্যপণ্য সূচক বেড়েছে ২৬.৫০%, গাড়ি ১৬.০৩%, ব্যাঙ্ক ১১.৬৪%। তথ্যপ্রযুক্তি সূচক নেমেছে ২০.৯৮%। বিভিন্ন সময় বাজার নাগাড়ে পড়েছে। বিএসই-তে লগ্নিকারীরা খুইয়েছেন প্রায় ৫.৮৬ লক্ষ কোটি টাকা।
জানুয়ারিতে কয়েকটি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে কিছুটা সুদ বাড়ার পরে এ বার তা ফের বাড়ানো হবে, এমন আশা অনেকেই করেননি। বাস্তবে সুদ বেড়েছে ১২টির মধ্যে ১০টিতেই। পিপিএফ অবশ্য এই দফাতেও বাদ। তবু খুশি সুদ-নির্ভর বহু সাধারণ মানুষ। বিশেষত প্রবীণ নাগরিকেরা। কারণ, সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে সুদ বেড়ে হয়েছে ৮.২%। যা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাঙ্কের তুলনায় বেশি। ১ এপ্রিল থেকে এতে সর্বোচ্চ জমাও বেড়ে হয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা। ফলে ব্যাঙ্ক থেকে অনেকটা টাকা সরে আসতে পারে এখানে। জাতীয় সঞ্চয়পত্রে (এনএসসি) সুদ ৭০ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৭.৭%। ভারত সরকারের ফ্লোটিং রেট বন্ড (পরিবর্তনশীল সুদের বন্ড) এনএসসি-র সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় ভবিষ্যতে তার সুদও ৭.৩৫% থেকে বেড়ে ৮.০৫% হতে পারে বলে আশা। ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পে সুদ ৭.৪%। ৫ বছর মেয়াদি জমায় সুদ দেওয়া হবে ৭.৫%, সুকন্যা সমৃদ্ধিতে ৮%, কিসান বিকাশে ৭.৫%।
স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ বাড়ায় আমানত টানার প্রতিযোগিতায় ব্যাঙ্ক এবং ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে (এনবিএফসি) জমায় সুদ বাড়াতে হবে। এতে তাদের মুনাফা কমতে পারে। আরবিআই রেপো বাড়ালে ব্যাঙ্ক-ঋণে সুদ আরও বাড়বে। চাপ বাড়বে ঋণগ্রহীতাদের। ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসি-তে অনুৎপাদক সম্পদ বাড়তে পারে। তবে অবসর গ্রহণকারীদের বড় মেয়াদে ভাল সুদে টাকা রাখার জন্য সময়টা ভাল।
(মতামত ব্যক্তিগত)