GDP

GDP Growth: পূর্বাভাস ছাপিয়ে বহাল দেশের আর্থিক বৃদ্ধি, তবু চিন্তা থাকছেই

অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রথম ত্রৈমাসিকে ২০.১% বৃদ্ধি এসেছিল আগের বছরের একই সময়ে ২৪.৪% সঙ্কোচনের সঙ্গে তুলনার ফলে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৪৬
Share:

প্রতীকী চিত্র।

প্রথম ত্রৈমাসিকের ২০.১% ‘মারকাটারি’ লাফের পরে চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় তিন মাসেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৮.৪% বৃদ্ধির মুখ দেখল দেশের অর্থনীতি।

Advertisement

কেন্দ্রের দাবি, এই হার পূর্বাভাসের (৭.৮%-৮%) তুলনায় বেশি। এর দৌলতে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলির মধ্যে দ্রুততম বৃদ্ধির শিরোপা ধরে রাখল ভারত। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির বহর পেরিয়ে গেল করোনা-পূর্ববর্তী মাপকে। রাজনৈতিক শিবিরে ধারণা, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের মুখে এ নিয়ে সাফল্য প্রচারে নামবে নরেন্দ্র মোদীর সরকার ও দল।

কিন্তু বিরোধী শিবির এবং অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রথম ত্রৈমাসিকে ২০.১% বৃদ্ধি এসেছিল আগের বছরের একই সময়ে ২৪.৪% সঙ্কোচনের সঙ্গে তুলনার ফলে। তেমনই দ্বিতীয় তিন মাসেও তুলনার ভিত আগের বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ৭.৪% চুপসে যাওয়া অর্থনীতি। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কথায়, ‘‘একটু সতর্ক থেকেই (এই পরিসংখ্যানকে) স্বাগত জানাতে হচ্ছে। কারণ, বহু ক্ষেত্র এখনও পঙ্গু এবং সাহায্যপ্রত্যাশী।’’

Advertisement

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে জুলাই-সেপ্টেম্বরে বেড়েছে চাহিদা। আর্থিক বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, তা হয়েছে মূলত ৮.৭% সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির দৌলতে। তবে ৪.৫% বৃদ্ধিতে স্বস্তি দিয়েছে কৃষি ক্ষেত্র। একই পথে পা মিলিয়েছে উৎপাদন শিল্প (৫.৫%) এবং নির্মাণ, হোটেল, বাণিজ্য, আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্র (বৃদ্ধির হার ৭%-৮%)।

মঙ্গলবার এই পরিসংখ্যান সামনে আসার পরেই মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যনের দাবি, অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে ১৩.৭ শতাংশের যে বৃদ্ধির ছবি দেখা গিয়েছে, তাতে পরের দুই ত্রৈমাসিকে ৬% হারে ডিজিপি বাড়লেই ২০২১-২২ সালে তা পৌঁছবে ১০ শতাংশের উপরে। পরের বছরে সেই হার হবে ৬.৫%-৭% এবং তারও পরে ৭%। উপরন্তু এ বছর ভাল কর আদায়ের হাত ধরে রাজকোষ ঘাটতি জিডিপি-র ৬.৮ শতাংশে বাঁধা যাবে। অক্টোবর শেষে যা পৌঁছেছে ৫.৪৭ লক্ষ কোটি টাকায় (বাজেট লক্ষ্যমাত্রার ৩৬.৩%)। সুব্রহ্মণ্যনের মতে, বিলগ্নিকরণ খাতে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে টাকা না-এলেও কর সংগ্রহের হাত ধরে ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

বিরোধীরা যদিও মনে করাচ্ছেন, চলতি অর্থবর্ষে যে বৃদ্ধির বড়াই কেন্দ্র করছে, তা আদতে গত বছরের লকডাউনের এবং তার পরে ধাক্কা খাওয়া অর্থনীতির নিচু ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে। এমনকি করোনার আগে ২০১৯-২০ সালে পুরো অর্থবর্ষ জুড়ে বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৫%। ফলে তার সঙ্গে তুলনা করলেও, এই বৃদ্ধিকে সন্তোষজনক বলা চলে না। বরং তা হতে হলে, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ৪০ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছনো উচিত ছিল। যা দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে দাঁড়িয়েছে ৩৫.৭৩ লক্ষ কোটিতে।

তা ছাড়া, মঙ্গলবার প্রকাশিত পরিসংখ্যানে অক্টোবরে পরিকাঠামোয় বৃদ্ধির হার ৭.৫% হলেও, সার-ইস্পাত-বিদ্যুতের মতো ক্ষেত্রে সে ভাবে বৃদ্ধি না-হওয়া এবং অশোধিত তেলের উৎপাদন আগের চেয়ে কমা চিন্তায় রাখছে। তার উপরে পাইকারি এবং খুচরো বাজারে চোখ রাঙানো মূল্যবৃদ্ধি, দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের চড়া দর এবং মানুষের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খরচ না-করার প্রবণতাও বৃদ্ধির গতিকে রুদ্ধ করতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। বিশেষত, করোনার নতুন স্ট্রেনের জেরে ফের যেখানে বিশ্ব অর্থনীতিতে ঘনাচ্ছে আশঙ্কার ছায়া। কৃষ্ণমূর্তির বক্তব্য, অতিমারির দুই ঢেউ সামলানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে কেন্দ্রের। ফলে নতুন স্ট্রেনের ততটা প্রভাব অর্থনীতিতে না-পড়ারই সম্ভাবনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement