যারা নতুন বাড়ী বা ফ্ল্যাট কিনছেন তাঁদের জন্য জিএসটি এখনও কিছু করতে পারেনি।
পণ্য ও পরিষেবা বিক্রির উপর ভারতে গুডস এবং সার্ভিস ট্যাক্স (জিএসটি) দিতে হয়। ২০১৭ সালে পয়লা জুলাই মধ্যরাত্রি থেকে চালু হয়েছিল এই কর। যদিও ট্যাক্স ব্যবস্থার দিক দিয়ে দেখলে জিএসটি একটা বড় সংস্কার, কিন্তু গ্রাহকদের মধ্যে এই ট্যাক্স ব্যবস্থার ব্যাপারে 'মিশ্র' প্রতিক্রিয়া আছে। যদিও জিএসটি অনেকগুলো ট্যাক্সের বদলে একটি ট্যাক্স হিসাবে অনেকটা ঝামেলা কমিয়ে দেয়, যারা নতুন বাড়ী বা ফ্ল্যাট কিনছেন তাঁদের জন্যে জিএসটি দারুণ অভাবিত কিছু করতে পারেনি।
নতুন বাড়ি কিনতে গেলে ১২% জিএসটি দিতে হচ্ছে কারণ কেনার সময় অধিকাংশ বাড়ির নির্মাণ সম্পূর্ণ হয় না। বাড়ী তৈরি না হলে, ১২% জিএসটি দিতে হবে, এমন নিয়ম সরকার বানিয়েছে। এই জিএসটির বোঝা হাল্কা করার জন্যে ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট (আইটিসি) দেওয়া হবে, এমনটা বলা হয়। কিন্তু ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিটের ব্যাপারে নানান ধোঁয়াশা রয়েছে। তাই, জিএসটি-র এক বছর বাদেও বাড়ী কিনতে গেলে জিএসটি মানুষের কাছে চক্ষুশূল।
আশা করা হয়েছিল যে জিএসটি-র মতো একটি ঐকিক কর আদায় ব্যবস্থা বাড়ি কেনার প্রক্রিয়া সরল করবে। তাই, ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিটের (আইটিসি) ঘোষণার পর মনে করা হয়েছিল বাড়ি কেনার জন্য কোনও অতিরিক্ত বোঝা হবে না জিএসটি। কিন্তু সাধারণ গ্রাহকের চিন্তা আসলে বেড়ে গিয়েছে। এমনকি, জিএসটি বাস্তবায়নের প্রায় এক বছর পরেও, বাড়ির ক্রেতারা শুধু এটাই জানেন, ১২% হারে জিএসটি দিতে হবে। মানুষের মনে এখনও নানান বিভ্রান্তি রয়েছে রিবেটের পরিমাণ সম্পর্কে। বিভ্রান্তি কেবল ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট কতটা এই নিয়ে নয়। রিবেট কী ভাবে দেবে এবং কতবারে টাকা পাওয়া যাবে সবকিছুর উপর আছে নানান প্রশ্ন।
ফ্ল্যাটের প্রোমোটারদের জিজ্ঞেস করলে তাঁরা জানাচ্ছেন, অনেক অঙ্ক কষে নাকি গ্রাহকদের ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিটের ছাড় দিতে হয়, এবং অনেক পরে তা দেওয়া যেতে পারে। একটু খোঁজ নিলে দেখা যাচ্ছে, প্রোমোটাররা ৫-৭% ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট নিজেরা নিচ্ছেন, কিন্তু এই টাকা পুরোটাই ফ্ল্যাট ক্রেতার পাওয়া উচিত। কিন্তু শেষমেশ পাচ্ছেন ক’জন? তাই সাধারণ মানুষ বা যাঁরা নতুন ফ্ল্যাট কিনতে যাচ্ছেন তাঁরা জিএসটির নাম শুনে খাপ্পা, কারণ এই ট্যাক্সের জন্যে বাড়ি কেনার বস্তুত খরচ বেড়ে গিয়েছে। দেবারতি মিত্র কিছুদিন হল ফ্ল্যাট কিনেছেন। তাঁর কথায়, "আমি গড়িয়াতে একটা ফ্ল্যাট কিনছি। ৪০ লাখ টাকার ফ্ল্যাটে ১২% মানে ৪.৮ লাখ জিএসটি। প্রোমোটার বলেছে ১.৬ লাখ ফেরত দেবে এক বছর বাদে কিন্তু এটা মৌখিক প্রতিশ্রুতি কিছু লিখিত নয়।"
আরও পড়ুন: ভোটের মুখে উদ্বেগ বাড়িয়ে ৬৯-এ ডলার
অন্যদিকে, যে বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরি হয়ে গিয়েছে (সমাপ্তির শংসাপত্র রয়েছে), সেরকম সম্পত্তি কিনলে এক পয়সা জিএসটি দিতে হচ্ছে না। তৈরি হওয়া বাড়ির দাম একটু বেশি হয়। এর ফলে, যারা বাড়ি কিনতে যাবেন, তাঁরা তৈরি হচ্ছে এমন ফ্ল্যাট কিনতে নারাজ। এর বদলে অনেকেই ভাবছেন যে একটু বেশি পয়সা খরচ করে একদম তৈরি বাড়ি কেনাই ভাল। তৈরি বাড়ির অনেক সুবিধা। যেমন অবিলম্বে অধিকার, ফ্ল্যাট কবে শেষ হবে, এইরকম চিন্তা থেকে মুক্তি। নির্মাণ-সংযুক্ত বাড়ীর লোন ইএমআই-এর ব্যাপারে কোনও অনিশ্চয়তা থাকে না।
জিএসটি’র জমানায় নতুন বাড়ি (যা এখনও তৈরি হয়নি) কিনলে সব মিলিয়ে ট্যাক্স এবং নানান চার্জ (স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন) হিসেব করলে অতিরিক্ত ১৬.৫% থেকে ২১.১% দিতে হচ্ছে, কোন রাজ্যে নতুন বাড়ি কিনছেন তার ভিত্তিতে। এখন জিএসটি ১২%, ৪-৮% স্ট্যাম্প ডিউটি (কলকাতায় ৬%-৭%) এবং রেজিস্ট্রেশন চার্জ ০.৫%-১.১%।
আরও পড়ুন: দু’হাজার কোটি ফাঁকি জিএসটিতে
পয়লা জুলাই ২০১৭-র আগে এই খাতে দিতে হত সর্বাধিক ১৮-১৯%। উকিলের খরচ ধরলে। কারণ আগে সার্ভিস ট্যাক্স ছিল ৪.৫% এবং ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) ছিল ০%-৫% কোন রাজ্যে বাড়ি কিনছেন তাঁর ভিত্তিতে। ৪%-৮% স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন চার্জ ০.৫%-১.১% একই ছিল।
বলা হয়েছিল, জিএসটি নাকি বাড়ির দাম কমিয়ে দেবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই রইল। "যদিও এমন প্রত্যাশা ছিল, সম্পত্তির দাম কমে যাবে জিএসটির ফলে, আমরা কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব দেখতে পাইনি। যদি জিএসটির মধ্যে স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন ফি ঢুকিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে সম্পত্তি ক্রয়ের সামগ্রিক খরচ নেমে আসবে," জানালেন অনুজ পুরি, চেয়ারম্যান, অ্যানারক প্রপার্টি কনসালট্যান্ট।
যারা বাড়ি বানান, মানে, ডেভেলপার বা প্রোমোটার, তাঁদের জন্যে জিএসটি স্পষ্টভাবে ট্যাক্সের পরিমাণ কমিয়েছে। এছাড়াও, লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির পরিসর সৃষ্টি করছে জিএসটি। কিন্তু শেষমেশ যারা বাড়ির ক্রেতা তাঁদের লাভ না হলে মানুষকে এই ট্যাক্স ব্যবস্থার ব্যাপারে উৎসাহিত করা কঠিন।