স্বপ্ন নয়, সত্যি !
বাড়ির আলমারি বা ব্যাঙ্কের লকারে না রেখে আপনার জমানো সোনা এ বার ব্যাঙ্কে রেখে দিন। বাড়তি রোজগারের জন্য।
তাতে আপনার সোনা তো নিরাপদে রইলই, মাসে মাসে আপনার ঘরে এনে দেবে মোটা অঙ্কের সুদের টাকাও। মাথায় রাখবেন, নিরাপত্তার জন্য ব্যাঙ্কের লকারে সোনা রাখলে, আমাকে-আপনাকে যে ভাড়া গুণতে হয় এখন, নতুন স্কিমে সোনা রাখলে তার প্রয়োজন হবে না। সোনার জাঁক-জৌলুস তো রইলই, মাসে মাসে টাকাও এসে যাবে ঘরে।
দেশের সবকটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে চালু হল ওই ‘গোল্ড মানিটাইজেশন স্কিম’ বা ‘সোনার বিনিময়ে উপার্জন প্রকল্প’। সম্প্রতি তার নিয়ম-বিধি তৈরি করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আর তা তড়িঘড়ি লাগু করার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে। তবে এই স্কিমে কোন ব্যাঙ্ক কতটা সুদ দেবে, তার পরিমাণ সেই ব্যাঙ্কগুলিই স্থির করবে। গাড়ি বা বাড়ি কেনার ঋণে সুদের পরিমাণে যেমনটা হয়। কবে থেকে ওই প্রকল্প চালু হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, অনতিবিলম্বেই চালু হচ্ছে এই প্রকল্প।
নতুন স্কিমে সোনা আপনি ব্যাঙ্কে রাখতে পারবেন, যেমন টাকা রাখেন ফিক্সড ডিপোজিটে তিন, পাঁচ কি সাত বা ১২-১৫ বছরের জন্য।
কেন করেন ফিক্সড ডিপোজিট?
মেয়াদ ফুরনোর পর আপনি অনেক বেশি টাকা হাতে পাবেন বলে। সাধারণ আমানতের চেয়ে ফিক্সড ডিপোজিটের সুদের হার যে অনেকটাই বেশি।
ফিক্সড ডিপোজিটে টাকা রেখে আমরা বাড়তি টাকা পাই। আর এ বার নতুন যে স্কিমটি আসছে, তাতে যে কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে সোনা রাখলে আমি-আপনি মাসে মাসে তো মোটা অঙ্কের সুদ পাবই, মেয়াদ ফুরনোর পর ওই জমা রাখা সোনা ফেরত পাওয়ার সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকাও পাব। যে টাকার পরিমাণ ধার্য হবে মেয়াদ ফুরনোর সময় বাজারে সোনার দামের ভিত্তিতে। সোনা রেখে সোনাও পেলেন। টাকাও রোজগার হল।
আপনার মনে হতে পারে, সোনা রেখেছি যখন, মেয়াদ ফুরনোর পর হাতে শুধু টাকা পেলে আর কীই-বা পেলাম? সোনা বলে কথা! সে ক্ষেত্রেও ‘সোনার খবর’ রয়েছে। টাকা না চাইলে, মেয়াদ ফুরনোর পর আপনি ওই টাকায় ওই সময় যতটা সোনা কেনা যায়, ব্যাঙ্ক আপনাকে সেই পরিমাণ সোনাও দিয়ে দেবে। সোনা রেখে আরও সোনাও পেয়ে গেলেন। এই মাগ্গি-গন্ডার বাজারেও!
তবে মেয়াদ ফুরনোর পর আপনি টাকা ফেরত নেবেন নাকি বাড়তি সোনা নেবেন, তা ওই স্কিমে আপনার নাম নথিভুক্ত করার সময়েই আপনাকে জানিয়ে দিতে হবে। পরে তা বদলানো যাবে না।
এই স্কিমে সোনা রাখার জন্য কী কী নিয়ম ধার্য করা হয়েছে?
প্রথমত, আপনাকে কম করে ৩০ গ্রাম পাকা সোনা রাখতে হবে ব্যাঙ্কে। তা সোনার পাত হতে পারে, স্বর্ণমুদ্রা হতে পারে। সোনার গয়নাও হতে পারে, তবে সেই সোনার গয়নায় কোনও রত্ন বা মণি-মাণিক্য থাকা যাবে না। আর সূক্ষ্মতার বিচারে সেই পাকা সোনাকে ৯৯৫ ‘ফাইননেস’-এর সীমা ছুঁতে হবে। এটা আপনার পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব না হলে পরিচিত সোনার দোকানে গিয়ে যাচাই করে নেওয়া যাবে।
দ্বিতীয়ত, এই স্কিমটি হবে তিন রকম মেয়াদের। এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত আপনি সোনা ব্যাঙ্কে জমা রাখতে চাইলে, তা হবে স্বল্প মেয়াদের। মাঝারি মেয়াদে আপনি সোনা ব্যাঙ্কে রাখতে পারেন পাঁচ থেকে সাত বছর পর্যন্ত। আর দূীর্ঘ মেয়াদে সোনা রাখা যাবে ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত। মেয়াদ ফুরনোর আগে চাইলে, আপনি জমা রাখা সোনা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে নিতে পারবেন। তবে তার জন্য পেনাল্টি হিসাবে আপনার কাছ থেকে কিছু টাকা কেটে নেওয়া হবে। এই পেনাল্টির পরিমাণও বিভিন্ন ব্যাঙ্কে বিভিন্ন রকমের হতে পারে।
তৃতীয়ত, এই স্কিমে দুই বা ততোধিক আমানতকারী একই সঙ্গে একই অ্যাকাউন্টে তাঁদের সোনা জমা রাখতে পারবেন। মানে, আপনার স্ত্রী, কন্যা, পুত্রবধূ চাইলে একই অ্যাকাউন্টে তাঁদের সোনা জমা রাখতে পারবেন। তাতে সুদের পরিমাণ আরও বেশি হবে। যৌথ পরিবার টিঁকিয়ে রাখার পক্ষে যা অবশ্যই একটি হাতিয়ার হতে পারে!
কেন এই প্রকল্প শুরুর ভাবনা এল কেন্দ্রীয় সরকারের মাথায়?
সরকার চাইছে, সোনা আমদানির পরিমাণ কমাতে। তাতে কেন্দ্রের রাজকোষে চাপ কমবে। সরকারের আশা, এই প্রকল্পে কম করে ২০ হাজার টন সোনা সরকারের হাতে থাকবে, আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসাবে।