মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সমস্ত প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে রাজ্যে ২০ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে। —নিজস্ব চিত্র।
শুরুটা হয়েছিল প্রথম দিনই। বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছিল মিত্তল-অম্বানী গোষ্ঠী। বুধবার সম্মেলনের শেষ দিনেও একই রকমের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শোনা গেল আদানি গোষ্ঠীর মুখে।
কেন্দ্রীয় সরকারকে বাদ দিয়ে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে যে অম্বানী-আদানি বৃত্ত সম্পূর্ণ হল, তাতে স্বভাবতই খুশি রাজ্য সরকার। খুশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এক দিকে যেমন স্বস্তি রাজ্য সরকারের, ঠিক একই রকম ভাবে এই বৃত্ত স্বস্তি দিল রাজনীতিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। এমনটাই বলছে এ রাজ্যের বণিকমহলের একটা অংশ।
গত কালের মতো এ দিনও বাংলায় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি শোনা গেল প্রথম সারির একাধিক শিল্পপতির মুখে। পাশাপাশি রইল মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি দরাজ শংসাপত্র। এই তালিকায় উপরের দিকেই ছিলেন আদানি গোষ্ঠীর অন্যতম কর্তা প্রণব আদানি। তাঁর মতে, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই বাংলার রূপান্তর ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গের অনুপ্রেরণা মুখ্যমন্ত্রী।”
শুধুমাত্র প্রশংসাই নয়, এ রাজ্যের বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রেও বিনিয়োগের ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। তিনি বলেন, “যদি সুযোগ আসে, বাংলায় বন্দর এবং বন্দর সংক্রান্ত ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করব।” নিজেদের গোষ্ঠীর তৈরি দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি বন্দরের প্রসঙ্গও উঠে আসে প্রণব আদানির মুখে। গুজরাতের সেই মুন্দ্রা বন্দরের মতোই হুবহু একই বন্দর গড়তে চান বাংলার মাটিতে। এ ছাড়া প্যাকেজিং, সৌরবিদ্যুৎ, তাপবিদ্যুৎ এবং কৃষি ক্ষেত্রেও লগ্নির প্রতিশ্রুতি এল তাঁর কাছ থেকে। এ রাজ্যে অবশ্য আগেই পা রেখেছে আদানি গোষ্ঠী। হলদিয়াতে একটি ভোজ্য তেলের কারখানা রয়েছে তাদের। আগামী পাঁচ বছরে সেই কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রণব আদানির।
আরও পড়ুন
দিদির নেতৃত্বে ওয়েস্ট বেঙ্গল ‘বেস্ট বেঙ্গল’ হয়েছে: মুকেশ
বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে আশার কথা শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠেও। তাঁর দাবি, এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যের নানান ক্ষেত্রে ২ লক্ষ ১৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকার লগ্নির প্রস্তাব এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এর মধ্যে মুকেশ অম্বানী, আদানি গোষ্ঠীর প্রণব আদানি ও সজ্জন জিন্দলদের প্রস্তাবিত বিনিয়োগকে এই হিসেবের বাইরে রাখা হয়েছে। সেগুলি যোগ করলে লগ্নির আর্থিক পরিমাণ আরও বাড়বে। মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, সমস্ত প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে রাজ্যে ২০ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে। তিনি জানিয়েছেন, বিনিয়োগের অর্থমূল্যের নিরিখে গত বছরের থেকে অনেক বেশি। মমতার দাবি, গত বছর ২ লক্ষ ৩৫ হাজার ২৭০ কোটির টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছিল। তার মধ্যে ৫০ শতাংশ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হওয়ার পথে। চলতি বছরের সম্মেলনে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে মোট ১১০টি মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা।
শুধুমাত্র বাণিজ্য প্রস্তাবের খতিয়ানই নয়। সম্মেলনের মঞ্চ থেকে ফের এক বার রাজনাতিক বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, “জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলার সবাইকে এক পরিবার বলে মনে করি।” নাম না করে ফের সহিষ্ণুতার বার্তা দিয়ে মমতার মন্তব্য, “সহিষ্ণু হলে সব কিছুরই সমাধান হয়।”
আগামী বছরের বাণিজ্য সম্মেলনের দিন আগাম ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। ৭-৮ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের প্রথম দিনটিকেই বিশ্ব সম্মেলন হিসেবে তুলে ধরতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধুমাত্র ভারতেই নয়, বিশ্বমঞ্চে বাংলাকে তুলে ধরতেই এই পরিকল্পনা মুখ্যমন্ত্রীর।
গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।