মাস দুয়েক ধরে বহাল ছিল অস্থিরতা। তার পরে ন’দিন নাগাড়ে উঠেছে বাজার। ২০১৪ সালের মে মাসের পরে এ রকম টানা উত্থান এই প্রথম। যদিও ওঠার অঙ্ক খুব বেশি নয়, কমবেশি ৪%। তবে বাজারে অস্থিরতা কমেছে সন্দেহ নেই। যার মূল কারণগুলি হল—
• ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে সংস্থার ভাল আর্থিক ফলের আশা।
• স্বাভাবিক বর্ষার পূর্বাভাস।
• খুচরো মূল্যবৃদ্ধির মাথা নামানো। পাইকারি বাজারেও তার হার মার্চে ছিল আট মাসের সব চেয়ে নীচে।
• বাণিজ্য-যুদ্ধ ঘিরে অনিশ্চয়তা কিছুটা কমা।
শুক্রবার সেনসেক্স থেমেছে ৩৪,৪১৬ অঙ্কে। নিফটি ১০,৫৬৪-তে। গত সপ্তাহে ভাল আর্থিক ফল প্রকাশ করেছে কিছু সংস্থা। এই ধারা বজায় থাকলে বাজার হয়তো শক্তি ধরে রাখতে সক্ষম হবে। তার উপর ভাল বর্ষা হলে চাঙ্গা হবে গ্রামীণ অর্থনীতি। বাড়বে চাহিদা। উপকৃত হবে শিল্প। ফলে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়ার মতো দু’একটি কারণ বাদ দিলে, লম্বা মেয়াদে বাজার মজবুত থাকবে বলেই ইঙ্গিত।
তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের ক্ষেত্রে তেমন ভাল না হলেও, চোখে পড়ার মতো ফল প্রকাশ করেছে প্রতিদ্বন্দ্বী টিসিএস। গত অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে সংস্থাটির আয় ৮.২% বেড়ে পৌঁছেছে ৩২,০৭৫ কোটি টাকায়। নিট লাভ ৬,৯০৪ কোটি। পুরো বছরের আয় ও লাভ যথাক্রমে ১,২৩,১০৪ কোটি ও ২৫,৮২৬ কোটি টাকা। সংস্থা ঘোষণা করেছে ১:১ অনুপাতে বোনাস শেয়ার ইস্যু করার কথাও। এ সবের জেরে তেতে ওঠে টিসিএসের শেয়ার দর। ২১৬ টাকা (৬.৭৬%) বেড়ে শুক্রবার তা বন্ধ হয় ৩,৪০৬ টাকায়। ফলে শেয়ার দরের ভিত্তিতে সংস্থার মোট দাম প্রথম বারের জন্য দাঁড়িয়ে ১০,০০০ কোটি ডলারের দোরগোড়ায়। এখন বাজারে টিসিএসের শেয়ার মূলধন ৬.৫২ লক্ষ কোটি টাকা (৯৮.৬২ বিলিয়ন ডলার)। সংস্থা ডিভিডেন্ড দেবে শেয়ারে ২৯ টাকা। এই ফলে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে ঝিমিয়ে পড়া ইনফোসিসের শেয়ারও।
ভাল ফল প্রকাশ করেছে বিমা সংস্থা এইচডিএফসি লাইফ-ও। নিট মুনাফা ৪০% বেড়ে পৌঁছেছে ৩৪৭ কোটি টাকায়। পুরো অর্থবর্ষের লাভ বেড়ে হয়েছে ১,১১০ কোটি। জানুয়ারি-মার্চ, এই তিন মাসে সিমেন্ট সংস্থা এসিসি-র নিট লাভ ১৯% বেড়ে হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। বিক্রি ১৪% বেড়ে ছুঁয়েছে ৩,৫৫৭ কোটি। বেসরকারি ইন্দাসইন্ড ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা ২৭% বেড়ে হয়েছে ৯৫৩ কোটি। যদিও কিছুটা বেড়েছে অনুৎপাদক সম্পদ। এই বোঝা সামান্য বেড়ে ১.৩% ছুঁয়েছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কেরও। তবে তাদের আয় ও লাভ বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ২৫,৫৫০ কোটি ও ৪,৭৯৯ কোটি। শেয়ার পিছু ১৩ টাকা ডিভিডেন্ড দেবে ব্যাঙ্কটি।
সম্প্রতি দাম বাড়ায় কোটাক মহীন্দ্রা ব্যাঙ্কের শেয়ার দরের ভিত্তিতে মোট দাম পিছনে ফেলেছে স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ ভারতের বাকি সব ব্যাঙ্ককে। সামনে শুধু এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক। গত এক বছরে কোটাক মহীন্দ্রার দর বেড়েছে প্রায় ৩৩%। এই সময়ে এইচডিএফসি এবং ইন্দাসইন্ড ব্যাঙ্ক শেয়ার বেড়েছে ৩০% হারে। একই সময়ে স্টেট ব্যাঙ্কের দর পড়েছে ১৪.৬%।
কিছু দিন হল জমায় সুদ কমা বন্ধ রয়েছে। বন্ডের ইল্ড বেড়ে ওঠায় বরং কিছু ব্যাঙ্ক সুদের হার বাড়িয়েছে। ফলে সামান্য হলেও স্বস্তি বোধ করছেন সুদ নির্ভর মানুষ। গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রকল্পে এখন কী হারে সুদ মিলছে, তা দেওয়া হল সঙ্গের সারণিতে।