পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি খাতে রিফান্ড সময় মতো না-মেলায় সঙ্কট আরও ঘোরালো হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের গয়না শিল্পে। কার্যকরী মূলধনে টান পড়ায় বরাত জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ শিল্পমহলের। রফতানি তো কমছেই, তার জেরে রুজি-রুটি হারানোর শঙ্কায় রাজ্যের প্রায় ১ লক্ষ কারিগর। কাঁচা মাল কেনার সময়ে আগে মেটানো জিএসটি রিফান্ড পাওয়ার এই সমস্যা নিয়ে আগেই কেন্দ্রকে দুষেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
ইন্ডিয়ান বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর রাজ্য সভাপতি পঙ্কজ পারেখ বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই আমি কার্যকরী মূলধনের অভাবে জানুয়ারির বরাত বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি। এই মুহূর্তে জিএসটি রিফান্ড খাতে গয়না রফতানিকারীদের ৬০ কোটি টাকা সরকারের ঘরে আটকে রয়েছে।’’ বিনা সুদে এত টাকা পড়ে থাকায় রফতানি মূল্যের হিসেবে প্রায় ৫০ শতাংশ গত কয়েক মাসে খোয়াতে হয়েছে বলে অভিযোগ পারেখের। অবিলম্বে এই সমস্যা না-মিটলে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা জানান তিনি। অন্যান্য রফতানিকারীদের অবস্থাও ভাল নয় বলে মন্তব্য করেন জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের প্রাক্তন
চেয়ারম্যান পারেখ।
পাশাপাশি, রাজ্যে স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে একই সুরে বলেন, ‘‘কার্যকরী মূলধনের অভাবে বরাত জোগানো যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে কারিগরদের বসিয়ে রাখা ছাড়া উপায় থাকবে না।’’ মাঘ মাসে শুরু হচ্ছে বিয়ের মরসুম। সময় মতো গয়না জোগাতে না-পারলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই সঙ্কট
বাড়বে বলে জানান বাবলুবাবু।
পরিসংখ্যান দাখিল করে পারেখ বলেন, জিএসটি চালু হওয়ার আগে শুধু কলকাতা থেকেই গয়না রফতানি হতো ৬ হাজার কোটি টাকার। উপরন্তু রাজ্যে তৈরি গয়নার একাংশ মুম্বই ও অন্যান্য বন্দর মারফত রফতানি করা হতো। সারা দেশের জন্যও জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী এ বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বরে রত্ন ও অলঙ্কার রফতানি ৪.৮ শতাংশ কমে হয়েছে ২২৪৩ কোটি ডলার। এর জন্য আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশে চাহিদা কমা ছাড়াও জিএসটি রিফান্ড ঠিক মতো না-মেলার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ইতিমধ্যেই বলেছেন, তড়িঘড়ি জিএসটি চালু করে দেওয়ায় নতুন পরিকাঠামো ভ্যাটের তুলনাতেও পিছন দিকে হেঁটেছে। তাঁর কথায়, ‘‘জিএসটি নেটওয়ার্কের সঙ্গে আমদানি শুল্ক দফতর ও বিদেশি বাণিজ্য সংক্রান্ত ডিরেক্টরেট-এর বৈদ্যুতিন তথ্য বিনিময় বা ইলেকট্রনিক ডেটা ইন্টারচেঞ্জ ব্যবস্থা না-থাকায় সাধারণ লেজারে রিফান্ডের অঙ্ক নথিবদ্ধ করা হচ্ছে। এমনকী ভ্যাটেও রিটার্ন জমার কোনও স্তরেই এ ভাবে তথ্য হাতে লিখে রাখা হতো না।’’ একটি সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট উল্লেখ করে অমিতবাবু বলেন, ‘‘রিফান্ড পেতে অসুবিধার কারণে রফতানিকারীদের অন্তত ১০-১৫% কার্যকরী মূলধন আটকে রয়েছে।’’
নভেম্বরেই রফতানিকারীদের রিফান্ডের নিয়ম আরও সরল করে কেন্দ্র। তাঁদের ফর্ম পূরণ করে তা হাতে হাতেও জমার সুযোগ দেওয়া হয়। যাই হোক, গয়না শিল্প সমেত সাধারণ ভাবে রফতানিকারীদের অভিযোগ, রিফান্ড সময়ে না-পাওয়ায় মার খাচ্ছে তাঁদের ব্যবসা।
• গয়না রফতানিকারীদের ৬০ কোটি টাকার জিএসটি রিফান্ড আটকে
• বাতিল হচ্ছে বরাত
• বিয়ের মরসুমে চাহিদা মেটানো নিয়ে দুশ্চিন্তা
• রুজি-রুটি হারানোর মুখে রাজ্যের ১ লক্ষ কারিগর