অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্য মাসে ৩,০০০ টাকা পেনশনের প্রকল্প অর্ন্তর্বর্তী বাজেটে ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এ বার ভোটের বাজারে শিকে ছিঁড়তে পারে কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) সদস্যদেরও। যাঁরা এখন মাসে ১,০০০ টাকা ন্যূনতম পেনশন পান, তাঁদের জন্য তার অঙ্ক বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে শীঘ্রই পিএফের অছি পরিষদের বিশেষ বৈঠক ডাকার আশ্বাস দিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার।
বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরের জন্য পিএফে জমা টাকায় ৮.৬৫% সুদ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে অছি পরিষদ। গত বছরের থেকে যা ১০ বেসিস পয়েন্ট বেশি। বর্ধিত হারে সুদের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রকের অনুমোদনের পরেই কার্যকর করা হবে।
এ দিনের বৈঠকে অছি পরিষদে শ্রমিক ইউনিয়নগুলির সদস্যরা ন্যূনতম পেনশন বাড়ানোর দাবি জানান। পরিষদের সদস্য এবং এআইইউটিইউসির রাজ্য সম্পাদক দিলীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের দাবি শুেন শ্রমমন্ত্রী শীঘ্রই বিশেষ বৈঠক ডাকার আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের আশা, লোকসভা নির্বাচনের আগেই ন্যূনতম পেনশন বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।’’
আরও পড়ুন: কংগ্রেসকে ব্রাত্য রেখেই উত্তরপ্রদেশে প্রার্থী ঘোষণা মায়া-অখিলেশের
বিশেষত বাজেটে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য মাসে ৩,০০০ টাকার পেনশন প্রকল্প ঘোষণা হওয়ার পরে পিএফের ন্যূনতম পেনশন বৃদ্ধির দাবি আরও জোরালো হয়েছে। ভারতীয় মজদুর সংঘ দাবি করেছে, সরকার পরিচালিত একই ধরনের সামাজিক সুরক্ষার দুটি প্রকল্পে পেনশনে ফারাক সম্ভব নয়।
নতুন সুদ
• ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডে (ইপিএফ) জমা টাকায় সুদ বাড়ল ১০ বেসিস পয়েন্ট।
• আগের আর্থিক বছরের ৮.৫৫% থেকে বেড়ে হল ৮.৬৫%।
• কেন্দ্রের দাবি, এতে উপকৃত হবেন অন্তত ৬ কোটি পিএফ সদস্য।
পেনশন সওয়াল
• ২০১৪ সালে পিএফের ন্যূনতম পেনশন করা হয় ১,০০০ টাকা।
• কিন্তু তার অঙ্ক বাড়িয়ে অন্তত ২,০০০ টাকা করতে নাগাড়ে সওয়াল করতে শুরু করে কর্মী ইউনিয়নগুলি। পরে ওই অঙ্ক ৬,০০০ টাকা করার জন্যও বার বার বলেছে তারা।
• সেই দাবি খতিয়ে দেখতে তৈরি হয় বিশেষ কমিটি। সূত্রের খবর, ন্যূনতম পেনশন ২,০০০ টাকা করার সুপারিশ করেছে তারা। তবে তার জন্য বছরে বাড়তি লাগবে ৩,০০০ কোটি।
• এ বার অন্তর্বর্তী বাজেটে অসংগঠিত ক্ষেত্রে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক আয়ের কর্মীদের জন্য মাসে ৩,০০০ টাকা করে পেনশন প্রকল্প ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।
• ইউনিয়নের মতে, এর পরে পিএফে ন্যূনতম পেনশনের অঙ্ক আর ৩,০০০ টাকার নীচে হতে পারে না।
• বিএমএসের যুক্তি, কেন্দ্র পরিচালিত একই ধরনের সামাজিক সুরক্ষার দু’টি প্রকল্পে দু’রকম পেনশন সম্ভব নয়।
• বাজেটে ঘোষিত পেনশন প্রকল্পে যে টাকা কর্মীদের দিতে হবে, তার থেকে বেশি অঙ্ক পেনশন তহবিলে দেন পিএফ সদস্যরা।
• ন্যূনতম পেনশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শীঘ্রই বিশেষ বৈঠক ডাকার আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার।
দিলীপবাবু বলেন, ‘‘অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের যে পেনশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে, তার থেকে বেশি ন্যূনতম পেনশন পিএফের সদস্যদের দেওয়া উচিত। কারণ, অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের কাছ থেকে পেনশন তহবিলে যে টাকা নেওয়া হবে, তার থেকে অনেক বেশি টাকা পিএফের সদস্যরা তাঁদের পেনশন তহবিলে দিয়েছেন। এখনও দিচ্ছেন।’’
সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, এই পরিস্থিতিতে পিএফের সদস্যদের ন্যূনতম পেনশন ৩,০০০ টাকার নীচে ধার্য করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারে কেন্দ্র। এআইইউটিইউসির সাধারণ সম্পাদক এবং পিএফের অছি পরিষদের প্রাক্তন সদস্য শঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘ট্রেড ইউনিয়নগুলি ন্যূনতম পেনশন ৬ হাজার টাকা করা জন্য অনেক দিনই দাবি করে আসছে। ৮ ও ৯ জানুয়ারি দেশ জুড়ে যে শ্রমিক ধর্মঘট হযেছিল, তারও অন্যতম দাবি ছিল ন্যূনতম পেনশন ৬,০০০ টাকা করার। বিষয়টি নিয়ে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।’’