নির্ঘণ্ট: নথিভুক্তি ও শেয়ার লেনদেনের সূচনা। বিএসই-তে প্রতীকী ঘণ্টাধ্বনি চন্দ্রশেখরবাবুর। উপস্থিত মা এবং স্ত্রীও।
নীরব আবহে সরব সূচনা।
২০১৪ সালে তাবড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের টপকে যে দিন ব্যাঙ্ক হওয়ার লাইসেন্স ছিনিয়ে আনল বন্ধন, দেশ তখন সারদা বিতর্কে উত্তাল। আবার আজ, মঙ্গলবার যখন শেয়ার বাজারে তার পথ চলা শুরু হল, তখন মুখে মুখে ফিরছে নীরব কেলেঙ্কারি। বন্ধন ব্যাঙ্কের কর্ণধার চন্দ্রশেখর ঘোষের দাবি, ‘‘তবু যে এই পথ চলায় অসুবিধা হয়নি, তার মূল কারণ সম্ভবত আমাদের বিকল্প ব্যাঙ্কিং।’’
বন্ধন ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতা দেখাচ্ছে, তাদের ৯৮% ধারই দেওয়া হয়েছে গ্রামে। যার একটা বড় অংশের বন্ধক নেই। তবুও নিট অনুৎপাদক সম্পদ ০.৮%। হয়তো সেই কারণেই চন্দ্রশেখরবাবু জানাচ্ছেন, বড় শিল্প ঋণ আপাতত তাঁদের ভাবনায় নেই। বরং খুচরো ঋণের পাশাপাশি এ বার ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পকে ধার দেওয়ায় জোর দেবেন তাঁরা।
তাঁর দাবি, এই বিকল্প সরণি বাজারের মনে ধরেছে বলেই আইপিও-তে শেয়ারের জন্য ১৪.৫ গুণ আবেদন জমা পড়েছে। প্রথম দিনেই তার দর বেড়েছে ১০২ টাকা। তা-ও এই নীরব মোদীর আবহে। চন্দ্রশেখরবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, ঝুঁকি কম, অনুৎপাদক সম্পদ সৃষ্টির আশঙ্কা প্রায় নেই অথচ লাভ ভাল, এমন ঋণ দেওয়া।’’ তাঁর ধারণা, এই বিকল্প মডেলেই মজেছে বাজার।
যাত্রাপথ
• ২ এপ্রিল, ২০১৪: রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘর থেকে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক খোলার লাইসেন্স প্রাপ্তি
• ২৩ অগস্ট, ২০১৫: ব্যাঙ্ক হিসেবে পথ চলা শুরু
• ১৫-১৯ এপ্রিল, ২০১৮: বাজারে প্রথম শেয়ার ছাড়া (আইপিও)
• ২৭ মার্চ, ২০১৮: বাজারে নথিভুক্তি। শুরু শেয়ার লেনদেন
যদিও অনেক বিশেষজ্ঞের জিজ্ঞাসা, বাজারে নথিভুক্তির মুহূর্ত থেকে সব সময় তাড়া করবে মুনাফা বাড়ানোর চাপ। প্রতি তিন মাসে তা জানাতেও হবে সর্বসমক্ষে।
ব্যাঙ্কে এখন
• শাখা: ৯২৫টি
• এটিএম: ৪৩৩টি
• গ্রাহক: ১ কোটি ৩০ লক্ষ
• মোট ঋণ: ৩১ হাজার কোটি
• মূলধন: ৪,৪৪৬ কোটি টাকা (২০১৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত)
• বড় শিল্পকে ধার: নেই
• ছোট শিল্পকে ধার: ১০ কোটি পর্যন্ত
• গৃহঋণ: অনধিক ২৫ লক্ষ
সফল সূচনা
• প্রথম দফায় বাজারে ছেড়েছে ১২ কোটি শেয়ার
• কিনতে আবেদনপত্র জমা পড়েছে ১৪.৫ গুণ
• খুচরো লগ্নিকারীদের পাশাপাশি চোখে পড়ার মতো সাড়া বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার তরফে
• আইপিও-র দর ৩৭৫ টাকা করে
• প্রথম দিনের লেনদেনেই বিএসই-তে দর বাড়ল ১০২ টাকা। দিনের শেষে দাম পৌঁছেছে ৪৭৭.২০ টাকায়
শুধু তা-ই নয়, ব্যাঙ্ক যত বড় হবে, তত বাড়বে তা পরিচালনার খরচ। যোগ্য পেশাদারদের আনতে হবে মোটা বেতনে। তখন? বড় শিল্পকে অচ্ছুৎ রেখে এই বিকল্প মডেল তখনও ধরে রাখা যাবে কি? সে ক্ষেত্রে আর ব্যাঙ্কের আয় বাড়বে কী ভাবে?
আস্থা ছোটতে
• শিল্প ঋণ শুধু ছোট সংস্থাকেই
• ব্যাঙ্কের মোট ধারের প্রায় ৯৮ শতাংশই গ্রামে
• আগে ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থা হওয়ার কারণে ব্যাঙ্কের ধারের বড় অংশই দেওয়া হয় বন্ধক ছাড়া
• তবু নিট অনুৎপাদক সম্পদ মোট ঋণের ০.৮ শতাংশ
• আগামী দিনে বড় শিল্পকে ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা এখনই নেই। ব্যবসা বাড়াতে বাজি খুচরো ঋণই
সামনে চ্যালেঞ্জ
• নথিভুক্তির পরে মুনাফা বাড়ানোর চাপ থাকবে। ব্যাঙ্ক বড় হওয়ায় বাড়বে খরচ। বড় শিল্পকে ঋণ না দিয়ে চলার পথ তখনও মসৃণ থাকবে কি?
চন্দ্রশেখরবাবুর দাবি, ‘‘এখন সব ব্যাঙ্ক খুচরো ঋণের বাজারকে পাখির চোখ করছে। শিল্প ঋণের চাহিদা বরং তলানিতে। এই লোভনীয় বাজারে মুনাফা ঘরে তোলা শক্ত নয়।’’ একই সঙ্গে, সংস্থা চালানোর খরচ যথাসম্ভব কম রাখতেও সচেষ্ট তিনি। রাজি তার জন্য আরও বেশি প্রযুক্তি ব্যবহারে।
পণ টিকবে? উত্তর দেবে সময়ই।