মেধাসত্ত্ব ও পেটেন্ট নিয়ে গত কয়েক বছরে বারবার চাপান-উতোরে জড়িয়েছে ভারত ও আমেরিকা। মার্কিন বাণিজ্য মহলের বরাবরের অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেই ভারতে মেধাসম্পদের অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা ঠিকমতো নেওয়া হয় না। যে কারণে আমেরিকার পেটেন্ট সংক্রান্ত কালো তালিকাতেও ঢুকে পড়েছিল এই দেশ। কিন্তু এ বার ভারতের আনা জাতীয় মেধাসত্ত্ব নীতির প্রশংসা শোনা গেল সেই মার্কিন মুলুকেরই বণিকসভার মুখে। মার্কিন চেম্বার অব কমার্সের মেধাসম্পদ বিভাগের কর্তা প্যাট্রিক কিলব্রাইডের মতে, আগামী দিনে ভারতে মেধাসম্পদ রক্ষায় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা ও উদ্ভাবন বাড়াতে সহায়ক হবে এই নীতি।
শুক্রবারই জাতীয় মেধাসত্ত্ব নীতি সামনে এনেছে কেন্দ্র। যার আওতায় উদ্ভাবনী চিন্তার প্রসারের জন্য মেধাসম্পদকেও আর্থিক সম্পত্তির মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে। পাশাপাশি, প্রতি পাঁচ বছরে ওই নীতি খতিয়ে দেখা, ব্যবসার ক্ষেত্রে মেধাসত্ত্বের বাণিজ্যিক দিকটি বজায় রাখতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম মানার মতো সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে, ২০১৭ সালের মধ্যে ট্রেডমার্কের নথিভুক্তির সময়সীমাও এক মাসে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ইতিমধ্যেই জমা দেওয়া ট্রেডমার্ক খতিয়ে দেখে তা মঞ্জুরের সময়সীমা ১৩ মাস থেকে কমিয়ে ৮ মাসে নিয়ে আসা হয়েছে। অনলাইন ব্যবস্থায় তা আরও কমিয়ে এক মাস করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এ জন্য নতুন করে পরীক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্তও নিয়েছে কেন্দ্র। মাথায় রাখা হয়েছে সিনেমা, গানের মতো ক্ষেত্রে কপিরাইটের বিষয়টিও। কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের হাত থেকে কপিরাইট সংক্রান্ত সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে শিল্প নীতি ও উন্নয়ন পর্ষদের (ডিআইপিপি) হাতে। সামগ্রিক ভাবেও পুরো মেধাসত্ত্ব নীতির দায়িত্বেও থাকবে ডিআইপিপি-র অধীনস্থ কমিটি।
শনিবার কিলব্রাইড বলেন, ভারতে মেধাসম্পদ কম নেই। কিন্তু তা রক্ষার জন্য সঠিক আইন প্রয়োজন। নতুন এই নীতি সেই ঘাটতি পূরণ করবে বলেই তাঁদের আশা। এর ফলে আগামী দিনে আইন সংশোধন করে উদ্ভাবনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলেই তাঁর দাবি।
সৌর বিদ্যুৎ, ওষুধের মতো ক্ষেত্রগুলিতে পেটেন্ট আইন ভাঙা নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বিতর্ক বহু দিনের। বর্তমান নিয়ম অনুসারে বিশেষ পরিস্থিতিতে সস্তার ওষুধ তৈরিতে লাইসেন্স দিতে পারে কেন্দ্র। যাতে বহুজাতিকের দামি ওষুধ কিনতে না-পারার কারণে গরীব মানুষের চিকিৎসা না-আটকায়। অন্তত ওই সমস্ত ওষুধের ভারতে তৈরি সস্তা সংস্করণ কিনতে পারেন তাঁরা। সেই কারণে ভারতে পেটেন্ট আইন ভাঙা নিয়ে বারবার আঙুল তোলে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়ার ওষুধ বহুজাতিকগুলি। তাদের অভিযোগ, গবেষণায় বহু টাকা খরচ করে তারা যে ওষুধ তৈরি করে, ভারতীয় সংস্থাগুলিকে তার সস্তার সংস্করণ তৈরি করতে ঢালাও অনুমোদন দেয় দিল্লি। এ জন্য মেধাস্বত্বকে পাশে সরিয়ে রেখে যে আইনি রাস্তায় হাঁটা হয়, তা নিয়ে বারবার আপত্তি তুলেছে তারা। এই আইনি ব্যবস্থা বদলানোর জন্য লাগাতার কেন্দ্রের কাছে দরবারও করে চলেছে ওষুধ সংস্থাগুলি।
এই অবস্থায় দেশে মেধাসত্ত্ব নীতি আনার কথা ঘোষণা করল কেন্দ্র। আগামী দিনে যার দিকে নজর রাখবে মার্কিন বাণিজ্য মহল। একই সঙ্গে তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে ভারত-সহ সারা বিশ্বেই মার্কিন মেধাসম্পদ সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে তাদের সজাগ থাকার কথাও।