বছরের শেষ দিন যে দৌড় দেখা গিয়েছিল শেয়ার বাজারে, তা বহাল থাকল নতুন বছরের প্রথম তিনটি লেনদেনের দিনেও (সোম থেকে বুধবার)। ওমিক্রন এবং অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকা সংক্রমণ নিয়ে কাঁপুনি উড়িয়ে চার দিনে সেনসেক্স মোট ২৪২৯ পয়েন্ট ওঠে। ১৭ নভেম্বরের পরে এই প্রথম ফের ঢুকে পড়ে ৬০ হাজারের কোঠায়। দরজায় অতিমারির তৃতীয় ঢেউকে দেখেও সূচকের এমন উত্থান অবাক করেছে অনেককে। তবে এর কারণ মনে হয় কিছু ভরসার বার্তা। যেমন, ওমিক্রনের প্রভাব মৃদু থেকে মাঝারি থাকবে, সংক্রমণ বাড়লেও দেশব্যাপী লকডাউনের আশঙ্কা কম, আর্থিক কর্মকাণ্ডে হয়তো উদ্বেগজনক প্রভাব পড়বে না ইত্যাদি। যদিও ভবিষ্যৎ অজানা। বিজ্ঞানী মহলের হুঁশিয়ারি, আগামী দু’সপ্তাহে সংক্রমণের বিস্ফোরণ হতে পারে। তাতে শেয়ার বাজার কেঁপে উঠবে কি না সময় বলবে। আপাতত লগ্নিকারীরা সেই দিকেই চোখে রেখে বসে আছেন।
সংক্রমণ রুখতে দেশের বড় শহরগুলিতে বিধিনিষেধ আরোপ হতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। ধরে নেওয়া যায় তা ছাপ ফেলবে বাজারে। অর্থাৎ সামনের দিনগুলিতে ভাল রকম ওঠা-পড়া দেখা যেতে পারে সূচকের।
সেই সঙ্গে চলছে অক্টোবর-ডিসেম্বরে বিভিন্ন সংস্থার লাভ-লোকসানের হিসাব হাতে আসার অপেক্ষা। চলতি সপ্তাহেই শুরু হবে তৃতীয় ত্রৈমাসিকের ফল প্রকাশ। যা দেখে সকলে বুঝে নিতে চান অর্থনীতিতে চাহিদা-বিক্রির পরিস্থিতি। যাতে আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে ভরসা পাওয়া যায়। লগ্নিকারীদের অনেকেরই মতে, বহু সংস্থার ফল ভাল হবে। সেটা হোক বা না-হোক, বাজারে তার প্রভাব থাকবে সন্দেহ নেই। বুধবার একই দিনে ফল ঘোষণা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস, ইনফোসিস এবং উইপ্রোর।
এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার অবশ্য সেনসেক্স ৬২১ পয়েন্ট হারিয়েছিল। কারণ, খবর আসে মূল্যবৃদ্ধি যুঝতে সুদ বাড়াতে বেশি দেরি করবে না আমেরিকা। সেটা হলে, ভারতীয় বাজারে বিদেশি লগ্নির একাংশ পাট গুটোবে। শুক্রবার শুরুতে সেনসেক্স ফের অনেকটা বাড়লেও দিনের শেষে বেশ খানিকটা নেমে সপ্তাহ শেষ করে ১৪৩ পয়েন্ট উঠে। থামে ৫৯,৭৪৫ অঙ্কে। গত সপ্তাহে মোটের উপরে বাজার বেশ চড়লেও, সংশোধনের মুখে পড়েছে প্রথম সারির কয়েকটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার শেয়ার।
শুক্রবার চলতি (২০২১-২২) অর্থবর্ষে বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর। তাদের মতে, এই অর্থবর্ষে মোট জাতীয় উৎপাদন বাড়তে পারে ৯.২%। যা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এবং আইএমএফের ৯.৫% অনুমানের থেকে কম। তার উপরে গত অর্থবর্ষে (২০২০-২১) নিচু ভিতের (৭.৩% সঙ্কোচন) তুলনায় ৯.২% বেশ ভাল মনে হলেও, প্রকৃত বৃদ্ধি এর থেকে কমই হবে। তবে আশার কথা, কয়েকটি শিল্পে উৎপাদনের পূর্বাভাস ছাপিয়ে গিয়েছে কোভিড-পূর্ব সময়কে। চূড়ান্ত বৃদ্ধি কেমন হবে, তা অনেকটা নির্ভর করবে করোনার তৃতীয় ঢেউ অর্থনীতিকে কতটা আঘাত করে তার উপরে।
(মতামত ব্যক্তিগত)