ইঙ্গিত আগেই ছিল। বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বাড়াতে ওই ধরনের সমস্ত গাড়ির ক্ষেত্রে কর কমানোর প্রস্তাবে শনিবার সিলমোহর দিল জিএসটি পরিষদ। কমছে বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জার ও চার্জিং স্টেশনে করও। দু’দিন আগে এই বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন রাজ্যসভায় দেউলিয়া বিধি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তা পিছিয়ে দেওয়া হয়।
জিএসটি পরিষদের সিদ্ধান্তে খুশি গাড়ি শিল্পের বড় অংশ। তবে শুধু এটুকুই বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে সংশয়ও রয়েছে অনেকের। উপরন্তু টানা গাড়ি বিক্রি কমায় ছাঁটাইয়ের খাঁড়া ঝুলছে এই ব্যবসায়। তাই সার্বিক ভাবে গাড়ি শিল্পের জন্য আর্থিক সুবিধা ও চালু গাড়ির ক্ষেত্রে জিএসটি হ্রাসের আর্জি জানিয়েছিল শিল্পমহল। তা না হওয়ায় কিছুটা হতাশও তারা। তবে পরিষদের সিদ্ধান্তকে মোটের উপর স্বাগত জানিয়েছেন গাড়ি শিল্পের দুই সংগঠন সিয়ামের প্রেসিডেন্ট রাজন ওয়াধেরা এবং এসএমইভি-র ডিজি সোহিন্দর গিল। হুন্ডাই মোটর ইন্ডিয়ার এস এস কিম, মহিন্দ্রার পবন গোয়েন্কা, অডি ইন্ডিয়ার রাহিল আনসারি, লোহিয়া অটো ইন্ডাস্ট্রিজ়ের আয়ুষ লোহিয়া, আথার এনার্জির তরুণ মেহতারও বক্তব্য, এই পদক্ষেপ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির পথে আরও এক ধাপ এগোতে সাহায্য করবে।
তবে সোহিন্দর জানান, ‘ফেম২’ প্রকল্পে ভর্তুকি হ্রাস ও ব্যাটারির উপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির জেরে কম দামি বৈদ্যুতিক গাড়ির দামও বেড়েছে প্রায় ২০%। জিএসটি কমায় দাম প্রায় ৭% কমবে। ফলে এমন গাড়ির দাম এখনও আগের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকবে।
নতুন সিদ্ধান্ত
সমস্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে জিএসটি ১২% থেকে কমে ৫%।
চার্জার ও চার্জিং স্টেশনে তা ১৮% থেকে কমে ৫%।
স্থানীয় প্রশাসন ১২ জনের বেশি যাত্রীবহনকারী বাস ভাড়া করলে, তার উপরে করে পুরো ছাড়।
নতুন হার ১ অগস্ট থেকে।
সিদ্ধান্তকে স্বাগত শিল্পের।
থাকছে প্রশ্ন
ফেম ১ প্রকল্পের তুলনায় ফেম ২-এ ব্যাটারির আমদানি শুল্ক বেড়েছে। কমেছে গাড়িতে ভর্তুকিও।
জিএসটি কমলেও তাই এখনও ফেম-১ প্রকল্পের থেকে
বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম বেশি ফেম-২ প্রকল্পে।
আরও কিছু সুবিধা না দিলে এই গাড়ির চাহিদা ততটা বাড়বে না।
২০২৫ সাল থেকে রাস্তায় শুধু বৈদ্যুতিক দু’চাকার গাড়ি দেখার লক্ষ্যমাত্রা পূরণও সহজ নয়।
গাড়ি শিল্পের দাবি
তৈরি হোক দীর্ঘ মেয়াদি ও স্পষ্ট রোডম্যাপ।
দামের ভারসাম্য আনতে ও নীতি তৈরির জন্য ২-৩ বছর একসঙ্গে কাজ করুক কেন্দ্র ও শিল্প।
সব বৈদ্যুতিক গাড়িতে প্রতি কিলোওয়াট ব্যাটারিতে ২০ হাজার টাকা ভর্তুকি।
বাড়তি ব্যাটারির জিএসটিও ১৮% থেকে কমিয়ে করা হোক ৫%।
রাজ্যের মতে
বৈদ্যুতিক গাড়ি চালুর আগে পরিকাঠামো তৈরি প্রয়োজন।
মাথায় রাখতে হবে যে, চার্জিং-পয়েন্ট তৈরি বেশ সময়সাপেক্ষ।
এগোনো উচিত ধীরে। পরিকল্পনা করে। নইলে ক্ষতি পরিবেশেরই।
মাথায় রাখতে হবে, এখনও পর্যন্ত আমেরিকায় মোট গাড়ি বিক্রির মাত্র ২.১% বৈদ্যুতিক। ইংল্যান্ড ও চিনে যথাক্রমে ২.৫% ও ৪.৪%।
সার্বিক ছবি
গাড়ি শিল্পের দুশ্চিন্তা, সার্বিক ভাবেই গাড়ির চাহিদা তলানিতে। ব্যবসা বেহাল। বহু কর্মী কাজ খোয়ানোর মুখে। তা সামাল দিতে আর্থিক ত্রাণ প্রকল্প কোথায়?
সঙ্গে দাবি প্রচলিত আইসি (ইন্টারনাল কম্বাশন) ইঞ্জিনের সব গাড়ির জিএসটি ২৮% থেকে কমিয়ে ১৮% করারও।
বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য স্পষ্ট নীতির পক্ষে ফের সওয়াল করেছেন সিয়াম কর্তা রাজন। বস্তুত, কেন্দ্র বারবার অদূর ভবিষ্যতেই বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য সওয়াল করায় এখনও বিভ্রান্ত গাড়ি শিল্প। ডিজেলের দাম বিনিয়ন্ত্রণের সময়েও তাদের বক্তব্য ছিল, স্পষ্ট নীতি তৈরি করুক কেন্দ্র। জ্বালানির দাম নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলে গাড়ি তৈরির পরিকাঠামো গড়ার লগ্নি নিয়েও সংশয় তৈরি হয়। কারণ, জ্বালানির দামের উপরে নির্ভর করে পেট্রল ও ডিজেল গাড়ির চাহিদা। এ বারেও বিএস৬ মাপকাঠির জ্বালানি সহায়ক গাড়ি তৈরির জন্য ৭০-৮০ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করেছে শিল্পমহল। সেই অর্থ ঘরে তোলার আগেই তড়িঘড়ি বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির পথে হাঁটতে হলে গোটা শিল্প বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা অনেকের।
সেই অনিশ্চয়তার মধ্যে আবার গাড়ি বিক্রি কমায় ইতিমধ্যেই অনেক ডিলার ঝাঁপ বন্ধ করেছেন। বিভিন্ন সংস্থা উৎপাদন ছাঁটাই করায় গাড়ি ও যন্ত্রাংশ সংস্থায় বিপুল কর্মসংস্থান কমার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ দিনের জিএসটি হ্রাসের সিদ্ধান্তকে ভবিষ্যতের পক্ষে বিরাট পদক্ষেপ বললেও একই সঙ্গে রাহিল বলেছেন, ‘‘স্বল্পমেয়াদে গোটা শিল্পের প্রয়োজন সরকারি সাহায্য। সব সংস্থাই সঙ্কটে। উৎপাদন ছাঁটাইয়ের সঙ্গে কর্মসংস্থানও কমতে পারে।’’