লক্ষ্যস্থির: গত শুক্রবার গঙ্গার ধারে পাইপ বসানোর কাজ চলছে।
লক্ষ্যপূরণ!
পুজোর আগে গঙ্গার নীচ দিয়ে হুগলি থেকে নদিয়ার একাংশে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের জন্য পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গেল। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, গত তিন মাস ধরে সেই কাজ চলার পর শনিবার সকালে তা সম্পূর্ণ হয়েছে। এর ফলে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে সরাসরি প্রাকৃতিক গ্যাসের জোগান চালুর ব্যবস্থা আরও এক ধাপ এগলো। তবে গঙ্গার দু’ধারে কিছু জায়গায় মাটির উপরের অংশে পাইপ বসানোর জন্য জমি ব্যবহারের অনুমোদন পেতে দেরি হচ্ছে বলে খবর। রাজ্যের শিল্পমহলের আর্জি, জমির জট কাটিয়ে দ্রুত চালু হোক পাইপলাইন।
উত্তরপ্রদেশের জগদীশপুর থেকে হলদিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত গেলের প্রকল্পটিতে পাইপলাইনটি এসেছে পানাগড় পর্যন্ত। সেখান থেকে হুগলির রাজারামবাটি-ব্যান্ডেল হয়ে গঙ্গার নীচ দিয়ে সেটি নদিয়ার গয়েশপুর পৌঁছনোর সম্ভাবনা আগামী মার্চ-এপ্রিলে। এর মধ্যে পানাগড় থেকে রাজারামবাটি পর্যন্ত পাইপের মোট দৈর্ঘ্যের এক-তৃতীয়াংশ বিক্ষিপ্ত ভাবে বসানোর কাজ প্রায় শেষ। সূত্রের খবর, ব্যান্ডেল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে গঙ্গার পশ্চিম পাড় থেকে পাইপলাইনটি উল্টো পাড়ে নদিয়ার চড় যদুবাটির দিকে বেরিয়েছে। সেখান থেকে সেটি যাবে গয়েশপুরে গেলের প্রান্তিক গ্যাস কেন্দ্র পর্যন্ত। তার সঙ্গেই প্রযুক্তিগত কারণে যে আলাদা অপটিক্যাল ফাইবার কেব্লের পাইপ থাকার কথা, গত মাসে গঙ্গার নীচ দিয়ে সেটি বসানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছিল।
গেলের থেকে গ্যাস নিয়ে বিজিসি, আইওএজি, এইচপিসি, আইওসি, বিপিসি— এই পাঁচ সংস্থা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রেতাদের গ্যাস বণ্টন করবে। কিছু জায়গায় তা শুরুও হয়েছে। গৃহস্থের হেঁসেলে, হোটেল-রেস্তরাঁয় (পিএনজি) এবং গাড়ির জ্বালানি (সিএনজি) হিসেবে ব্যবহৃত হবে এই গ্যাস। বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বারের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সমীর ঘোষের বক্তব্য, জ্বালানি হিসেবে সস্তার এই গ্যাস না পাওয়ায় এ রাজ্যের সেরামিক, কাচ, রিফ্র্যাক্টরি, ছোট ইস্পাত শিল্পের কয়েকশো কারখানা প্রতিযোগিতার বাজারে পিছিয়ে পড়ছে। গুজরাতে এই গ্যাস ব্যবহার করেই প্রায় ৬০০ সেরামিক কারখানা ব্যবসা ছড়াচ্ছে।
গঙ্গার নীচের পাইপলাইনটি বসে যাওয়ায় উদ্বেগ কমছে নদিয়া, কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনায় গ্যাস বণ্টনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজিসি ও এইচপিসির। তাদের দাবি, আগামী বছর গ্যাস বণ্টনের লক্ষ্যে শাখা পাইপলাইনের কাজও এগোচ্ছে।
তবে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, নবান্ন ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলি উপর থেকে নির্দেশ দিলেও গেলের পাইপ বসানোর জন্য পূর্ব বর্ধমানের একাংশ-সহ কিছু জায়গায় নানা কারণে সহজে পাইপ বসানো যাচ্ছে না। ফলে ধাক্কা খাচ্ছে দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন ভাবে পাইপলাইন গড়ার কাজ। রাজ্যের কাছে শিল্পমহলের আর্জি, সস্তার জ্বালানি জোগান দিতে জমি-সহ অন্যান্য জট কাটাতে তৃণমূল স্তরে উদ্যোগী হোক সরকার।