প্রতীকী ছবি।
সূতির পোশাকের কদর ভারতের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বরাবরই বেশি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট শিল্প মহলের খবর, সাম্প্রতিক কালে সেই পোশাকের কাঁচামাল তুলোর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। তা দিয়ে উৎপাদিত পোশাকের দামও বেড়ে চলেছে হু-হু করে। এর ফলে পুরোপুরি সূতির তৈরি জামাকাপড় সাধারণ মানুষের আওতার বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পক্ষ। সে ক্ষেত্রে ধাক্কা খাবে পোশাকের ব্যবসাও। তাদের আরও দাবি, ঠিক একই কারণে মার খাচ্ছে সূতির পোশাকের রফতানিও। চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছেন রফতানিকারীরা। এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে পোশাক শিল্প। তাদের বক্তব্য, তুলোর দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে তার রফতানি বন্ধ করা জরুরি।
সম্প্রতি তুলোর দাম নিয়ে বণিকসভা ইন্ডিয়ান চেম্বারের (আইসিসি) এক সভায় গোটা বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে। বর্ধমান টেক্সটাইলসের যুগ্ম ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীরজ জৈন বলেন, ‘‘সুতোর দাম যে ভাবে বাড়ছে তাতে আগামী দিনে পুরোপুরি সূতির জামাকাপড় পাওয়া কঠিন হবে। পরিবর্তে সুতোর সঙ্গে পলিয়েস্টার মিশিয়ে তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়বে।’’ আইসিসি-র বস্ত্র সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান তথা টিটি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জয় জৈনের বক্তব্য, ‘‘সূতির বস্ত্রের দাম এতটাই বাড়তে পারে যে, আমাদের হিসাব অনুযায়ী, দেশের ৮৫% মানুষের পক্ষেই তা কেনা কঠিন হবে।’’
এমনিতে তুলো উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে ভারত। তা হলে সমস্যাটা কোথায়? বস্ত্র ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, ভবিষ্যতে বেশি দাম পাওয়ার আশায় অনেক চাষিই গত এক বছর ধরে তুলো মজুত করছেন। যার ফলে গত কয়েক মাসে তার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। পণ্য লেনদেনের বাজারেও তুলোর ফাটকা লেনদেন বেড়েছে। এই সমস্যার সমাধানে তুলোর দাম নিয়ন্ত্রণের পাকাপাকি ব্যবস্থা করা জরুরি বলে মনে করছে শিল্প মহল।
চাপে সূতির পোশাকের রফতানিও। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, কেন্দ্র হস্তক্ষেপ না করলে বাংলাদেশ-সহ অন্যান্য দেশের কাছে বস্ত্র রফতানির বাজার হারানোর আশঙ্কাও রয়েছে। নয়ডা অ্যাপারেল এক্সপোর্ট ক্লাস্টারের সভাপতি ললিত থুকরাল জানান, জামাকাপড় রফতানি শিল্পকে সমস্যা থেকে বার করতে অবিলম্বে তুলোর রফতানি বন্ধ করা প্রয়োজন। তুলো আমদানির উপর যে ১০% হারে শুল্ক বসানো হয়েছে, তা-ও তুলে নেওয়া জরুরি। বস্ত্র রফতানির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক কালে আমেরিকা-সহ বেশ কিছু দেশ চিনের বস্ত্র আমদানি কমিয়েছে। ফলে ওই ক্ষেত্রে ভারতের বরাত বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। কটন অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি অতুল গনত্রা বলেন, ‘‘রফতানি বাড়ানোর জন্য জামাকাপড়ের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে হবে ভারতীয় মিলগুলিকে। না হলে সেই বরাত অন্যান্য দেশের হাতে চলে যেতে পারে।’’ তবে তার জন্য পোশাকের কাঁচামাল সূতির দাম নিয়ন্ত্রণে আসা জরুরি বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।