কাঁচামালের জোগানে টান। কঠিন হচ্ছে শ্রমিকদের মজুরি গোনা। চুক্তি মেনে সময়ে পণ্য পাঠাতে না-পারায় বাতিল হয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার বিদেশি বরাত। সব মিলিয়ে, নোট নাকচের জেরে নাভিশ্বাস উঠেছে রাজ্যের চর্মশিল্পের। তার উপর এই সঙ্কটের সময়ে তাদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়েছে ‘ক্যাশলেসের সরকারি ফরমান’। চর্মশিল্পকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নগদে কারবার বন্ধের পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। তার জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ছকে তা জমা দিতে বলা হয়েছে তিন দিনের মধ্যেই।
সামনে বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষ। তার আগে ইউরোপ, আমেরিকা থেকে পণ্য সরবরাহের মোটা বরাত পেয়েছিল এ রাজ্যের চর্মশিল্প। তাদের ক্ষোভ, এই বরাত বাতিল হওয়ায় ব্যবসা হাতছাড়া তো হলই। সেই সঙ্গে রফতানি বাজারে ধাক্কা খেল তাদের ভাবমূর্তি। কথা দিয়েও সঠিক সময়ে ও দামে পণ্য পাঠাতে না পারায় বিদেশের বাজারে মুখ পুড়ল এ রাজ্যের চর্মশিল্পের। যার জেরে ভবিষ্যতেও ওই সব
ক্রেতার পছন্দের তালিকায় ঠাঁই পাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে বলে তাদের আশঙ্কা।
বর্ষশেষের এই উৎসবের মরসুমের দিকে সারা বছর তাকিয়ে থাকে চর্মশিল্প। লেদার এক্সপোর্ট কাউন্সিলের দাবি, এখানে নামী-দামি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের জিনিস তৈরি হয়। গত বছর নভেম্বর নাগাদ বিদেশি বরাত এসেছিল ২০০ কোটির। তা সময়ে মেটানোও গিয়েছিল। কিন্তু এ বার চুক্তি খেলাপ হওয়ায় বরাত বাতিলের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণও দাবি করেছে বিদেশি ক্রেতারা। চুক্তিমাফিক যা আইনসম্মত। ফলে তা থেকেও রেহাই পাওয়ার তেমন আশা দেখছেন না চর্ম ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে নগদের আকালে ব্যবসা মার খাচ্ছে দেশের বাজারেও।
এর জেরে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, নোট বাতিলের পরে এক ধাক্কায় ৫০% উৎপাদন ক্ষমতা ছেঁটে ফেলতে হয়েছে। মূল কারণ, কাঁচামাল অর্থাৎ চামড়ার জোগানে টান। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা কাঁচা চামড়া লরিবন্দি হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাস্তায়। মাল তোলা ও নামানোর শ্রমিক নেই। নোটের অভাবে অনেকে টাকা পাচ্ছেন বহু দেরিতে। একশোর নোটের আকালে অনেকের সমস্যা দিন গুজরানের। অধিকাংশ শ্রমিক ট্যানারি ছেড়ে গ্রামে ফিরে গিয়েছেন। যাঁরা আছেন, এখন মওকা বুঝে অনেক বেশি দর হাঁকছেন তাঁরা।
কিছু ক্ষেত্রে লরির বদলে ট্রেনে কাঁচা চামড়া আনার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু তাতে খরচ ও সময়, দুই-ই বেশি লাগছে। কাউন্সিলের দাবি, শুধু গত এক মাসেই নষ্ট হয়েছে অন্তত ২০ কোটি টাকার কাঁচামাল। সব মিলিয়ে, চুক্তির দাম তো বটেই, খেলাপ হচ্ছে সরবরাহের সময়েরও।
কাউন্সিল জানাচ্ছে, মাসে গড়ে ২৫০ কোটি টাকার চামড়ার জিনিস তৈরি হয় বানতলায়। তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২০ কোটি টাকায়। অর্থাৎ, উৎপাদন প্রায় অর্ধেক। এই পরিস্থিতিতে নগদে ব্যবসা বন্ধ করতে চাইলেও তা সম্ভব হবে না বলে মনে করছে চর্মশিল্প। তাদের যুক্তি, শ্রমিক ও কাঁচামালের প্রায় সব জোগানদার গ্রামের বাসিন্দা। অধিকাংশেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। ফলে এই পরিস্থিতিতে নগদহীন লেনদেনে ব্যবসা চালানো কী ভাবে সম্ভব, তা ভেবে কূল পাচ্ছে না চর্মশিল্প।